ফাইল চিত্র।
রাশিয়ার আক্রমণের পাল্টা জবাব দিতে বিপন্ন ইউক্রেনের পাশে এসে কি দাঁড়াল এক ‘অন্য গণতন্ত্র’? ২০০৭ সালে ‘হ্যাকার রিপাবলিক’ নামে সেই ‘অন্য গণতন্ত্র’-টির কথা মানুষ জানতে পেরেছিল সুইডিশ সাহিত্যিক স্টিগ লারসনের ‘মিলেনিয়াম ট্রিলজি’-র তৃতীয় পর্ব’ দ্য গার্ল হু কিকড দ্য হর্নেট’স নেস্ট’-এ। সেই গণতন্ত্রের নাম ‘হ্যাকার রিপাবলিক’।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদল হয়েছে রণাঙ্গনের চরিত্রের। বোমা-বারুদের সমান্তরালে যুদ্ধ চলছে সাইবার পরিসরেও। জানা যাচ্ছে, রাশিয়া ইউক্রেনের ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশের পাশাপাশি তার মদতপুষ্ট সাইবার দস্যুদের কাজে লাগিয়ে ধসিয়ে দিতে চাইছে আক্রান্ত দেশটির বিভিন্ন প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে। সাইবার হানাদারি রুখতে জনৈক ইউক্রেনীয় সাইবার বিশেষজ্ঞ পাল্টা হামলা চালাচ্ছেন রাশিয়ার বিভিন্ন সরকারি ওয়েবসাইটে। রুখে দিচ্ছেন সাইবার হানাদারদের গোষ্ঠী ‘কন্টি’-র আগ্রাসন।
এই ঘটনা অনিবার্য ভাবে মনে করিয়ে দিল লারসনের উপন্যাসের কথা। সেখানে প্রধান চরিত্র লিজবেথ স্যালান্ডার এক জন হ্যাকার। তার সঙ্গে যোগাযোগে যারা থাকে, তাদের কারও নাম ‘প্লেগ’, কারও ‘ট্রিনিটি’, তো কারও ‘বব দ্য ডগ’। বলাই বাহুল্য, এ সবই ছদ্মনাম। ঘটনা পরম্পরায় যখন স্যালান্ডার রাষ্ট্রের হাতে বন্দি এবং তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে শামিল সরকারের প্রভাবশালী আধিকারিকরা, তখন এই সব সহ-হ্যাকাররাই তার দিকে বড়িয়ে দেয় সাহায্যের হাত। কারণ তারা বিশ্বাস করে, তারা একটি বিশেষ গণতন্ত্রের নাগরিক, যার নাম ‘হ্যাকার রিপাবলিক’। সেই দেশের কোনও নির্ধারিত মানচিত্র নেই, সীমান্তে কাঁটাতার নেই অথচ রয়েছে এক অলিখিত সংবিধান। সেই সেই সংবিধান মেনেই একজন হ্যাকারের উপরে রাষ্ট্রীয় রোষ নেমে এলে বাকিরা তাদের কম্পিউটার থেকেই শুরু করে প্রতি আক্রমণ। সরকারি ওয়েবসাইটগুলিকে জ্যাম করে দিতে থাকে তারা। বেমালুম উধাও করে দিতে পারে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি নথিপত্র। লিজবেথের মুক্তি দাবি করে হ্যাকার রিপাবলিক সে দেশের সরকারকে হুমকি দেয়, তাদের দাবি না মানা হলে তারা কার্যত অচল করে দেবে রাষ্ট্রের কাজকর্ম।‘প্লেগ’, ‘ট্রিনিটি’ বা ‘বব দ্য ডগ’-এর মতোই ছদ্মনামের আড়াল রয়েছে ইউক্রেনের পাশে দাঁড়ানো সেই সাইবার বিশেষজ্ঞের। গণমাধ্যম তাঁকে ডাকছে ‘ড্যানিলো’ নামে। ড্যানিলোর পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন বেশ কিছু হ্যাকার। ‘কন্টি’-র সঙ্গে তাঁদের প্রত্যক্ষ লড়াই।
জানা নেই, ল্যাপটপ হাতে করে কোন বাঙ্কারে বসে ড্যানিলো তাঁর লড়াই চালাচ্ছেন আর তাঁর সহযোদ্ধারাই বা কোথা থেকে কাজ করে চলেছেন। হতেই পারে, সেই সব হ্যাকাররা ছড়িয়ে রয়েছেন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে। কিন্তু তাঁদের বিশ্বাস এই যে, তাঁরা এক মুক্ত গণতন্ত্রের বাসিন্দা।
সাংবাদিক-সাহিত্যিক লারসন প্রয়াত হন ২০০৪ সালে। তিনি তাঁর উপন্যাস ত্রয়ীর প্রকাশও দেখে যেতে পারেননি। সেই সময়ে অন্তর্জাল ব্যবস্থা অবশ্যই আজকের মতো ছিল না। কিন্তু হ্যাকিংয়ের খেলাকে তিনি ধরতে পেরাছিলেন সেই সময়েই। তাঁর দূরদৃষ্টি আর কল্পনার বিস্তৃতি সম্ভব করে তুলেছিল ‘হ্যাকার রিপাবলিক’-কে। যার মূলে কাজ করছে অন্তর্ঘাতের সূক্ষ্ম রাজনীতি। ‘দুর্বল’ যেখানে তার মগজাস্ত্রকে ব্যবহার করেই শুইয়ে দিতে পারে আগ্রাসক ক্ষমতাবানকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy