ছবি সংগৃহীত।
দ্রুত পরমাণু শক্তি বাড়িয়ে চলেছে চিন। তবে অত্যন্ত চুপিসারে। দেশটির উত্তর-পশ্চিমের ইউমেন শহরের অদূরে, গানসু প্রদেশের মরুভূমি অঞ্চল জুড়ে গোপনে প্রায় ১২০টি ‘সিলো’ বা মাটির নীচে ক্ষেপণাস্ত্র মজুত রাখার (এবং প্রয়োজনে উৎক্ষেপণ করার) প্রকোষ্ঠ গড়ে তোলা হয়েছে। এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রাখার মতো করেই তৈরি করা হয়েছে এই সিলোগুলি!
উপগ্রহচিত্র বিশ্লেষণ করে এই তথ্য উঠে এসেছে বলে জানিয়েছেন আমেরিকার দুই বিশেষজ্ঞ জেফ্রি লিউয়িস এবং ডেকার ইভলেথ। চিনের পরমাণু অস্ত্র সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ এই দুই গবেষকের করা অনুসন্ধানের সবিস্তার রিপোর্ট এক প্রথম সারির আমেরিকান দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে সম্প্রতি। যা ঘিরে সাড়া পড়ে গিয়েছে বিশ্ব জুড়ে।
চিনের এই সিলোগুলির বয়স মাস ছয়েকের বেশি নয় বলেই দাবি ইভলেথের। রিপোর্ট অনুযায়ী, চিনের ওই অঞ্চলটির উপগ্রহ চিত্রের বিশ্লেষণ করতে গিয়ে প্রথম তাঁরই নজরে এসেছিল এই সিলোগুলি। ইভলেথের সহ-গবেষক লিউয়িস শুক্রবার সংবাদ সংস্থাকে জানান, জায়গাটির চার মাস আগের উপগ্রহ চিত্র তাঁদের নজরে এসেছিল। তবে তার সঙ্গে সপ্তাহখানেক আগের তোলা ছবি মিলিয়ে দেখে অবাক হয়ে যান দু’জনেই। এ ক’দিনের মধ্যেই সিলোগুলির নির্মাণ প্রায় শেষের পথে! যা দেখে গবেষকদের প্রশ্ন, এত দ্রুত গতিতে কাজ শেষ করার কারণ কী? ধোঁয়াশা অবশ্য অব্যাহতই।
বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে আমেরিকা-সহ পশ্চিমি শক্তিগুলির প্রতিরক্ষা কর্তাদেরও। বিশেষত, সম্প্রতি চিনের কমিউনিস্ট পার্টির শতবর্ষ উদ্যাপন অনুষ্ঠানে দাঁড়িয়ে দেশের প্রেসিডেন্ট শি চিনফিংয়ের দেওয়া কড়া বার্তার সঙ্গে এই ঘটনার কোনও যোগ আছে কি না, বোঝার চেষ্টা করছেন তাঁরা। চিনফিং মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘চিনের জনতা তাদের উপর আর কোনও বিদেশি শক্তিকে অত্যাচার চালাতে দেবে না...।’’ সঙ্গে তাঁর হুমকি, ‘‘কেউ যদি সেই চেষ্টা করে তা হলে রক্তপাত অনিবার্য।’’ এই বার্তা তারা মোটেই হালকা ভাবে নিচ্ছে না বলেই জানিয়েছে আমেরিকার বিদেশ দফতর। যদিও সিলোগুলি যে ইতিমধ্যেই ব্যবহার করা হচ্ছে বা ভবিষ্যতে হবে এমন প্রমাণ এখনও মেলেনি বলেই দাবি করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট রিপোর্টটিতে।
‘গ্রিড প্যাটার্নে’ তৈরি সিলোগুলির একটির থেকে অন্যটির দূরত্ব তিন কিলোমিটার। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, চিনের তৈরি আন্তঃমহাদেশীয় ডিএফ-৪১ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রাখার জন্যেই ব্যবহার করা হতে পারে এগুলি। প্রায় ১২ থেকে ১৫ হাজার কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যেও অনায়াসে আঘাত করতে পারে এই ক্ষেপণাস্ত্র। ‘মিসাইল থ্রেট প্রজেক্ট’-এর ওয়েবসাইটের দাবি অনুযায়ী, চিন থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যে আমেরিকায় পৌঁছে যাওয়ার ক্ষমতা আছে ক্ষেপণাস্ত্রগুলির!
সামরিক বিষয় নিয়ে কখনই সে ভাবে খোলাখুলি আলোচনা করতে দেখা যায়নি চিনের প্রশাসনিক কর্তাদের। তবে চলতি বছরের জানুয়ারিতে পরমাণু শক্তির ব্যবহার নিয়ে সে দেশের বিদেশমন্ত্রীর মুখপাত্রকে আশ্বাস দিতে শোনা যায়, ‘‘আগে আমাদের উপর আক্রমণ হলে তবেই আমরা পাল্টা আক্রমণ চালাব, না-হলে নয়।’’ পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার প্রতিরোধ সংক্রান্ত রাষ্ট্রপুঞ্জের চুক্তি না-মানলেও বেজিং তখন এ-ও জানিয়েছিল যে, দেশের নিজস্ব নীতি অনুযায়ী, পরমাণু শক্তি সব সময়েই সর্বনিম্ন স্তরেই রাখায় বিশ্বাসী চিন।
যদিও এই বার্তায় আস্থা রাখতে নারাজ পেন্টাগন। রিপোর্টটিকে নজরে রেখে তাদের দাবি, চিন যে পরমাণু শক্তির বহর দিন দিন বাড়াচ্ছে তা ফের প্রমাণিত হল। আগামী এক দশকের মধ্যে চিন তাদের পরমাণু শক্তি দ্বিগুণ করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগোচ্ছে। এমনটাই আশঙ্কা পেন্টাগনের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy