একই দিনে ভারত-জাপান দু’দেশের মধ্যে ৩২টি চুক্তি হল। ছবি: রয়টার্স।
উনিশের নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। তার আগে জাপানকে আঁকড়ে ধরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর সরকারের কাজকর্ম যতটা সম্ভব এগিয়ে নিয়ে যেতে মরিয়া। তাঁর জাপান সফরে আজ একই দিনে দু’দেশের মধ্যে ৩২টি চুক্তি হতে দেখে এমনটাই মনে করছেন রাজনীতির লোকজন।
কূটনৈতিক সূত্র জানাচ্ছে, মোদী জমানায় সাউথ ব্লক ধারাবাহিক ভাবে যে ক’টি শক্তিশালী দেশকে পাশে পেয়েছে— জাপান তার মধ্যে অগ্রগণ্য। এর আগে ১২ বার মুখোমুখি বসেছেন মোদী ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদীর মেয়াদ শেষের আগে সম্ভবত শেষ বৈঠকটি হল আজ। কৌশলগত, কারিগরি, বাণিজ্যিক, পরিকাঠামো, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য— বিভিন্ন বিষয়ে চুক্তির ছড়াছড়ি তো আছেই, ভারত ও জাপান একটি দীর্ঘ দিশা নথি (ভিশন ডকুমেন্ট)-ও প্রকাশ করেছে। ভারত মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী মোদীর স্বপ্নের প্রকল্পগুলিতে পাশে থাকার অঙ্গিকার রয়েছে যেখানে। স্থির হয়েছে মার্কিন মডেলে ‘টু প্লাস টু’ বৈঠকে বসবে ভারত ও জাপান।
আবের সঙ্গে বৈঠকের পর মোদী বলেছেন, ‘‘ভারত-জাপান সম্পর্ক আমূল বদলে গিয়েছে। বিশেষ কৌশলগত সম্পর্ক তৈরি হয়েছে আমাদের মধ্যে। আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে নেতিবাচক কিছু নেই, রয়েছে শুধু অনেক সুযোগ— যা আমরা নিতে চাই।’’
একই দিনে ৩২টি চুক্তি যে কোনও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নিরিখেই বেশ অভিনব। মোদীর লক্ষ্য ছিল, তাঁর স্বপ্নের প্রকল্পগুলিতে জাপানি বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তি-সহযোগিতা পাওয়া। বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, সেই লক্ষ্যে পুরোপুরি সফল তিনি।
আরও পড়ুন: ব্রাজিলে ক্ষমতায় ‘ট্রপিকাল ট্রাম্প’ জাইর বোলসোনারো
কেন্দ্রের ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্পে জাপানি বিনিয়োগ নিয়ে চুক্তি হয়েছে। চুক্তি হয়েছে অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, ব্যাঙ্ক পরিষেবা এবং ক্রীড়া ক্ষেত্রেও। মুম্বই-আমদাবাদ হাই স্পিড রেল, বুলেট ট্রেন, যৌথ উদ্যোগে তৈরি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলি আধুনিকীকরণের মতো প্রকল্পেও সহযোগিতার কথা ঘোষণা করা হয়েছে এ দিন। মোদীর সফরের আগেই বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী তাঁর ‘পূবে তাকাও’ নীতির সঙ্গে জাপানকে জুড়তে চাইছেন। এতগুলি চুক্তি ও দিশা নথির বয়ান তারই প্রতিফলন বলে মনে করছে সাউথ ব্লকের কর্তারা।
তাঁরা যে চুক্তিগুলিকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করছে, তার মধ্যে প্রতিরক্ষা সমঝোতা বাড়ানোর বিষয়টি অন্যতম। ভারত মহাসাগর ও জাপানের নৌসেনার মধ্যে গভীরতর যোগাযোগ গড়ে তোলা নিয়ে চুক্তিটিকে ভারত মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আধিপত্যের প্রশ্নে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। কূটনৈতিক সূত্রের মতে, ওই চুক্তি নিজেদের আঞ্চলিক নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার প্রশ্নেও ভারতকে সাহায্য করবে।
আরও পড়ুন: সাংবিধানিক সঙ্কট শ্রীলঙ্কায়, ভারত-চিন ঠান্ডা যুদ্ধ
দিশা নথিতেও অগ্রাধিকার পেয়েছে ভারত মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি ও নিরাপত্তার বিষয়টি। চিনের নাম না করে বলা হয়েছে, ‘ভারত মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আন্তর্জাতিক আইন মেনে সংশ্লিষ্ট দেশগুলির সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা বজায় রাখা প্রয়োজন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy