Inca child Mummy:Archaeologist found world’s best preserved mummy dgtl
Inca Civilization
Inca Mummy: বসে ঘুমন্ত অবস্থায় তিন শিশুর মমি, দুর্গম পর্বতে রহস্যময় ইনকা রীতিতে চমকে যায় বিশ্ব
ইনকাদের মধ্যে নরবলি প্রথার প্রচলন ছিল। নরবলি অর্থাৎ ঈশ্বরের কাছে কোনও পবিত্র প্রাণ উৎসর্গ করার রীতি।জীবিত মানুষকেই মমি করে রেখে দিতেন।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০২১ ১৩:৪১
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৭
পঞ্চদশ শতকের সবচেয়ে বড় সভ্যতা ছিল ইনকা। প্রযুক্তি এবং আভিজাত্য এই দুইয়ের মিশেল ছিল এই সভ্যতা। পঞ্চদশ শতকে আমেরিকার সবচেয়ে বড় সাম্রাজ্য ছিল ইনকাদেরই। ইকুয়েডর থেকে চিলি পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার কিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে ছিল এই সভ্যতা। ইনকা সভ্যতার বেশির ভাগই আজও রহস্যে মোড়া। তাদের প্রযুক্তির ব্যবহার দেখে এ যুগে দাঁড়িয়েও বিস্মিত হতে হয়।
০২১৭
এখনও ইনকাদের সম্পর্কে বেশির ভাগই অজানা। একটু একটু করে সেই রহস্য সমাধানের চেষ্টা করছেন প্রত্নতত্ত্ববিদেরা। একটু একটু করে আধুনিক সমাজের কাছে মেলে ধরছেন ইনকাদের জীবনযাত্রা।
০৩১৭
তারই অন্যতম হল নরবলি। ইনকাদের মধ্যে এই প্রথার প্রচলন ছিল। নরবলি অর্থাৎ ঈশ্বরের কাছে কোনও পবিত্র প্রাণ উৎসর্গ করার রীতি। শরীরে কোনও কাটাছেঁড়া করতেন না তাঁরা। জীবিত মানুষকেই মমি করে রেখে দিতেন।
০৪১৭
১৯৯৯ সালে এমনই এক মমি খুঁজে পান প্রত্নতত্ত্ববিদেরা। যা দেখে সত্যিই শিউরে উঠতে হয়। আন্দিজ পর্বতের মাথায় লুলাইলাকো থেকে মাটি খুঁড়ে বার করা হয়েছিল ওই মমি। একটি নয়, একসঙ্গে তিনটি মমি। তিন জনেরই বয়স খুব কম। মৃত্যুর সময় সবচেয়ে বড় জনের বয়স ছিল ১৩ বছর। বাকি দু’জনের যথাক্রমে চার এবং পাঁচ।
০৫১৭
লুলাইলাকো ছিল ইনকাদের শ্মশান। ভূপৃষ্ঠের পাঁচ ফুট নীচে আগ্নেয়শিলা দিয়ে তৈরি এই অঞ্চল আবিষ্কার করেছিলেন প্রত্নতত্ত্ববিদেরা। দক্ষিণ আমেরিকার আটাকামা মরুভূমির আন্দিজ পর্বতমালার লুলাইলাকোর উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২২ হাজার ১১০ ফুট। যেখানে মমিগুলি মিলেছে সেটি বিশ্বের সর্বোচ্চ প্রত্নতাস্ত্বিক অঞ্চল।
০৬১৭
প্রত্নতত্ত্ববিদদের মতে, লুলাইলাকোর ওই তিন মমিই আসলে নরবলির নিদর্শন। তাদের মধ্যে ১৩ বছরের নাবালিকাকে ‘লুলাইলাকো কুমারী’ নাম দেওয়া হয়। তাকেই মূলত ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গ করা হয়েছিল। বাকি দুই খুদেকে রাখা হয়েছিল তাকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য। মরার জন্য এই তিন জনকেই আন্দিজ পর্বতের মাথায় ওই এলাকায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।
০৭১৭
একটু একটু করে শক্তি হারাচ্ছিল তাদের শরীর। বসে থাকতে থাকতেই ঘুমিয়ে পড়েছিল তারা। তখনই বসে থাকা মৃতপ্রায় ওই শিশুদের মাটির পাঁচ ফুট নীচে কফিনবন্দি করা হয়েছিল।
০৮১৭
প্রত্নতত্ত্ববিদদের মতে, মমিগুলির বয়স অন্তত ৫০০ বছর। এই দুর্গম এলাকায় আজও পৌঁছনো বেশ কঠিন। বহু বার চেষ্টার পর ১৯৯৯ সালে পৌঁছতে পারে প্রত্নতত্ত্ববিদদের একটি দল। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হতে হতে এক সময় ফিরে আসার মানসিক প্রস্তুতিও নিয়ে ফেলেছিলেন। তার পর সন্ধান মেলা একটি সূত্রের জোরে তাঁরা অবশেষে লুলাইলাকোর শ্মশানে পৌঁছন এবং অনেক খোঁজার পর ইনকাদের নরবলির এই নিদর্শন খুঁড়ে বার করেন। এত বছর আগে এই দুর্গম অঞ্চলে ইনকাদের নিত্য যাতায়াত সত্যিই বিস্ময়কর।
০৯১৭
যে তিনটি মমি মিলেছিল সেগুলিকে এক ঝলক দেখলে মনে হবে ঠিক যেন বসে ঘুমিয়ে রয়েছে তারা। হাঁটু ভাঁজ করে সামনের দিকে খানিকটা ঝুঁকে রয়েছে। ৫০০ বছর শরীরে সে ভাবে প্রভাব ফেলতে পারেনি। শরীরের মতো গায়ের জামাটিও অক্ষত ছিল। এমনকি তাদের চুলও ঠিক সে ভাবেই রয়ে গিয়েছিল। ঘুমন্ত অবস্থায় বরফে শরীর জমে গিয়ে মৃত্যু হলে যেমন দেখায়, ঠিক তেমনই দেখাচ্ছিল তাদের।
১০১৭
ওই তিন জনেরই ভিতরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলিতেও সে ভাবে পচন ধরেনি। এক জনের হৃৎপিণ্ডে আবার এত বছর পরেও জমাট বাঁধা রক্ত মিলেছে। এর কারণ ব্যাখ্যা করে বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, তাদের শরীরে ডিহাইড্রেশন শুরুর আগেই তারা মমি হয়ে গিয়েছিল।
১১১৭
তার উপর আটাকামা বিশ্বের সবচেয়ে শুষ্ক অঞ্চল। শুষ্ক বায়ুর কারণেই ৫০০ বছর ধরে এত সুন্দর সংরক্ষণ হয়েছে দেহগুলির। শুকনো বাতাস এবং ঠান্ডা আবহাওয়া দু’টিই শরীরে পচনের হার কমিয়ে দেয়। লুলাইলাকোর এই তাৎপর্যপূর্ণ আবহাওয়াই মমিগুলিকে এত বছর ধরে ভাল রেখেছিল, মত বিশেষজ্ঞদের।
১২১৭
কী ভাবে মৃত্যু হল তাদের? এই প্রশ্নটিই সবচেয়ে বড় হয়ে দাঁড়িয়েছিল প্রত্নতত্ত্ববিদদের কাছে। কিন্তু পরীক্ষার পর তাঁরা মৃত্যুর কারণ জেনে আরও বিস্মিত হয়েছিলেন।
১৩১৭
তাদের মৃত্যুর ছ’মাস আগে থেকে শুধুমাত্র মদ খাইয়ে রাখা হয়েছিল। কোকো পাতা (যা থেকে ক্যাফেইন তৈরি হয়) এবং ভুট্টা দিয়ে তৈরি মদ খেয়েই দিন কাটিয়েছিল তারা। উৎসর্গের দিন যত এগিয়ে এসেছিল তত মদের মাত্রাও বেড়েছিল।
১৪১৭
১৩ বছরের ওই নাবালিকা এবং তার পাশে পাওয়া চার এবং পাঁচ বছরের দুই খুদের শরীর থেকেও কোকো পাতা আর ভুট্টার মদের সন্ধান মেলে। কেন তারা এত মাত্রায় মদ খেত তা নিয়ে নানা মত রয়েছে প্রত্নতত্ত্ববিদদের।
১৫১৭
কারও মতে, উৎসর্গের এই প্রথা শুভ বলে গণ্য করা হত। ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গের অনুমতি মিলত শুধুমাত্র সমাজের উচ্চশ্রেণির মানুষদের। মমি হয়ে যাওয়া ওই তিনজনই নিশ্চয় ধনী পরিবারের সন্তান ছিল।
১৬১৭
কারও মতে, বয়সে ছোট হলেও তাদের পরিণতি কী হতে চলেছে তা খুব ভাল ভাবেই বুঝে গিয়েছিল তারা। ভয় কাটাতে এবং শারীরিক কষ্ট কমাতে এগুলির উপরই একমাত্র ভরসা ছিল তাদের। সন্তানদের উৎসর্গ করে গর্ব বোধ করতেন মা-বাবা। তাঁদের ধারণা ছিল, এতে সন্তান অমর হবে, ঈশ্বরের কাছে ঠাঁই হবে তার।
১৭১৭
আর্জেন্টিনার সাল্টায় মিউজিয়াম অব হাই অলটিটিউট আর্কিওলজি-তে সংরক্ষিত রয়েছে মমিগুলি। সাল্টাও এক সময় ইনকা সাম্রাজ্যের অধীন ছিল। ক্ষয় রোধ করতে ওই একই শুষ্ক এবং ঠান্ডা আবহাওয়া তৈরি করা হয়েছে মমিগুলির কক্ষে। ২০০৭ সাল থেকে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয় এই জাদুঘর।