গৃহকর্তা বলছেন, অযাচিত অনুপ্রবেশ চাই না। এখনই এলাকা না ছাড়লে ফল হবে মারাত্মক। কিন্তু, অযাচিত অতিথিকে খেদানোর দায়িত্ব যে পাহারাদেরর উপর, তিনি অতিথিকে বলছেন, আবার দেখা হবে বন্ধু।
দু’দেশের মধ্যে উত্তেজনার পারদ তুঙ্গে। নজরদারি রণতরী পাঠিয়ে আমেরিকা চোখ রাঙাচ্ছে চিনকে। ক্ষেপণাস্ত্রবাহী যুদ্ধবিমানের মহড়া শুরু করে চিন পাল্টা শাসাচ্ছে আমেরিকাকে। মার্কিন-চিন এই ঠান্ডা লড়াই নিয়ে গোটা বিশ্ব সরগরম। অথচ দক্ষিণ চিন সাগরের জলে যে যোদ্ধারা গোলাগুলি নিয়ে একে অপরের মুখোমুখি, তাঁদের পারস্পরিক কথোপকথনে অদ্ভুত সৌজন্য। ইউএসএস লাসেনের কম্যান্ডারের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা অন্তত তাই বলছে।
চিনের তৈরি কৃত্রিম দ্বীপের ১২ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে মার্কিন রণতরী ইউএসএস লাসেন ঢুকতেই তাকে চ্যালেঞ্জ করতে শুরু করে চিনা নৌসেনার যুদ্ধজাহাজগুলি। পেন্টাগনের নির্দেশ মতো সেই সব চ্যালেঞ্জ উপেক্ষা করেই বিতর্কিত কৃত্রিম দ্বীপের দিয়ে এগিয়েছে ইউএসএস লাসেন। এক সময় চিনা দ্বীপের ৬ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে ঢুকে পড়ে মার্কিন রণতরী। উত্তেজনা তখন চরমে। কিন্তু, চিনা নৌসেনার আধিকারিকদের সঙ্গে মার্কিন নৌবাহিনীর যে কথোপকথন তখন হয়েছে, তাতে উত্তেজনার ছাপ ছিল না।
মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব অ্যাশ কার্টার সম্প্রতি ইউএসএস থিয়োডর রুজভেল্ট নামে একটি রণতরীতে যান পরিদর্শনের জন্য। সেই বিশেষ কর্মসূচিতে হাজির ছিলেন ইউএসএস লাসেনের কম্যান্ডার রবার্ট ফ্রান্সিসও। তাঁকে সামনে পেয়েই সাংবাদিকরা ছেঁকে ধরেন। যুদ্ধজাহাজ নিয়ে চিন সাগরে ঢুকে চিনকে চ্যালেঞ্জ ছোঁড়ার অভিজ্ঞতা কেমন, জানতে চান সাকলেই। ফ্রান্সিস যা জানিয়েছেন, তাতে অনেকেরই চক্ষু চড়কগাছ।
কম্যান্ডার ফ্রান্সিস জানিয়েছেন, কৃত্রিম দ্বীপের ১২ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে ঢুকতেই চিনা নৌবাহিনী চ্যালেঞ্জ করতে শুরু করে ইউএসএস লাসেনকে। চিনা রণতরী পিছু নেয় লাসেনের। বার বার তারা মনে করিয়ে দিতে থাকে, ইউএসএস লাসেন চিনের জলসীমায় ঢুকে পড়েছে। চিনা নাবিকরা বলেছিলেন, ‘‘তোমরা চিনের জলসীমায় ঢুকে পড়েছ। কী উদ্দেশ্যে তোমরা এখানে এসেছ?’’ ফ্রান্সিসরা চিনা আধিকারিকদের জানান, আন্তর্জাতিক আইন মেনে জলপথে নজরদারি চালাচ্ছে আমেরিকা। এতেই কিন্তু থামেনি চিনের চ্যালেঞ্জ। বার বার চিনা যুদ্ধজাহাজগুলি ফোন করতে থাকে মার্কিন রণতরীতে। বার বার একই প্রশ্ন। মার্কিনিদের তরফেও বার বার একই উত্তর। উত্তেজনা যখন চরমে, তখনও কিন্তু চ্যালেঞ্জ এবং পাল্টা চ্যালেঞ্জের ভাষা এইটুকুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। রবার্ট ফ্রান্সিসের দাবি অন্তত সে রকমই।
চিনের কৃত্রিম দ্বীপ পেরিয়ে মার্কিন রণতরী দূরে চলে যাওয়ার পরও কিন্তু দু’পক্ষের কথোপকথন থামেনি। বেশ কয়েকদিন লাসেনের পিছন পিছন ঘুরে বেড়িয়েছেন চিনা নাবিকরা। কথোপকথন চলেছে তখনও। ফ্রান্সিস জানালেন, কোনও কাজ ছাড়াই ফোনালাপ চলত অনেক সময়। ফ্রান্সিস বললেন, ‘‘আমরাই এক দিন চিনা জাহাজে ফোন করে জিজ্ঞাসা করলাম, শনিবার তোমরা কী করছ। তারা বলল পিজা খাচ্ছে।’’ একই ভাবে চিনারাও কখনও জিজ্ঞাসা করতেন, মার্কিন রণতরীর মেনুর হাল কী রকম? হ্যালোউইনে কী প্ল্যান, সে কথাও পরস্পরের সঙ্গে আলোচনা করেছেন যুধুধান নৌসেনার আধিকারিকরা।
চিন থেকে লাসেন যখন অনেক দূরে চলে গেল, তখনই চিনা জাহাজও পিছু নেওয়া বন্ধ করল। কিন্তু, চিনা নাবিকদের বিদায় সম্ভাষণ এখনও ভুলতে পারছেন না ফ্রান্সিস। চিনা ‘বন্ধু’ তাঁকে ফোন করে বলেছিলেন, ‘‘আর বেশি দূর তোমাদের সঙ্গ দিতে পারছি না। তোমাদের যাত্রা শুভ হোক। আশা করছি আবার তোমাদের সঙ্গে দেখা হবে।’’
ফ্রান্সিসের ব্যাখ্যা, পেশার তাগিদেই যোদ্ধা হওয়া। কিন্তু অন্য সব পেশার মানুষের মতো যোদ্ধাদেরও পরিবার রয়েছে, আপনজন রয়েছে, মন রয়েছে। দক্ষিণ চিন সাগরে উত্তেজনা নিয়ে পরস্পরের মুখোমুখি হতে হয়েছে ঠিকই। কিন্তু দু’পক্ষই পরস্পরের মানবিক অনুভূতির শরিক হতে পেরেছে যুধুধান অবস্থাতেও। তাতেই বোধ হয় অটুট থেকেছে সৌজন্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy