ঢাকা থেকে কেরানীগঞ্জ যাতায়াতে আগের মতো ঝঞ্ঝাট নেই। মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার পেরলেই হল। নদী পারাপারের ঝক্কি পোয়াতে হয় না। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই ফ্লাইওভার দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় কনভয় ক্ষণিকের জন্য দাঁড়ায়। গাড়ি থেকে নামেন সামরিক সচিব মেজর জেনারেল জিয়া মোহম্মদ জয়নুল আবেদিন। গুনে গুনে সবকটা গাড়ির টোল মেটান। আবার যাত্রা শুরু হয়। অনেকেরই প্রশ্ন, প্রধানমন্ত্রীর গাড়ির আবার টোল কেন! তিনি তো আর পাঁচ জনের মতো সাধারণ নন। তাঁর সব কাজ দেশের জন্য। হাসিনার স্পষ্ট জবাব, তিনি সবার মতো বাংলাদেশের এক নাগরিক। অতিরিক্ত সুযোগ নেওয়াটা তাঁর কাছে অপরাধ। চার মাস আগে ধনেশ্বরী নদী পেরিয়ে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ উদ্বোধনের সময়ও টোল দিতে তিনি ভোলেননি।
কেরানীগঞ্জ আর অবহেলিত এলাকা নয়। দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা সেতু, মাওয়া পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণের পর কেরানীগঞ্জ রানির মর্যাদা পাচ্ছে। জমির দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। অন্য এলাকার লোকও ঝাঁপিয়ে পড়ছে জমি কিনতে। দেশের সবচেয়ে বড় কারাগারটা হয়েছে এখানেই। বিশাল জায়গা জুড়ে হাত-পা ছড়িয়ে আছে। সব ব্যবস্থাই অত্যাধুনিক। হাসিনা জানিয়েছেন এটা কারাগার নয়, সংশোধনাগার। আমরা মানুষকে মানুষ হিসেবেই দেখি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমান আমাদের সেই শিক্ষাই দিয়েছেন। বন্দি সেবা মহৎ কর্ম। তাদের আলোয় ফেরানোটা সামাজিক দায়িত্ব।
আরও পড়ুন:
বাঁশখালীর ঘটনা অনভিপ্রেত, মানুষকে আগে বোঝানোর দরকার ছিল বাংলাদেশ সরকারের
উদ্যোগ আন্তরিক হলে, সবাই না হলেও অনেকেই সুস্থ স্বাভাবিক জীবনের সন্ধান করেন। সুযোগ পেলে ছাড়েন না। জীবন যুদ্ধে হেরে অন্ধকারে সেঁধিয়ে আবার ফেরা। আসামী একবারে পচে গলে গেলে কিছু করার থাকে না। ফেলে দিতে হয়। সমাজ বাঁচাতে মৃত্যুদণ্ড। অভাবে যাঁদের স্বভাব নষ্ট, তারাও ধীরে ধীরে অন্ধকারে তলায়। সেটা যাতে না হয়, সচেতন হাসিনা। ছিচকে চুরির অপরাধে শাস্তি পাওয়ার পর সংশোধন সম্ভব। পাকা বড় চোর হওয়ার ট্রেনিং যাতে না পায় সেদিকে খেয়াল রাখাটা জরুরি। তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হচ্ছে। তারা কারাগারে জিনিসপত্র তৈরি করবে। বাজারে সেগুলো বিক্রি হবে। সে টাকা জমা হবে তাদের নামে। চাইলে তার কিছুটা পরিবারকেও পাঠাতে পারবে। সৎ উপার্জনের আকর্ষণ বাড়লে অপরাধের হাতছানি উপেক্ষা করা সম্ভব।
হাসিনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আলোকপাত করেছেন। প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে অপরাধের মাত্রা যে গভীরতা পেয়েছে সেটা তিনি উল্লেখ করেছেন। হ্যাকাররা যেভাবে ব্যাঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করছে তার কূলকিনারা পাওয়া কঠিন। দুর্নীতির জাল দুনিয়া জোড়া। শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। অপরাধীদের রুখতেও আরও উন্নতমানের প্রযুক্তি দরকার। তার চেয়ে বেশি প্রয়োজন অন্যায় প্রতিরোধের। মনুষ্যত্বের বিকাশ ছাড়া সুন্দর সমাজ গড়া অসম্ভব। অনেক মানুষই ছোটখাটো সুবিধে নিতে গিয়ে অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। হাসিনা ফ্লাইওভারে টোল দিয়ে বুঝিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীও যদি পদমর্যাদার খাতিরে বিশেষ সুবিধে নেওয়ার ছলে অপরাধে জড়ান, সমাজকে কী জবাব দেবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy