গুগ্লের দফতরের বিক্ষোভে বক্তৃতা করছেন সুন্দর পিচাই। মঙ্গলবার। ছবি টুইটারের সৌজন্যে।
ফুটছে লন্ডন। এই ভরা শীতেও। ট্রাম্পের ব্রিটেন সফর আটকাতে চেয়ে আজ পথে নামল লন্ডন, এডিনবরা, ব্রাইটনের মতো ব্রিটেনের অন্তত ৩০টি শহর। ট্রাম্পের শরণার্থী নীতির প্রতিবাদে হাজার-হাজার মুখ ঢাকল প্ল্যাকার্ডে আর পোস্টারে। যার মোদ্দা কথা একটাই— ‘‘এখনও চুপ করে থাকলে ক্ষমা করবে না ইতিহাস।’’
কিন্তু ট্রাম্প আছেন ট্রাম্পেই। অনড়। বেপরোয়া। চাপের মুখে পিছু হঠা দূরে থাক, বরং তাঁর নীতি নিয়ে প্রশ্ন তোলায় আজ ছাঁটাইয়ের চিঠি ধরালেন ভারপ্রাপ্ত অ্যাটর্নি জেনারেল স্যালি ইয়েটসকে। দেশের জাস্টিস ডিপার্টমেন্টকে ট্রাম্পের নয়া নীতি মেনে না চলার নির্দেশ দিয়েছিলেন ইয়েটস। আজ তাঁকে বরখাস্ত করার পর হোয়াইট হাউস এক বিবৃতি দিয়ে জানায়, ‘‘এ ভাবে নিজের দফতরের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন ইয়েটস। তা ছাড়া, সীমান্ত রক্ষার ব্যাপারে তিনি বরাবরই দুর্বল। অবৈধ অভিবাসী আটকাতেও ব্যর্থ।’’ চাকরি পেয়েছিলেন ওবামা আমলে। সেটাও ইয়েটসের ‘মারাত্মক অপরাধ’ বলে মনে করছেন মার্কিন কূটনীতিকদের একাংশ। অভিবাসন এবং শুল্ক দফতরের ভারপ্রাপ্ত প্রধান ড্যানিয়েল রাসদকেও বরখাস্ত করেছেন ট্রাম্প। তার পিছনে কী কারণ, জানা যায়নি।
বিক্ষোভের আঁচ অবশ্য এ সবে কমছে না। হোয়াইট হাউস থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঠিক দশ দিনের মাথায় মুখ খুলেছেন বারাক ওবামাও। গত কালই ক্ষুব্ধ অভিবাসীদের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি বিবৃতি দেন— ‘‘মার্কিন মূল্যবোধটাই যখন প্রশ্নচিহ্নের মুখে দাঁড়িয়ে, তখন বিক্ষোভটাই তো স্বাভাবিক।’’ ট্রাম্প এখন প্রচার করছেন, ২০১১-য় ছ’মাসের জন্য ইরাকি শরণার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছিলেন ওবামাও। ওবামার মুখপাত্র কেভিন লুইস তা উড়িয়ে দিয়ে জানাচ্ছেন, এমন অপপ্রচারে আহত প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট। মিছিল-সমাবেশ করে নাগরিকরা তাঁদের গণতান্ত্রিক অধিকারই প্রয়োগ করছেন বলে দাবি করেন তিনি। গত কাল গুগ্ল-কর্মীদের এমনই এক সমাবেশে সামিল হন সংস্থার সিইও সুন্দর পিচাই। গুগ্ল-এর মাউন্টেন ভিউ ক্যাম্পাসে মাইক হাতে নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘কিছু বিষয়ে কখনও আপস করা চলে না। আমাদের লড়াই চলবে।’’ ট্রাম্পের ‘নিষিদ্ধ’ তালিকায় থাকা সাতটি মুসলিম দেশ এবং আমেরিকার মধ্যে বিনামূল্যে ফোন-কলের সুবিধা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে মেসেজিং অ্যাপ ভাইবার।
আমেরিকার মাটিতে এগুলো প্রত্যাশিতই ছিল। কিন্তু এ বার ব্রিটেনও যে ভাবে রাস্তায় নামল, সেটা আগে ভাবেননি অনেকেই। যদিও ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ব্রিটেনের সরকারি ওয়েবসাইটে পিটিশন হয়েছিল ডিসেম্বরেই। যাতে বলা হয়, ‘‘এমন এক জন প্রেসিডেন্ট ব্রিটেন সফরে আসার পক্ষে অনুপযুক্ত।’’ এর সমর্থনে গত ক’দিনে ১৫ লক্ষ সই জমা পড়েছে। শুক্রবার ট্রাম্প প্রশাসনিক নির্দেশে সই করার পর থেকে প্রতি মিনিটে প্রায় ১ হাজার প্রতিবাদীর সই জমা পড়েছে বলে সূত্রের খবর। আর বিলিতি কানুন বলছে, পিটিশনে সইয়ের সংখ্যা ১০ লক্ষ ছাড়ালেই পার্লামেন্টে তা নিয়ে তর্ক হতে পারে। গত কাল রাতেই হাউস অব কমন্সে একজোট হয়ে ট্রাম্প-নির্দেশিকার বিরোধিতা করেছেন সব এমপি-রা। লন্ডনের মেয়র সাদিক খান সরাসরি তোপ দেগেছেন ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। আর আজ তো সরাসরি মিছিলের ঢল।
কিন্তু ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তাতে মত বদলাবেন কি? ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে আসার প্রথম সপ্তাহেই তো তাঁকে ব্রিটেনে আসার আমন্ত্রণ জানিয়ে রেখেছেন টেরেসা মে। সম্প্রতি মার্কিন সফরে গিয়ে আরও এক বার। অথচ জর্জ ডব্লিউ বুশ বা ওবামা কিন্তু ব্রিটেন সফরে এসেছিলেন হোয়াইট হাউসে দু’বছর কাটানোর পরে। ট্রাম্পের বেলায় এমন তড়িঘড়ি কেন? কূটনীতিকদের একাংশের দাবি, ব্রেক্সিট পরবর্তী অধ্যায়ে আমেরিকার বাজার ধরতেই এমন মরিয়া পদক্ষেপ টেরেসার। দেশজোড়া বিক্ষোভেও তাই অনড় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। জাতীয় স্বার্থের কথা মাথায় রেখেই ট্রাম্পের ব্রিটেন সফর বাতিল করা হবে না বলে জানিয়েছে ডাউনিং স্ট্রিট। তবে ট্রাম্পের অভিবাসন-ফরমানে ব্রিটিশ-মুসলিমরা কতখানি প্রভাবিত হবেন, তা সংশ্লিষ্ট কর্তাদের দেখতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy