Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
Afghanistan

Afghanistan: এক গনিকে সরিয়ে কাবুলের মসনদে কি আর এক গনি?

রবিবার সকালে প্রেসিডেন্টের বাসভবনে সমঝোতা করতে যান তালিবান প্রধান মোল্লা আবদুল গনি বরাদর। তিনিই আফগানিস্তানের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হতে পারেন।

প্রেসিডেন্ট বাসভবনে সহযোগীদের সঙ্গে মোল্লা আবদুল গনি বরাদর।

প্রেসিডেন্ট বাসভবনে সহযোগীদের সঙ্গে মোল্লা আবদুল গনি বরাদর। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত।

সংবাদ সংস্থা
কাবুল শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০২১ ১৫:৫৩
Share: Save:

টানটান উত্তেজনায় কেটেছে রাত। সকাল হতেই বিনাযুদ্ধে ক্ষমতা হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়ে গেল আফগানিস্তানে। তালিবান নেতাদের সঙ্গে মাত্র ৪৫ মিনিট বৈঠকের পরেই প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ইস্তফা দিলেন আশরফ গনি। তাঁর জায়গায় আর এক গনি এ বার আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হতে পারেন বলে জল্পনা শুরু হয়েছে। মোল্লা আবদুল গনি বরাদর। বর্তমানে আফগানিস্তানে তালিবানের অন্যতম প্রধান তিনি। রবিবার সকালে আশরফ এবং আমেরিকার কূটনীতিবিদদের সঙ্গে সমঝোতা করতে তিনিও প্রেসিডেন্টের বাসভবনে হাজির হয়েছিলেন বলে জানিয়েছে আরব নিউজ।
শনিবার রাতে উত্তরের মাজার-ই-শরিফ দখলের পর থেকেই কাবুলের পতনের ঘণ্টা বাজতে শুরু করেছিল। রবিবার সকালে জালালাবাদ দখল করে তাতে সিলমোহর দেন তালিবান যোদ্ধারা। তার পর রাজধানী কাবুলেও দলে দলে প্রবেশ করতে শুরু করেন তাঁরা। যদিও দলীয় নেতৃত্বের নির্দেশে কাবুলে ঢোকার মুখেই থমকে যেতে হয় তাঁদের। এর পর সরাসরি আশরফ এবং আমেরিকার কূটনীতিবিদদের সঙ্গে সমঝোতা চান বলে দাবি করেন তালিবান নেতৃত্ব। জানিয়ে দেন, গায়ের জোরে কাবুল দখল করতে চান না তাঁরা। শান্তিপূর্ণ ভাবে ক্ষমতার হস্তান্তর চান।

এর পরেই মার্কিন কূটনীতিবিদ এবং ন্যাটো প্রতিনিধিদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেন আশরফ। তার পর বৈঠকের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয় তালিবান নেতৃত্বকে। সেই মতো মোল্লা আবদুল গনি বরাদরের নেতৃত্বে প্রেসিডেন্টের বাসভবনের উদ্দেশে রওনা দেয় তালিবানের একটি প্রতিনিধি দল। সেখানে তাঁদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন আশরফ এবং সেখানেই তালিবান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর নাম উঠে আসে বলে জানিয়েছে আরব নিউজ।

চিনা বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে গনি।

চিনা বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে গনি। ছবি: রয়টার্স।

১৯৯৪ সালে তালিবান আন্দোলনের অন্যতম মাথা এই মোল্লা আবদুল গনি বরাদর। ২০০১ সালে আমেরিকা আফগানিস্তানের দখল নেওয়ার পর, আমেরিকা বিরোধী যে জেহাদ শুরু হয়, তার চালকের আসনে ছিলেন গনি। ২০১০ সালে আমেরিকা এবং পাকিস্তানের যৌথ অভিযানে করাচিতে ধরাও পড়েন তিনি। তার পর থেকে সে ভাবে জনসমক্ষে দেখা যায়নি তাঁকে। কিন্তু ২০১২ সালে আফগান সরকার যে সমস্ত তালিবান বন্দিকে মুক্তি নিয়ে উদ্যোগী হয়, তাতে গনির নাম একেবারে উপরের দিকে উঠে আসে। সে বছর ২১ সেপ্টেম্বর গনিকে মুক্তি দেয় পাকিস্তান,যদিও তালিবান তা স্বীকার করে ২০১৮ সালে। তার পর থেকেই তাঁর সঙ্গে শান্তিস্থাপন নিয়ে আলোচনা শুরু করতে উদ্যোগী হয় তৎকালীন আফগান সরকার। আমেরিকা দাবি করে, তাদের অনুরোধেই গনিকে ছেড়েছে পাকিস্তান।

পাকিস্তানে গ্রেফতার হওয়ার সময় তালিবানের ধর্মীয় বিভাগের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা ছিলেন গনি। প্রাক্তন তালিবান প্রধান মোল্লা মহম্মদ ওমরের ঘনিষ্ঠ এবং বিশ্বস্ত লোক বলে পরিচিত ছিলেন। এমনকি মোল্লা ওমরের বোনকে বিয়েও করেন গনি। তাই তাঁর সঙ্গে সমঝোতা করা গেলে আমেরিকা এবং ন্যাটোবাহিনী সরে গেলে দেশে স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে বলে আশাবাদী ছিল আফগান সরকার। কারণ গনি নিজেও একাধিক বার আমেরিকা এবং আফগান সরকারের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। পাকিস্তান থেকে মুক্তি পাওয়ার পর কাতারের দোহায় প্রথমে তালিবানের কূটনৈতিক দফতরের দায়িত্বও পান গনি।

কিন্তু রাষ্ট্রপুঞ্জের নিষিদ্ধ জঙ্গিদের তালিকায় নাম ওঠার পর থেকেই আমেরিকাকে দেশ থেকে তাড়ানোই লক্ষ্য হয়ে ওঠে গনির। সেই সময় বিবৃতি জারি করে গনি জানিয়েছিলেন যে, আফগানিস্তানে আমেরিকার প্রভূত ক্ষয়ক্ষতি হবে। আর তা যাতে হয়, তালিবান তা নিশ্চিত করেই ছাড়বে। আফগানিস্তানের মাটি থেকে আমেরিকাকে উচ্ছেদ না করা পর্যন্ত জেহাদ চলবে বলেও জানিয়ে দেন গনি। ২০২০ সালে তালিবানের হয়ে আফগানিস্তান থেকে আমেরিকার সেনা প্রত্যাহার চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন গনি।

আফগানিস্তান নিয়ে ভারত যখন খানিকটা কোণঠাসা, ঘটনাচক্রে সেই সময়ই, গত জুলাই মাসে চিনা বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই-র সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তালিবানের অন্যতম প্রধান গনি। সেই সময় ওয়াং বলেন, ‘‘প্রতিবেশী হিসেবে আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে সম্মান করে চিন। আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বাইরের কারও হস্তক্ষেপ একেবারেই কাম্য নয়। আফগানবাসীদের চিন বন্ধু ভাবে। আফগানিস্তানের উপর একমাত্র অধিকার সে দেশের মানুষের। তাই আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎও তাঁরাই ঠিক করবেন। আমেরিকা এবং ন্যাটো যে ভাবে তাড়াহুড়ো করে সেনা তুলে নিল, এতে তাদের ব্যর্থতাই প্রমাণিত হচ্ছে। তাদের চলে যাওয়াতেই স্থিতিশীলতা এবং শান্তি ফিরিয়ে আনার সুবর্ণ সুযোগ তৈরি হয়েছে।’’ তাই আটঘাট বেঁধেই তালিবান প্রধান আফগানিস্তানের দখল নিতে নেমেছিলেন বলে মনে করছেন কূটনীতিবিদদের একাংশ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE