সতর্ক: গোয়েন্দা কুকুর নিয়ে ক্যাপিটল চত্বরে আমেরিকান ন্যাশনাল গার্ড। মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে ডিসিতে। রয়টার্স।
প্রথম বারের ফাঁড়া তবু কেটে গিয়েছিল। এ বারেরটা নির্ভর করছে সেনেট-শুনানির উপরে। বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন— পরিস্থিতি যা, তাতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইমপিচমেন্ট শুধু সময়ের অপেক্ষা। এমনিতেই হাজারো মামলায় ফেঁসেছিলেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট। ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল তাণ্ডবের আগে তাঁর ওই উস্কে দেওয়া ভাষণ বিরোধী ডেমোক্র্যাটদের জন্য পিচে বাড়তি বাউন্স দিয়েছে। সত্যিই তাঁকে ইমপিচ করা সম্ভব হলে ২০২৪-এর ভোটে আর প্রার্থী হওয়া হবে না ট্রাম্পের। অনেকে আবার বলছেন, তাঁর সব দোষ মাফ হলে গেলেও ক্যাপিটল-তাণ্ডবে উস্কানি দেওয়ার জন্যও জেলও হতে পারে ট্রাম্পের!
জেল না-হলে ট্রাম্প কী করবেন, কাল জো বাইডেনের শপথের ঠিক আগে তা নিয়েই জোর জল্পনা বিশ্ব জুড়ে। বাইডেন জমানা শুরুর মুখেও যাবতীয় স্পটলাইট কিন্তু কেড়ে নিলেন বিদায়ী প্রেসিডেন্টই। এবং কার্যত কিছুই না বলে। বাইডেনের শপথে থাকবেন না ট্রাম্প। মেলানিয়াও। বিদায়ী ফার্স্ট লেডি তবু বিদায়বেলায় সাত মিনিটের ভিডিয়ো-ভাষণ পোস্ট করেছেন। জানিয়েছেন, তিনি সম্মানিত।
হোয়াইট হাউসে চার বছর, তাঁর কাছে সুখস্মৃতি। ক্যাপিটল-তাণ্ডবের কথা এড়িয়ে গিয়েও দেশবাসীর উদ্দেশে মেলানিয়া বলেছেন, ‘‘জীবনে যা-ই করুন, উৎসাহ নিয়ে করুন। আবেগটা খুব জরুরি। কিন্তু একটা কথা সব সময়ে মনে রাখবেন, হিংসা কোনও সমাধান নয়। যুক্তিগ্রাহ্যও হতে পারে না।’’
ট্রাম্প মুখে কুলুপ এঁটেই রয়েছেন। আগে তবু রাগে-হর্ষে-অভিমানে টুইট করতেন। ক্যাপিটল তাণ্ডবের পরে তাঁর সেই টুইটার অ্যাকাউন্টও কেড়ে নিয়েছে মাইক্রোব্লগিং সাইটটি। তাই তাঁর মনে কী চলছে, আগামী দিনে কী করবেন, বিশেষজ্ঞ থেকে আমজনতা— শুধু জল্পনাই করছেন। হোয়াইট হাউস ছাড়ার পরে আমেরিকান প্রেসিডেন্টরা সাধারণত গল্ফ খেলেন, দেশে-বিদেশে দামি বক্তৃতা দেন, স্মৃতিকথা লেখেন কিংবা উত্তরসূরির কর্মকাণ্ড নিয়ে মন্তব্য করেন। ট্রাম্পও গল্ফ খেলবেন। বাকি আর কিছুই আন্দাজ করা যাচ্ছে না।
তবে তিনি সহজে হাল ছাড়ার পাত্র নন। ট্রাম্পের জীবনীকার টিম ও’ব্রায়েনের কথায়, ‘‘ট্রাম্পের বাবা ছেলেকে এমন ভাবে মানুষ করেছেন, যাতে তিনি শুধু দু’ধরনের মানুষ দেখেন— জয়ী কিংবা পরাজিত। ট্রাম্প কিছুতেই নিজেকে পরাজিতের দলে দেখতে চান না।’’ বিশেষজ্ঞরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, নব্বইয়ের দশকে আটলান্টা সিটি ক্যাসিনোয় নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করার দশ বছর পরে স্বমহিমায় ফিরে এসেছিলেন ট্রাম্প— ২০০৪-এ ‘দ্য অ্যাপ্রেন্টিস’ টিভি রিয়্যালিটি শোয়ের হাত ধরে। পরের বছরই মেলানিয়াকে বিয়ে। জন এল্টন, বিলি জোয়েলকে দিয়ে নিজের বিয়েতে গানও গাইয়েছিলেন ট্রাম্প! অনেকেই এখন মজা করে বলছেন— হোয়াইট হাউস ছাড়তে হচ্ছে বলে নয়, বাইডেনের শপথে কেন জেনিফার লোপেজ, লেডি গাগা, টম হ্যাঙ্কসরা আসছেন, সেটাই তাঁর আসল গাত্রদাহের কারণ! সূত্রের খবর, ট্রাম্প নাকি সত্যিই এ নিয়ে ঘনিষ্ট মহলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
২০১৬-র ভোটে ট্রাম্প যখন একটু একটু করে বর্ণবিদ্বেষের তাস খেলতে শুরু করেছেন, তখন থেকেই একটু একটু করে তাঁকে বয়কট করতে শুরু করেছে হলিউড। ক্যাপিটল তাণ্ডবের পরে শোনা যাচ্ছে, আমেরিকার কর্পোরেট হর্তাকর্তাদের অনেকেই তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন। ১৫ জানুয়ারি প্রকাশিত দেশের সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষা বলছে, দেশের ৬৮ শতাংশ মানুষ ট্রাম্পকে ভবিষ্যতে আর কোনও ভাবেই সক্রিয় রাজনৈতিক মুখ হিসেবে দেখতে চাইছেন না। গত কাল প্রকাশিত আর একটি সমীক্ষা বলছে, গত চার বছর ক্ষমতায় থেকে তিনি যা করেছেন, তাতে মাত্র ৩৪ শতাংশ মানুষের সমর্থন রয়েছে।
ইমপিচমেন্ট চূড়ান্ত হলে ফের হোয়াইট হাউসের দৌড়ে নামা ট্রাম্পের পক্ষে অসম্ভব। কিন্তু দলের হয়ে ‘কিংমেকার’ হওয়ার ক্ষেত্রে কোনও বাধা নেই। তাঁর জনসমর্থনের ভাঁড়ার এখনও ফুরোয়নি। কিন্তু ট্রাম্প কোন মুখে ফের মানুষের মুখোমুখি হবেন— প্রশ্ন তুলে দিলেন রিপাবলিকান স্ট্র্যাটেজিস্ট তথা প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের আমলে তাঁর হোয়াইট হাউস আধিকারিক স্কট জেনিংস। তাঁর কথায়, ‘‘ফের ভোট চাইতে মানুষের মুখোমুখি হয়ে তিনি হয়তো বলবেন, ‘যা হয়েছে ভুলে যান। আর তা ছাড়া ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটলে যা হয়েছিল, তাতে সত্যিই আমাদের কোনও হাত ছিল না।’ কিন্তু মানুষ কি আর এ সব বিশ্বাস করবে?’’
জল্পনা বিস্তর। ফেসবুকে তিন কোটি আর টুইটারে প্রায় ন’কোটি ফলোয়ার হারানো ট্রাম্প কি এ বার নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়া খুলবেন? ভোটে চালু করা ‘দ্য অফিশিয়াল ট্রাম্প ২০২০ অ্যাপ’ কিন্তু এখনও লুপ্ত নয়। নাকি, ভাবমূর্তি ফেরাতে নিজের চ্যানেলই লক্ষ্য ট্রাম্পের? অনেকেই বলছেন, স্মৃতিকথা ছাপাতেও সহজে পাবলিশার্স জুটবে না বিদায়ী প্রেসিডেন্টের। তা হলে কি
প্রকাশনী সংস্থাও?
শেষমেশ জেল হয়ে গেলে অবশ্য অন্য কথা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy