প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
তেতাল্লিশ বছর পরে কোনও ভারতীয় প্রধানমমন্ত্রী হিসেবে কুয়েত সফরে গিয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে ‘কৌশলগত সম্পর্কের’ পর্যায়ে নিয়ে গেলেন নরেন্দ্র মোদী। কুয়েতের আমির শেখ মেশাল আল-আহমেদ আল-জাবের-আল-সাবাহের সঙ্গে তাঁর বৈঠকের পর স্থির হয়েছে, সম্পর্ককে ‘নতুন গতি’ দেওয়া হবে। কৌশলগত সম্পর্কের প্রথম ধাপ হিসেবে দু’দেশ আজ প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে একটি চুক্তিপত্র সইও করেছে।
৪৩ বছর আগে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সে দেশে যান ইন্দিরা গান্ধী। বিদেশ মন্ত্রকের মতে, কুয়েতের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আজকের নয়। উপসাগরের তীরের এই দেশের সঙ্গে বরাবরের মৈত্রী ভারতের। এক সময়ে সে দেশের সরকারি মুদ্রা হিসেবে চল ছিল ভারতীয় মুদ্রার। পরবর্তীতে মুদ্রার চোরাচালান-সহ একাধিক অপরাধমূলক কাজ বৃদ্ধির পাওয়ার জেরে তা বন্ধ হয়। দীর্ঘদিন শীর্ষ পর্যায়ের সফর ভারতের দিক থেকে না হলেও দ্বিপাক্ষিক আদানপ্রদান ছিল সরকারি তরফে। ২০০৯ সালে প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারির সফরে উপসাগরীয় দেশটির সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক মজবুত হয়েছিল।
আজ বায়ান রাজপ্রাসাদে দুই নেতার বৈঠকের পর তথ্যপ্রযুক্তি, ওষুধ শিল্প, অর্থপ্রযুক্তি, নিরাপত্তা এবং পরিকাঠামো ক্ষেত্রে পারস্পরিক সমন্বয় বাড়ানোর দিকে জোর দেওয়া হয়েছে। কুয়েতে বসবাসকারী ১০ লক্ষ ভারতবাসীর কল্যাণের দিকে খেয়াল রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী ধন্যবাদ দেন আমিরকে। অন্য দিকে কুয়েতের নেতা জানিয়েছেন, তাঁর দেশে বসবাসকারী ভারতীয় সম্প্রদায়ের বড় ভূমিকা রয়েছে কুয়েতের প্রগতিতে। নিজের এক্স হ্যান্ডলে মোদী লেখেন, ‘অসামান্য বৈঠক হয়েছে কুয়েতের আমিরের সঙ্গে। আমরা বিভিন্ন গুরত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলি নিয়ে আলোচনা করেছি। দু’দেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা বিচার করে আমরা সম্পর্ককে কৌশলগত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে মনস্থ করেছি। আমি আশাবাদী, আমাদের মৈত্রী আগামী দিনে আরও বাড়বে’।
দু’দিনের সফরে কুয়েত পৌঁছে প্রধানমন্ত্রী লিখেছিলেন, ‘ভারত ও কুয়েত সমৃদ্ধি ভাগ করে নেবে। আগামী দশকগুলিতে, আমরা এই সমৃদ্ধির অংশীদার হব। আমাদের লক্ষ্য অভিন্ন। কুয়েতের মানুষ নতুন এবং উন্নত কুয়েত গড়ছেন। ভারতবাসীও ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারতকে একটি উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছেন। বাণিজ্য ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে কুয়েত গতিশীল অর্থনীতিতে পরিণত হতে চায়। ভারত উদ্ভাবনের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে ও তার অর্থনীতিকে শক্তিশালী করছে। উভয় লক্ষ্য একে অপরকে সমর্থন করে’। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, এটিই ছিল আজ মোদী-আমিরের আলোচনার কেন্দ্রীয় বিষয়।
প্রধানমন্ত্রী দেখা করেছেন কুয়েতের যুবরাজ শেখ সাবা আল খালিদ আল সাবার সঙ্গেও। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জায়সওয়াল জানান, ভারত ও কুয়েতের দুই শীর্ষ নেতার মধ্যে আলোচনা হয়েছে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে ‘নতুন উচ্চতায়’ নিয়ে যাওয়ার জন্য। আলোচনায় আমির এবং প্রধানমন্ত্রী তাঁদের দেশের মধ্যে ঐতিহাসিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা স্মরণ করেছেন। বৈঠকের পরে সাংবাদিক সম্মেলনে বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘প্রতিরক্ষা সমঝোতার ক্ষেত্রে চুক্তিপত্র দু’দেশের মধ্যে সামরিক ক্ষেত্রে সহযোগিতাকে প্রাতিষ্ঠানিক চেহারা দেবে। বিশেষ করে এই ক্ষেত্রে সহযোগিতার প্রশ্নে জোর দেওয়া হবে প্রশিক্ষণ, বিশেষজ্ঞদের আদানপ্রদান এবং যাতায়াত, যৌথ সামরিক মহড়া, অস্ত্র সরঞ্জামের রফতানি, গবেষণা ও উন্নয়নে সমন্বয় করার দিকে’। পাশাপাশি জানানো হয়েছে, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, শক্তিক্ষেত্র, স্বাস্থ্য প্রযুক্তি ও সংস্কৃতির মতো ক্ষেত্রগুলিকে শক্তিশালী করবে এই কৌশলগত অংশিদারিত্ব। অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও বাড়ানোর সম্ভাবনা নিয়ে কথা হয়েছে মোদী এবং আমিরের মধ্যে। কুয়েতের বৃহত্তম বাণিজ্য শরিকদের মধ্যে ভারত একটি। পণ্য ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ২৩-২৪-এর শেষে ছুঁয়েছে প্রায় দেড় হাজার কোটি ডলার। বিদেশ মন্ত্রকের মতে, ভারতের অর্থনীতিতে নানা ভাবে আরও হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ রয়েছে। মোদী এই সফরে সে দেশের সরকারি বিনিয়োগ কর্তাদের ভারতে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রতিরক্ষা, শক্তি, চিকিৎসা সরঞ্জামের মতো ক্ষেত্রে বিনিয়োগের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে।
আজ কুয়েতের সর্বোচ্চ সম্মান ‘দ্য অর্ডার অব মুবারক আল কবির’ দেওয়া হয়েছে মোদীকে। কূটনৈতিক বন্ধুত্বের বার্তাবহ ওই সম্মান সাধারণত রাষ্ট্রপ্রধানদের দেওয়া হয়। বিল ক্লিন্টন, জর্জ বুশকেও এর আগে কুয়েতের এই রাষ্ট্রীয় সম্মান দেওয়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy