Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

দুঃসময়ে ভাবছি আমার শহরের কথা

এত সবুজের সমারোহ আমি কোনওদিন দেখিনি। ভূগোলে পড়েছিলাম, সমতলের দেশ নেদারল্যান্ডস।

ফাইল চিত্র

ফাইল চিত্র

স্বরূপ দেব
আমস্টারডম  শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২০ ০৩:৪৩
Share: Save:

এই শহরে এক বছরের কিছু বেশি সময় ধরে আমি আছি। প্রথম যেদিন এখানে ঢুকলাম, এক অদ্ভুত সৌন্দর্য আমাকে আকর্ষণ করেছিল। চারদিকে সবুজে সবুজ। আর সব যেন সমতল।

এত সবুজের সমারোহ আমি কোনওদিন দেখিনি। ভূগোলে পড়েছিলাম, সমতলের দেশ নেদারল্যান্ডস। সেটা একানে এসেই মনে পড়ে গিয়েছিল। সেইসঙ্গে টিউলিপের মেলা। আর একের পর এক বাড়ি, বড় বড় ভবন যা চোখ টেনে নিয়েছিল অতি সহজেই। আমস্টারডমে আমি যেখানে থাকি, সেখান থেকে খুব কাছেই আমস্টারডম রেলস্টেশন। আর রটারডম আমার কর্মস্থল। ট্রেনে চেপে আধ ঘণ্টার কিছু বেশি সময়ে অফিসে পৌঁছে যেতাম নিয়মিত। সেই পথও অসামান্য সৌন্দর্যে ঘেরা। আসলে নেদারল্যান্ডস তো সমুদ্রে ঘেরা দ্বীপ। সেই সৌন্দর্যের ছাপ প্রতি ছত্রে ছত্রে রয়েছে এই দ্বীপ দেশের।

কিন্তু গত দেড় মাসে এই সুন্দর শহরটা যেন পুরোপুরি পাল্টে গিয়েছে। সব যেন থেমে গিয়েছে। বাইরের পথ সুনসান। দোকান-পাট বন্ধ। রাস্তায় গাড়ি চলছে না। রেলপথে ট্রেন চলছে না। বিমানবন্দরে বিমান ওঠানামা করছে না। আমরা ঘরবন্দি হয়ে পড়ে আছি। একমাস ধরে আমাদের বাড়ি থেকেই অফিসের যাবতীয় কাজ করতে হচ্ছে। বাইরের জগত থেকে পুরোপুরি আলাদা হয়ে পড়েছি। ইন্টারনেট চালু রয়েছে। নেটে জানতে পারছি, চারদিকে কী হচ্ছে। একটু পরপর করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার খবর আসছে। আসছে মৃত্যুর খবরও। চার হাজারের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৬৫০ জনের বেশি মানুষের।

সেইসব তথ্য ঘাঁটতে ঘাঁটতে বাড়ির কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। আমার শহর কোচবিহারের কথা। আমার বাড়ি বক্সিরহাটের কথা। জানতে পারি, আমাদের দেশেও শুরু হয়েছে করোনার প্রকোপ। কোচবিহারেও আতঙ্ক ছড়িয়েছে। তার মধ্যেই বাড়ি ফিরতে ইচ্ছে করে।

বিমানবন্দরের দিকে চোখ গেলে, সে আশাও হারিয়ে যায় তরঙ্গের সঙ্গেই। ভাল লাগে না, ভাল লাগছে না। এত মৃত্যু কোনও ভাবেই রুখে দেওয়া যাচ্ছে না। ভাইরাস বনাম বিশ্বের এই যুদ্ধ কবে শেষ হবে কে জানে। কখন আবার অফিস যেতে পারব? কখন মেতে উঠতে পারব আবার সেই সুন্দর শহরে। কখন বাড়ি ফিরতে পারব? কে জানে? মাঝে মধ্যেই এখন সেই ছোটবেলায় পড়া হল্যান্ডের প্রেক্ষাপটে লেখা একটি গল্পের কথা মনে পড়ে, যেখানে কিশোর হান্স ব্রিঙ্কার একটি বাঁধ আটকে তার প্রিয় শহরকে রক্ষা করে। ওই গল্প থেকেই জেনেছিলাম সমুদ্রের চারদিকে বাঁধ দিয়েই তৈরি এই হল্যান্ড শহর। গল্পে সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার পথে হান্সের চোখে পড়ে যায়, বাঁধের ফুটো। তা দিয়ে জল ঢুকতে শুরু করেছে শহরে। হান্স বুঝতে পেরেছিল, এই মুহূর্তেই তা বন্ধ না করলে ফুটো বড় হয়ে তাঁর প্রিয় শহর ভেসে যেতে পারে। সারারাত ঠান্ডায় বাঁধের ফাটলে হাত ঢুকিয়ে বসেছিল সেখানে। আজ হান্সের কথা মনে হয়। জানি না, শহর বাঁচাতে কোনও হান্স ফিরে আসবে কি না।

অন্য বিষয়গুলি:

coronavirus Amsterdam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy