Colonel Harland David Sanders is the name behind finger licking recipe of KFC dgtl
KFC
কর্নেল স্যান্ডার্স, কেএফসি-র এই বৃদ্ধের জীবনের গল্প তাক লাগিয়ে দেবে
থিতু হতে পারছিলেন না কোনওমতেই। নানা রকম কাজের সূত্রেই হারল্যান্ড এলেন কেন্টাকিতে। সেখানেও কিছু দিন এ কাজ, সে কাজের পরে তেল সংস্থায় চাকরি। কাজের ফাঁকে শুরু করলেন শৈশবের শখ, রান্না করা। নতুন করে ঝালিয়ে নিলেন পুরনো রেসিপি। যেগুলো বানিয়ে ছোট ভাইবোনদের দিতেন খুদে হারল্যান্ড।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১২:১৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৭
রেস্তোরাঁয় বসে মুচমুচে ভাজা মাংসে কামড় দিয়ে উল্টো দিকের দেওয়ালে আপনি তাঁর ছবি দেখেছেন। চশমা পরা সদাহাস্যময় বৃদ্ধ। জানেন কি, তাঁর এই রেসিপিকে জনপ্রিয় করতে ওই বৃদ্ধকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল জীবনের বাষট্টি বসন্ত। তার আগেও কম রোমাঞ্চকর ছিল না তাঁর চলার পথ। তিনি কর্নেল স্যান্ডার্স। কেন্টাকির ভাজা মুরগিকে পৌঁছে দিয়েছেন বিশ্বের কোণায় কোণায়।
০২১৭
পুরো নাম হারল্যান্ড ডেভিড স্যান্ডার্স। আমেরিকার ইন্ডিয়ানায় জন্ম ১৮৯০-এর ৯ সেপ্টেম্বর। বাবা উইলবার ছিলেন কৃষক। মা, মার্গারেট ব্যস্ত থাকতেন ঘরসংসার নিয়ে। মার্গারেট ছিলেন ধর্মপ্রাণ ক্যাথলিক। তিন ভাইবোনের মধ্যে সবথেকে বড় ছিলেন হারল্যান্ড।
০৩১৭
হারল্যান্ডের বয়স যখন পাঁচ, হঠাৎই মারা যান তাঁর বাবা। আর গৃহবধূ থাকতে পারলেন না মার্গারেট। উপার্জনের জন্য বেরতে হল তাঁকে। ছোট দুই ভাইবোনকে দেখভালের দায়িত্ব পড়ল হারল্যান্ডের উপর। তাদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে নিজেই মাথা খাটিয়ে বের করলেন মাংস আর পাউরুটি দিয়ে চটজলদি রকমারি পদ।
০৪১৭
দু’বছরের মধ্যে হারল্যান্ড পাকা শেফ। দাদার হাতে তৈরি স্ন্যাক্স খুব পছন্দ করত খুদে দুই ভাইবোন। কিন্তু বেশি দিন এই একই জীবনে থাকতে পারলেন না হারল্যান্ড। বছর দশেক বয়সে তাঁকেও যেতে হল খামারবাড়িতে কাজ করতে। আরও দু’বছর পরে মার্গারেট আবার বিয়ে করলেন। কিন্তু তাঁর দ্বিতীয় স্বামী কিছুতেই মেনে নিতে পারলেন না মার্গারেটের প্রথম পক্ষের তিন সন্তানকে।
০৫১৭
সৎ বাবার অত্যাচারে বিরক্ত ও হতাশ হারল্যান্ড বাড়ি ছাড়লেন তেরো বছর বয়সে। চলে গেলেন ইন্ডিয়ানার অন্য প্রান্তে। মায়ের অনুরোধে আশ্রয় জুটল এক আত্মীয়ের বাড়িতে। শুরু হল নানা রকমের জীবিকা সংস্থান। কী করনেনি হারল্যান্ড! বাসের কন্ডাক্টর, সেনাবাহিনীতে চাকরি, রেল ইঞ্জিনে বেলচা দিয়ে কয়লা ফেলা, কয়লার ইঞ্জিনের ছাই সাফাইয়ের কাজ— বিচিত্র ভূমিকায় দেখা গিয়েছে হারল্যান্ডকে।
০৬১৭
জীবন সংগ্রামের মাঝেই জোসেফিনকে বিয়ে মাত্র ১৯ বছর বয়সে। জন্ম হয় এক ছেলে, দুই মেয়ের। পুত্রসন্তান শৈশবেই মারা যায় টনসিলের সংক্রমণে।
০৭১৭
রেলে চাকরির পাশাপাশি করেসপন্ডেন্স কোর্সে আইন প়ড়তে শুরু করলেন হারল্যান্ড। কিন্তু কাজের জায়গায় বিবাদের জেরে চলে গেল চাকরি। প্রভাব পড়ল সংসারেও। দুই মেয়েকে নিয়ে স্ত্রী জোসেফিন চলে গেলেন তাঁর বাবা মায়ের কাছে।
০৮১৭
বদমেজাজের জন্য বারবার পড়তে হয়েছে বিপাকে। আইন পাশ করে শুরু করলেন প্র্যাক্টিস। ভালই পসার জমেছিল। কিন্তু সেখানেও মক্কেলের সঙ্গে ঝামেলা। বন্ধ হয়ে গেল আইন প্র্যাক্টিস। বদমেজাজের জন্য ভাটা পড়েছিল মক্কেল-সংখ্যায়।
০৯১৭
আবার শুরু হল রকমারি পেশা। জীবনবিমায় ক’দিন কাজের পরে শুরু করলেন নিজের ফেরি সংস্থা। সেটাও বন্ধ করে আরম্ভ করলেন অ্যাসিটিলিন বাল্ব্ তৈরি। বন্ধ করে দিতে হল সেটাও। কারণ বাজারে এসে গেল ইলেকট্রিক বাল্ব্।
১০১৭
থিতু হতে পারছিলেন না কোনওমতেই। নানা রকম কাজের সূত্রেই হারল্যান্ড এলেন কেন্টাকিতে। সেখানেও কিছু দিন এ কাজ, সে কাজের পরে তেল সংস্থায় চাকরি। কাজের ফাঁকে শুরু করলেন শৈশবের শখ, রান্না করা। নতুন করে ঝালিয়ে নিলেন পুরনো রেসিপি। যেগুলো বানিয়ে ছোট ভাইবোনদের দিতেন খুদে হারল্যান্ড।
১১১৭
পরিচিতদের খাওয়াতে লাগলেন তাঁর তৈরি মাংস ভাজা। এরপর কেন্টাকির এক গ্যাস স্টেশনে, যেখানে তিনি কাজ করতেন, সাজিয়ে রাখলেন তাঁর তৈরি ফ্রায়েড চিকেন। খাবারের স্বাদ দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠায় তিনি এই ব্যবসাকেই গুরুত্ব দিলেন। ধীরে ধীরে ফ্রায়েড চিকেন বিক্রিই হয়ে উঠল তাঁর মূল ব্যবসা। তাঁর নতুন পরিচয় হল ‘কর্নেল অব কেন্টাকি’।
১২১৭
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য বন্ধ হয়ে গেল তাঁর ব্যবসা। কয়েক বছরের বিরতি। তারপর ১৯৫২ সালে আমেরিকার উটা-তে সাউথ সল্টলেক এলাকায় আত্মপ্রকাশ করল হারল্যান্ড স্যান্ডার্সের রেসিপিতে তৈরি মাংসভাজার দোকান। যেহেতু যাত্রা শুরু হয়েছিল কেন্টাকি থেকে, এর নাম হল, ‘কেন্টাকি ফ্রায়েড চিকেন’ বা ‘কেএফসি’।
১৩১৭
এই সাফল্যের পিছনে এক নারীর অবদান অনুঘটকের মতো কাজ করেছে। তিনি হারল্যান্ডের দোকানের কর্মী ক্লদিয়া। ১৯৪৭ সালেই প্রথম স্ত্রী জোসেফিনের সঙ্গে বিয়ে ভেঙে গিয়েছিল হারল্যান্ডের। তাঁর বাউন্ডুলেপনা মেনে নিতে পারেননি জোসেফিন। বিয়ে ভাঙার আগেই অবশ্য ক্লদিয়ার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন হারল্যান্ড।
১৪১৭
মূলত ক্লদিয়ার উৎসাহ আর অনুপ্রেরণায় পথ চলা শুরু করে কেএফসি। ক্লদিয়াকে ১৯৪৯ সালে বিয়ে করেন হারল্যান্ড। তবে কেএফসি নিয়েও বেশি দিন থাকতে পারেননি হারল্যান্ড। বেশি দিন কোনও কিছুই ভাল লাগত না তাঁর। একঘেয়ে লাগতে শুরু হওয়ায় ১৯৬৪ সালে বেচে দেন কেএফসি, ২ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে। চুক্তি হয়েছিল, লোগোতে তাঁর ছবি থাকবে এবং মোটা পারিশ্রমিক পাবেন।
১৫১৭
পরে তাঁর মনে হয়েছিল, কোম্পানির হাতবদলে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাঁর আরও বেশি অর্থ পাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু তত দিনে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। নতুন মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করেও সুবিধে করতে পারেননি তিনি।
১৬১৭
জীবন নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় মেতে থাকা কর্নেল অব কেন্টাকি, হারল্যান্ড ডেভিড স্যান্ডার্স প্রয়াত হয়েছিলেন ১৯৮০-র ১৬ ডিসেম্বর। শুধু আমেরিকার কেন্টাকি নয়, তাঁর আস্তিনে লুকিয়ে থাকা গোপন রেসিপিতে আজ পরম তৃপ্তিতে আঙুল চাটছে সারা বিশ্ব।
১৭১৭
যে রেসিপি নিয়ে তিনি বিশ্বজয় করেছিলেন, তার পিছনেও বিতর্ক। অভিযোগ, এক কৃষ্ণাঙ্গ মহিলার রেসিপি চুরি করেছিলেন হারল্যান্ড। ওই মহিলার পরিচয় কোথাও ‘মিস চাইল্ড্রেস’, কোথাও আবার ‘মিসেস চাইল্ড্রেস’। এক বিজ্ঞাপনের ছবি ঘিরে জোরালো হয় বিতর্ক। বলা হয়, ইনিই সেই রন্ধনশিল্পী, যাঁর তৈরি ফ্রায়েড চিকেনের রেসিপি চুরি হয়েছিল। তবে এই অভিযোগের পক্ষে বা বিপক্ষে, কোনও দিকেই প্রামাণ্য তথ্য নেই।