অভিষেেকর পরে বাকিংহাম প্রাসাদের বারান্দায় রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলা। ছবি: রয়টার্স।
গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে রানি দ্বিতীয় এলিজ়াবেথের মৃত্যুর পরেই উত্তরাধিকার সূত্রে রাজা হয়েছিলেন। তবে রাজপাট দখলের আনুষ্ঠানিকতাটুকু বাকি ছিল। অবশেষে প্রায় আট মাস পরে আজ ব্রিটেন ও ১৪টি কমনওয়েলথভুক্ত দেশের রাজা হিসাবে অভিষেক হল তৃতীয় চার্লসের। ৭৪ বছর বয়সি তৃতীয় চার্লসই ব্রিটেনের রাজপরিবারের ইতিহাসে প্রবীণতম হিসাবে অভিষিক্ত হলেন। আজ তাঁর পরনে ছিল সারকোট, লাল জ্যাকেট এবং নৌ বাহিনীর ট্রাউজ়ার্স। অনুষ্ঠানের বিভিন্ন পর্বে চার রকম রোব ছিল চার্লসের পরনে। ক্যামিলা সোনার সুতোয় কাজ করা সাদা গাউন পরেছিলেন।
আজ ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবিতে চার্লস বলেন, “সেবা পেতে নয়, সেবা করতে এসেছি।” তাঁর সেই মন্তব্যই যেন অনুষ্ঠানের সুর বেঁধে দেয়। লন্ডনে আজ সকাল থেকে বর্ষণমুখর আবহাওয়া থাকলেও তাতে অভিষেক অনুষ্ঠান ঘিরে সাধারণ মানুষের উৎসাহে এতটুকুও ভাটা পড়েনি। বাকিংহাম প্যালেস থেকে রাজা তৃতীয় চার্লস এবং কুইন কনসর্ট ক্যামিলাকে নিয়ে শোভাযাত্রা ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবিতে যাওয়ার সময়ে ‘মল’ ও ট্রাফালগার স্কোয়্যারের ১.২ মাইল জুড়ে রাস্তার দু’পাশে ছিল সারি সারি মাথা। তাঁদের উদ্দেশে হাত নেড়ে অভিবাদন জানান চার্লস-ক্যামিলা।
স্থানীয় সময় সকাল ১১টার মধ্যেই প্রায় ১০০টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান-সহ বিশিষ্ট জনেরা ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবিতে পৌঁছে গিয়েছিলেন। শেষ বার রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠান হয়েছিল ৭০ বছর আগে। ১৯৫৩ সালের সেই বিশেষ দিনটিতে চার্লসের মা দ্বিতীয় এলিজ়াবেথের মাথায় উঠেছিল রাজমুকুট। তখন চার্লসের বয়স মাত্র চার বছর। এত দিন পরে ফের সেই অনুষ্ঠান ঘিরে সেজে উঠেছে ব্রিটেন। চলতি শতকের প্রথম রাজ্যাভিষেক আরও একটি ক্ষেত্রে নতুন কীর্তি স্থাপন করল। এই প্রথম সামাজিক মাধ্যমে উঠে এল রাজ্যাভিষেকের অনুষ্ঠান।
আজকের ঘণ্টা দুয়েকের অনুষ্ঠানে আর্চবিশপ অব ক্যান্টারবেরি রেভারেন্ড জাস্টিন ওয়েলবি চার্লসকে রাজা হিসেবে আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব নেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানোর পরে বাইবেল ছুঁয়ে শপথ নেন তৃতীয় চার্লস। তাঁর মাথায় রাজমুকুট পরিয়ে আর্চবিশপ বলেন, “ঈশ্বর রাজা চার্লসকে রক্ষা করুন।” উপস্থিত অতিথি-অভ্যাগতেরাও নতুন রাজার জন্য প্রার্থনা করেন। এর পরেই রাজা তৃতীয় চার্লসকে পরানো হয় সেন্ট এডওয়ার্ডস ক্রাউন। কুইন মেরির মুকুট ওঠে ক্যামিলার মাথায়। বিতর্ক এড়াতে সেই মুকুট থেকে খুলে ফেলা হয় কোহিনুর। তার পরিবর্তে মুকুটে লাগানো দক্ষিণ আফ্রিকার কালিনান হিরের দ্যুতি যেন অনুষ্ঠানের আভিজাত্যেরই পরিপূরক। প্রথা ভেঙে এই প্রথম জনসমক্ষে অভিষিক্ত হলেন তিনি। মুকুট পরেই একে অপরের পাশে বসেন চার্লস-ক্যামিলা। এর পরে চলে সঙ্গীত ও প্রার্থনা।
মূলত খ্রিস্টীয় রীতি অনুসরণ করে রাজ্যাভিষেক হলেও বিভিন্ন ধর্মের উপস্থিতি অনুষ্ঠানকে অন্য মাত্রা দেয়। চার্লস আগেই নির্দেশ দিয়েছিলেন, আধুনিক ব্রিটেন যে বিভিন্ন সম্প্রদায় ও নানা ধর্মের মানুষের দেশ, তা তুলে ধরতে অ-খ্রিস্টানদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা দেওয়া হবে রাজ্যাভিষেকে। সেই মোতাবেক হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, শিখ, ইহুদি-সহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা রাজাকে সমর্থন জানান। প্রসঙ্গত আজ বাইবেল থেকে পাঠ করেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক। যিনি হিন্দু ধর্মাবলম্বী। এত দিন এই কাজের দায়িত্বে ছিলেন বিশপ। স্ত্রী অক্ষতা মূর্তির সঙ্গে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবি-তে এসেছিলেন সুনক।
অনুষ্ঠান শেষে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবির ঘণ্টা বেজে উঠতেই গোল্ড স্টেট কোচ-এ চেপে শোভাযাত্রা করে বাকিংহাম প্রাসাদে ফেরেন চার্লস ও ক্যামিলা। তাঁদের ঘিরে ছিলেন চার হাজার কর্মী। তার মধ্যে ছিলেন ব্রিটেনের পাশাপাশি কমনওয়েলথভুক্ত কয়েকটি দেশের প্রতিনিধিও। চার্লস-ক্যামিলার প্রাসাদে ফেরার সময়ের শোভাযাত্রায় চার্লসের বোন রাজকুমারী অ্যান একটি ঘোড়ায় চেপে রাজদম্পতিকে অনুসরণ করেন। শোভাযাত্রায় একটি গাড়িতে ছিলেন যুবরাজ উইলিয়াম, তাঁর স্ত্রী ক্যাথরিন ও তাঁদের তিন সন্তান। আর একটি গাড়িতে ছিলেন চার্লসের ভাই এডওয়ার্ড, তাঁর স্ত্রী সোফি ও তিন সন্তান। তৃতীয় একটি গাড়িতে ছিলেন ডিউক ও ডাচেস অব গ্লস্টার।
বাকিংহাম প্রাসাদে পৌঁছে বারান্দায় এসে দাঁড়ান রাজদম্পতি। সেখানেও তাঁদের মাথায় ছিল মুকুট। বারান্দায় রাজদম্পতির সঙ্গে ছিলেন উইলিয়াম-কেট ও তাঁদের সন্তানেরা, সপরিবার এডওয়ার্ড ও অ্যান। তবে অনুষ্ঠানে থাকলেও বারান্দায় দেখা মেলেনি চার্লসের ছোট ছেলে হ্যারির। রাজ্যাভিষেক শেষ হতেই লস অ্যাঞ্জেলেসের উদ্দেশে রওনা হন তিনি। রাজাকে অভিবাদন জানায় বায়ুসেনার বিমান। আজ রাজ্যাভিষেকে উপস্থিত ছিলেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ, আমেরিকার ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন, ইউক্রেনের ফার্স্ট লেডি ওলেনা জ়েলেনস্কা, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো-সহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানেরা। ছিলেন ভারতের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ও।
তবে, চার্লসের শোভাযাত্রা যাওয়ার পথে রাজকীয় অনুষ্ঠানের বিরোধিতা করে প্রতিবাদে শামিল হন অনেকে। ট্রাফালগার স্কোয়্যারের কাছে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড পরে জানায়, আজ রাজ্যাভিষেক উপলক্ষে মোতায়েন করা হয়েছিল সাড়ে ১১ হাজার পুলিশকর্মী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy