প্রথম বার কম্পনের পরেই শুক্রবার দুপুরে খালি করে দেওয়া হয়েছিল তাইল্যান্ডের ব্যাঙ্ককের হাসপাতালগুলি। কয়েক জন রোগীকে স্ট্রেচারে শুইয়ে, কয়েক জনকে হুইলচেয়ারে বসিয়ে হাসপাতাল থেকে বার করে আনা হয়েছিল সামনের পার্কে। সেই পরিস্থিতিতে ব্যাঙ্ককের পুলিশ হাসপাতালের সামনে স্ট্রেচারে শুয়ে সন্তানের জন্ম দিলেন এক তরুণী। তাঁকে ঘিরে থাকলেন চিকিৎসক এবং নার্সেরা। হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে, মা এবং সন্তান দু’জনেই সুস্থ রয়েছেন। তাঁরা এখন হাসপাতালে ভর্তি।
শুক্রবার দুপুরের ভূমিকম্পের উৎসস্থল ছিল মায়ানমার। তার আঁচ এসে পড়েছিল তাইল্যান্ডেও। প্রথম বারের কম্পনের পরে বেশ কয়েক বার ‘আফটারশক’-এও কেঁপে ওঠে ওই অঞ্চল। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম বার কম্পনের পরেই ব্যাঙ্ককের বিএনএইচ হাসপাতাল এবং কিং চুলালংকর্ন হাসপাতাল থেকে রোগীদের বাইরে বার করে আনা হয়। পুলিশ হাসপাতাল থেকেও রোগীদের বাইরে বার করে আনা হয়েছিল। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম বার কম্পনের সময় প্রসূতির অস্ত্রোপচার চলছিল। পুলিশ লেফটেনান্ট কর্নেল জিরামরিট জানান, চিকিৎসকেরা দ্রুত তখনকার মতো অস্ত্রোপচার শেষ করে স্ট্রেচারে ওই মহিলাকে হাসপাতালের সামনের রাস্তায় নিয়ে যান। সেখানেই ১০ মিনিটের মধ্যে অস্ত্রোপচারের বাকি প্রক্রিয়া শেষ করেন। খোলা আকাশের নীচে অস্ত্রোপচারে সংক্রমণের ভয় ছিল বলে জানান জিরামরিট। তবে সুষ্ঠু ভাবেই গোটা প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। হাসপাতালের মুখপাত্র সিরিকুল শ্রীসাঙ্গা জানিয়েছেন, মা এবং সন্তান দু’জনেই সুস্থ রয়েছেন।
এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে সন্তানজন্মের কিছু ভিডিয়ো প্রকাশ করা হয়েছে (আনন্দবাজার ডট কম তার সত্যতা যাচাই করেনি)। সেই ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, হাসপাতালের সামনে রাস্তায় স্ট্রেচারে শুয়ে রয়েছেন বহু রোগী। কিছু রোগী হুইলচেয়ারে বসে রয়েছেন। চিকিৎসক এবং নার্সেরা খোলা রাস্তা ও পার্কেই তাঁদের পরিষেবা দিচ্ছেন। কারও হাতে রয়েছে স্যালাইনের নল। কারও মুখে অক্সিজেনের মাস্ক। তার মাঝেই স্ট্রেচারে শুয়ে সন্তানের জন্ম দিচ্ছেন এক তরুণী। তাঁকে ঘিরে রয়েছেন চিকিৎসক, নার্সেরা।
আরও পড়ুন:
তাইল্যান্ডের স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই পুলিশ হাসপাতালে ভূমিকম্প পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ছিল না। আগুন লাগলে যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, ভূমিকম্পের পরেও সেই একই পদক্ষেপ করা হয়েছিল ব্যাঙ্ককের ওই হাসপাতালটিতে। সেই কারণে রোগীদের চটজলদি হাসপাতাল থেকে বাইরে বার করে এনে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ খোলা জায়গায় রাখা হয়েছিল। রোগীদের অবস্থার কথা বিবেচনা করে তাঁদের লাল, হলুদ এবং সবুজ জ়োনে ভাগ করে রাখা হয়েছিল। যাঁদের অবস্থা সঙ্কটজনক, তাঁদের লাল জ়োনে (সবচেয়ে নিরাপদ খোলা জায়গা) রাখা হয়েছিল। সেখানে রেখেই তাঁদের চিকিৎসা চলছিল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই পরিস্থিতিতে রাস্তাতেও তাঁদের জরুরি পরিষেবা চালু ছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের দল হাসপাতাল বিল্ডিংয়ে গিয়ে তা পরীক্ষা করে দেখেন। তার পরেই আবার সেখানে রোগীদের ফেরানো হয়।
ভূমিকম্পের জেরে সবচেয়ে বেশি বিপর্যয় হয়েছে মায়ানমারে। সেখানে মৃতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। ব্যাঙ্ককে একটি নির্মীয়মাণ বাড়ি ধসে আটকে পড়েছিলেন শতাধিক মানুষ। সেখানে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে।