সেই থাম লুয়াং ন্যাং গুহা। -ফাইল চিত্র।
আটকে পড়া ১২ জন ফুটবলার ও কোচকে ভালয় ভালয় বের করে আনলেও তাইল্যান্ডের থাম লুয়াং ন্যাং গুহায় শেষমেশ খুব বিপদে পড়ে গিয়েছিলেন ডুবুরি উদ্ধারকারীরা। তাঁদেরই প্রাণ সংশয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল।
সেটা হয়েছিল অভিযানের শেষ পর্বে জলের পাম্প বিগড়ে যাওয়ায়। তাই তুমুল বৃষ্টিতে জলে টইটম্বুর গুহা থেকে জল বের করে আনা সম্ভব হচ্ছিল না। গুহার ভেতরে দ্রুত ওপরে উঠছিল জলের স্তর। তা ডুবুরিদের মাথা ছাড়িয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে গিয়েছিল ডুবুরিদের। কিন্তু বাইরে তুমুল বৃষ্টি আর ভেতরে জলের তোড়ে ডুবুরিদের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের মাস্ক পাঠানো সম্ভব হচ্ছিল না তাইল্যান্ডের থাম লুয়াং ন্যাং গুহায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সাঁতরে আর বাইরে থেকে পাঠানো দড়ি ধরে গুহার বাইরে বেরিয়ে আসতে পেরেছিলেন উদ্ধারকারীরা।
অভিযানের নেতা কম্যান্ডার চাইয়ানান্তা পিরানারাং সংবাদ সংস্থা এএফপি-কে এই কথা জানিয়েছেন। পিরানারাংই সবার শেষে গুহা থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন।
পিরানারাং বলেছেন, সমস্যাটা শুরু হয় আটকে পড়া তাই ফুটবল দলের শেষ ৪ জন ফুটবলার আর কোচকে গুহা থেকে বের করে আনার পরপরই। ওই সময়েই বিগড়ে যায় জলের পাম্প। তার ফলে গুহার দু’টি প্রকোষ্ঠের মধ্যে থেকে কিছুতেই জল টেনে বের করে আনা যাচ্ছিল না। অথচ তখন তুমুল জোরে বৃষ্টি হওয়ায় গুহায় হু হু করে জল ঢুকছিল। আর গুহার ভেতর জলের স্তর বাড়ছিল লাফিয়ে লাফিয়ে। গুহার ওই দু’টি প্রকোষ্ঠে ছিলেন তখন অন্তত জনাকুড়ি উদ্ধারকারী।
আরও পড়ুন- রুদ্ধশ্বাস অভিযান সফল! তাইল্যান্ডে গুহা থেকে মুক্ত সকলেই
আরও পড়ুন- গুহা থেকে উদ্ধারের কাজে ভারতীয় প্রযুক্তি
ওই সময় পিরানারাং শোনেন, ভেতর থেকে এক অস্ট্রেলিয় ডুবুরি চিৎকার করে বলছেন, তাড়াতাড়ি অক্সিজেনের মাস্ক গুহায় পাঠাতে। কয়েক জন উদ্ধারকারীর কাছে ডাইভিং গিয়ারও ছিল না বলে জানিয়েছেন পিরানারাং।
তিন দিনের অভিযান চালিয়ে গত মঙ্গলবার তাইল্যান্ডের গুহা থেকে সকলকেই জীবিত ও সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে তাই সেনাবাহিনীর নেতৃত্বাধীন বহুদেশীয় বিশেষ উদ্ধারকারী দল।
গত ২৩ জুন গুহা অভিযানে গিয়ে আটকে পড়েছিলেন তাইল্যান্ডে ‘ওয়াইল্ড বোরস’ ফুটবল দলের ১২ জন কিশোর ফুটবলার ও তাঁদের কোচ। তুমুল বৃষ্টিতে গুহাটি জলমগ্ন হয়ে যাওয়াতেই তাঁরা আটকে পড়েছিলেন। ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ গুহায় তাঁরা যেখানে ছিলেন, আর গুহার প্রবেশপথ, এই দুইয়ের মাঝের অংশ জলমগ্ন হয়ে যাওয়াতেই তাঁরা বাইরে আসতে পারছিলেন না।
ফুটবল দলটিকে উদ্ধার করতে আন্তর্জাতিক ভাবেও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল তাইল্যান্ড সরকারকে। গত সপ্তাহে ব্রিটিশ ডুবুরিরা দেখতে পান, গুহার ভেতরে জলকাদায় মাখামাখি হয়ে জড়সড় হয়ে আটকে আছেন ফুটবল দলের সদস্য ও তাঁদের কোচ।
তবে লাগাতার বৃষ্টিতেও আটকে থাকেনি উদ্ধারকাজ। গুহার ওপর দিয়ে একটি দড়ি নিয়ে যাওয়া হয় গুহার অন্য প্রান্তে, যেখানে আটকে ছিলেন ফুটবলাররা। এর পর ফুটবলার পিছু দুজন করে ডুবুরিকে কাজে লাগানো হয়। সামনে এক জন ও পেছনে আরেক জন। তাঁরা এক এক করে বাইরে নিয়ে আসেন ফুটবলারদের। ১৮ দিন লাগাতার গুহায় থাকার জন্য শারীরিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন ফুটবলাররা।
গত শুক্রবার উদ্ধার কাজ চালানোর সময় গুহায় অক্সিজেন সিলিন্ডার রাখতে গিয়ে মারা যান এক ডুবুরি সামার্ন কুনান। স্বামীর মৃত্যুতে গভীর শোকপ্রকাশ করেও কুনানের স্ত্রী গুহা থেকে বের হয়ে আসা ফুটবলারদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘‘ওঁর জন্য তোমরা নিজেদের দোষী ভেব না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy