‘জয়পুর লিটারেচার ফেস্টিভ্যাল’ প্রতি বছরই সমসাময়িক রাজনৈতিক, সামাজিক নানা চিন্তার কথা তুলে ধরে। নিজস্ব চিত্র।
দক্ষিণ এশিয়ায় যেন আবার ইউক্রেন পরিস্থিতি না দেখা দেয়!
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে অন্য কোনও দেশের কী ভূমিকা রয়েছে, তা নিয়ে জল্পনার শেষ নেই। চিনের সঙ্গে রাশিয়ার ‘আঁতাত’ কি প্রভাব ফেলবে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের পারস্পরিক সম্পর্কে, সে চিন্তাও চরমে। যুদ্ধের গতি যত বদলাচ্ছে, এ নিয়ে চিন্তাও গড়াচ্ছে নানা দিকে। আর এর মধ্যেই ভারত ও তার পার্শ্ববর্তী দেশগুলির উপরে যুদ্ধ পরিস্থিতির প্রভাব নিয়ে আলোচনায় বসলেন বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা। ক্ষমতা নিয়ে যত টানাপড়েন উপমহাদেশে, তা এক দিন আবার গড়াবে না তো ইউক্রেনের মতো কাণ্ডে! চিন্তা উড়ে এল আলোচনাসভায়।
‘জয়পুর লিটারেচার ফেস্টিভ্যাল’ প্রতি বছরই সমসাময়িক রাজনৈতিক, সামাজিক নানা চিন্তার কথা তুলে ধরে। কখনও চর্চিত হয় এনআরসি বিল, কখনও বা ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক। এ বছরও তার বিকল্প ঘটেনি। সাহিত্য, শিল্প, সংস্কৃতি নিয়ে যেমন আড্ডায় মেতেছেন বহুজনে, তেমনই সে সব আলোচনার মাঝে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা করে নিয়েছে ইউক্রেন পরিস্থিতি।
সমাজের উপর যুদ্ধের প্রভাব কী ভাবে পড়ে, তা নিয়ে আলোচনা চলছেই। আর সে সূত্রে বার বার উঠছে ইউক্রেন পরিস্থিতির কথা। তবে আলোচনা আটকে থাকছে না শুধু রাশিয়া আর ইউক্রেনে। যেমন দক্ষিণ এশিয়ার সামগ্রিক রাজনৈতিক অবস্থান ও ইউক্রেনের সমস্যা নিয়ে কথা গড়াল পাকিস্তানে ভারতের প্রাক্তন হাই কমিশনার টিডিএ রাঘভন, পর্তুগালের কূটনীতিক ও লেখক ব্রুনো মাসেই, চিনে ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত বিজয় কেশব গোখেল, বাংলাদেশের লেখক ও সাংবাদিক মেহফুজ আনম এবং সাংবাদিক ও লেখক জ্যোতি মলহোত্রের মধ্যে। এ যুদ্ধ ভারত-চিনের সম্পর্ক কোথায় নিয়ে যাবে, সে চিন্তা ঘুরেফিরে জায়গা করে নিল শ্রোতাদের মনেও।
মেহফুজ যেমন মনে করেন, ইউক্রেনে আটকে পড়ে যত ভারতীয় পড়ুয়া হেনস্থা হয়েছেন, ততটাই চিনের সঙ্গে নতুন করে দূরত্ব বেড়েছে ভারতের। তিনি বলেন, ‘‘এ যেন আমেরিকার সাজানো এক পরিস্থিতি। চিনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাশিয়ার। সেই রাশিয়া যুদ্ধে নেমেছে। যার জেরে আটকে পড়েন ভারতীয় পড়ুয়ারা। এই যুদ্ধ ভারত-চিনের সম্পর্ক আরও একটু তিক্ত করেছে। ফলে ভারত ও আমেরিকা আর একটু কাছাকাছি এসেছে।’’
ইউক্রেন পরিস্থিতি যে ভারতকে ঠেলতে পারে আমেরিকার দিকে, তা মানছেন জ্যোতিও। তবে এই পরিস্থিতিকে ততটাও একমুখী বলে মনে করেন না তিনি। বরং এই যুদ্ধ থেকে ভারত কিছু শিক্ষা নেবে বলেই আশা তাঁর। তবে জ্যোতির বক্তব্য, ‘‘ভারত যতই শিক্ষা নিক না কেন, গোটা দক্ষিণ এশিয়ার পারস্পরিক সম্পর্ককে তা কোনও ভাবেই সাহায্য করবে না।’’ বরং বাদবাকি দেশগুলির সঙ্গে যেমন কমবেশি টানাপড়েন চলতে থাকে, তেমনই চলবে বলে চিন্তার সুর জ্যোতির কণ্ঠে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘দক্ষিণ এশিয়ায় আমরা সময়ের নিরিখে পিছনের দিকে হাঁটছি। একটি যুদ্ধ আমাদের আসলে তেমন কিছু শেখাতে পারে না। না হলে কার্গিল যুদ্ধের পরপরও যখন ভারত-পাক বর্ডার খোলা ছিল, তার কুড়ি বছর পর দু’দেশের মধ্যে এমন ভাবে যাতায়াত বন্ধ কেন?’’ যত দিন না দু’টি দেশের মানুষের মধ্যে স্বাভাবিক আদান-প্রদান চালু হবে, তত দিন দক্ষিণ এশিয়া শান্তিপূর্ণ থাকবে না বলেই মনে হয় জ্যোতির।
আর এখানেই ইউরোপের সঙ্গে উপমহাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ফারাক বলে মনে করেন পর্তুগালের ব্রুনো। বলেন, ‘‘ইউক্রেনের সঙ্গে জার্মির যা দূরত্ব, তার চেয়ে অনেকটা বেশি দূরত্ব জার্মানি আর পর্তুগালের মধ্যে। তবু রাজনৈতিক ভাবে পর্তুগাল ইউরোপের কাছে। ফলে একটি বর্ডার কখনও কোনও দুই দেশের যোগসূত্র হতে পারে না।’’ আর এ ভাবেই উপমহাদেশকে নিজেদের পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন করছেন দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে নিয়মিত চর্চায় যুক্ত ব্রুনো।
তবে বর্ডার না পারুক, আয়তন অনেক কিছুই পারে। এমনকী, শান্তিও। যেমন আয়তনের নিরিখে বৃহত্তর দেশ ভারত সব ক’টি দেশের মধ্যে সম্পর্ক ধরে রাখতে পারে। আর তার জন্যই দরকার চিনের সঙ্গে ভারতের সুস্থ কূটনৈতিক আঁতাত। পাকিস্তান ও চিনে কাজ করা দুই কূটনীতিক এ বিষয়ে এক মত। চিনের সঙ্গে সম্পর্কের উপর নির্ভর করবে আগামীর ভারত-পাক বোঝাপড়া। আর সেখানে ফাটল ধরলেই চিড় দেখা দেবে উপমহাদেশের কূটনীতিক পরিস্থিতির নানা কোণে। গোটা অঞ্চলের শান্তি রক্ষায় যে ভাবে নেতৃত্ব প্রয়োজন ভারতের, তা থাকার সম্ভাবনা কমবে।
এক কথায় বলতে গেলে, ইউক্রেনের যুদ্ধের উপর অনেকটাই নির্ভর করছে ভারত ও উপমহাদেশের নানা দেশের শান্তি, এটাই বক্তব্য কূটনীতিকদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy