Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Memory

Memory boosting activities: ব্রেন অ্যারোবিকস: স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর মোক্ষম অস্ত্র

শরীরের অন্য অঙ্গের মতোই খেয়াল রাখতে হয় মস্তিষ্কেরও। তার জন্য রয়েছে সহজ কিছু নিয়ম।

মস্তিষ্ককে না খাটিয়ে খাটিয়ে এই হাল করলেন!

মস্তিষ্ককে না খাটিয়ে খাটিয়ে এই হাল করলেন!

সুজাতা মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০২২ ০৬:৫৪
Share: Save:

কিচ্ছু মনে থাকে না? নাম-ধাম-ঘটনা, কোথায় চাবি কোথায় চশমা? ঘরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে ভেবে কূল পান না কী জন্য এসেছিলেন? আর ভাবেন, এ নিশ্চয়ই ডিমেনশিয়ার সূত্রপাত৷ এ বার অ্যালঝাইমার্স এল বলে! পরিবারে কারও ছিল কি না খুঁজে বেড়ান৷ বা মানসিক চাপ, হাইপোথাইরয়েড কি ডায়াবিটিসের উপর দোষ চাপিয়ে নিজে ঝাড়া হাত-পা হয়ে যান৷ কিন্তু ভুলেও ভাবেন না যে, নিজের দোষেই এমনটি হল৷ মস্তিষ্ককে না খাটিয়ে খাটিয়ে এই হাল করলেন! আর তাতে সঙ্গত দিল আজন্ম কালের কিছু বদভ্যাস৷

ভাবছেন, ব্রেন তো ২৪ ঘণ্টাই খাটছে, তাকে আলাদা করে আর কী খাটানোর আছে!

আছে৷ শরীরের কথা ধরুন, হাঁটা-চলা, শোওয়া-বসা, নাওয়া-খাওয়া করেন বলে কি আলাদা করে ব্যায়াম না করলে শরীর ফিট থাকে? কিছু অসুখে তো ব্যায়ামই প্রধান ওষুধ৷ মস্তিষ্কেও তাই৷ মনে রাখার সুতোগুলিকে টান টান করে রাখতে গেলে মস্তিষ্কের ব্যায়াম করে যেতে হয়৷ যাকে বলে ব্রেন জিম বা মেন্টাল অ্যারোবিকস৷ যেমন নতুন কিছু পড়া বা শেখা, লেখালিখি বা হবির চর্চা করা, খেলা, নাচ-গান করা, জটিল হিসেব-নিকেশ করা বা কিছু মেন্টাল গেম খেলা৷ কম বয়সে এ সব নিজে থেকেই হয় বলে মনে রাখা নিয়ে খুব একটা সমস্যা হয় না৷ বয়স বাড়লে হাজার কাজের চাপে তা হয় না৷ তার সঙ্গে মানসিক চাপ বাড়ে, ঘুম কমে যায়, নানা অসুখ-বিসুখ এসে হাজির হয়, মস্তিষ্কে পড়ে বয়সের ছাপ৷ সবে মিলে মনে রাখার কোষেদের গায়ে মরচে পড়তে থাকে৷

ভাবছেন, এই মুহূর্ত থেকেই মরচে সাফ করবেন? করতে পারেন৷ তবে মনে রাখবেন, ব্রেন অ্যারোবিকস কিন্তু শরীরের ব্যায়ামের মতো না৷ বছরের পর বছর এক ব্যায়াম করলে হয় না৷ ব্রেনকে খাটাতে হয় নতুন নতুন পথে৷ নতুন কৌশল শিখতে হয়৷ প্রতিকূলতার মুখে ফেলে সমাধানের রাস্তা খুঁজতে হয়৷ তবেই স্মৃতিশক্তি বাড়ে৷ অ্যালঝাইমারের আশঙ্কা কমে ৭০ শতাংশের মতো৷

মস্তিষ্কে পড়ে বয়সের ছাপ৷

মস্তিষ্কে পড়ে বয়সের ছাপ৷

কীভাবে করবেন

১। নানা স্বাদের বই পড়ুন৷ সকালে স্বাস্থ্যসম্পর্কিত কিছু পড়লে, দুপুরে পড়ুন রহস্য কিংবা বিনোদন কিংবা হাসির গল্প৷ বিকেলে যুদ্ধের খবর পড়লে রাতে রোম্যান্টিক গল্প পড়ুন৷ এক দিন কম্পিউটার নিয়ে পড়লে, অন্য দিন পড়ুন মনস্তত্ত্ব— এ রকম৷ এতে এক এক সময়ে ব্রেনের এক এক অংশ উদ্দীপিত হয়ে পুরো মস্তিষ্কের ওয়ার্কআউট হবে৷ পড়তে পড়তে খেই হারিয়ে গেলে, বয়স হলে যা হয় বা পড়ামাত্র ভুলে গেলেও চিন্তা নেই৷ নিজের উপর বেশি জোর খাটাবেন না৷ যখন যেটা পড়তে ইচ্ছে করছে, পড়ে যান, এক পাতা বা আধপাতা হলেও কাজ হবে৷

২। মাঝেমাঝে জোরে জোরে পড়ুন৷ শব্দগুলি কানে ঢুকলে বেশি ভাল কাজ হবে৷ বা পড়ার পর কারও সঙ্গে আলোচনা করুন৷ বাচ্চাদের গল্প পড়ে শোনাতে পারেন৷ স্মৃতি থেকে বললে আরও ভাল৷

৩। নতুন ভাষা শিখতে পারেন৷ যে ভাবে বাচ্চারা শেখে৷ পড়ে, শুনে, বলা প্র্যাকটিশ করে৷ এক এক সময় মস্তিষ্কের এক এক অংশে উদ্দীপনা ছড়াবে৷ স্মৃতিশক্তি বাড়বে৷ ভাল থাকবে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য৷

৪। লেখালিখি শুরু করুন৷ সে কবিতা হোক বা গদ্য৷ রোজনামচা হোক বা প্রবন্ধ৷ নতুন প্লট ও শব্দের খোঁজে মস্তিষ্কের এ মাথা ও মাথা তোলপাড় করে ব্যায়াম হবে৷ মাঝেমাঝে বন্ধুবান্ধব মিলে স্বরচিত গল্প-কবিতা পাঠের আসর বসাতে পারলে তো কথাই নেই৷

৫। কোনও হবি থাকলে তার চর্চা করুন মন দিয়ে৷ তা সে ছবি আঁকা হোক বা সেলাই করা, রান্না করা হোক বা ঘর সাজানো, বাগান করা হোক বা সমাজ সেবা করা৷ যে কাজে আনন্দ পাবেন, সে কাজে ব্রেনও বেশি সক্রিয় থাকবে৷

৬। গান-বাজনা শুনুন৷ গলা ছেড়ে গান করুন৷ কথা ভুলে গেলেও গেয়ে যান৷ আস্তে আস্তে কথাগুলি মনে পড়বে৷ এতে ব্রেনের ব্যায়াম হবে, কমবে মানসিক চাপ৷ স্মৃতিশক্তি বাড়বে৷ গান বা বাজনা কিছু একটা শিখতে পারলে আরও ভাল৷

৭। হাঁটু-কোমরের অবস্থা বুঝে নাচের ক্লাসে যোগ দিন৷ মন ভাল হবে, শরীরের ব্যায়াম হবে আর সেই সুবাদে অক্সিজেনের জোগান বেড়ে তরতাজা হবে মস্তিষ্ক, নতুন ধাপ শেখার মাধ্যমে মস্তিষ্কেরও ব্যায়াম হবে৷ একই কারণে খেলাধুলাও করতে পারেন৷ এর পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে কিছু মস্তিষ্কের খেলাম খেলুন৷

ব্রেন গেম

১। বাজারের ফর্দ লিখবেন না৷ মনে মনে আওড়াতে থাকুন৷ প্রথম দিকে ১০টার মধ্যে ৫টা হয়তো সময়ে মনে পড়বে না৷ কিন্তু এই পদ্ধতি চালিয়ে গেলে এক সময় দেখবেন ভুলের হার কমছে৷

২। ৩-৪ জন মিলে মেমোরি গেম খেলতে পারেন৷ প্রত্যেকে একটি করে জিনিসের নাম বলুন, সঙ্গে আগের জনেরা যে যে নাম বলেছেন সেগুলিও বলতে হবে৷ খেলা যত এগোবে তত নামের সংখ্যা বাড়বে৷ এই খেলা সিনেমার নাম, ফুল-ফল বা, কোনও জায়গা বা নাম দিয়েও খেলতে পারেন৷

৩। শব্দজব্দ সমাধান করুন৷ একা বা কয়েকজন মিলে৷ পুরোটা করতে না পারলে টেনশন করবেন না৷ মিলেমিশে করলে যে মজা ও উদ্দীপনা পাবেন, তাতেই স্মৃতিশক্তি বাড়বে৷ বাড়বে যুক্তিবোধ৷ সুদোকু করলে বা দাবা খেললেও একই উপকার পাবেন৷

৪। অনলাইনে অনেক ব্রেন ট্রেনিং অ্যাপ আছে, কিছু পয়সার বিনিময়ে সে সবও খেলতে পারেন৷ এর পাশাপাশি জীবনযাপনের সামান্য কয়েকটি নিয়ম মেনে চলতে পারলে, কাজ হবে একশোয় একশো৷

জীবনযাপনের নিয়ম

১। ভাল করে ঘুমান৷ দিনে ৬-৯ ঘণ্টা ভাল ঘুম হলে ভেসে বেড়ানো স্মৃতিগুলি একত্রিত হয়ে দীর্ঘস্থায়ী হয়৷ মানসিক চাপ কমে যায়৷ সে বাবদেও স্মৃতিশক্তির উন্নতি হয়৷

২। নিয়মিত ব্যায়াম করুন৷ দেখা গেছে সপ্তাহে ৩ ঘণ্টা ব্যায়াম করলে মস্তিষ্কে অক্সিজেনের জোগান বেড়ে মাত্র ৬ সপ্তাহে স্মৃতিশক্তির উন্নতি হয়৷ মানসিক চাপ কমে বলেও কাজ হয়৷

৩। সোজা হয়ে বসুন৷ চলাফেরাও করুন শিরদাঁড়া সোজা রেখে৷ ব্রেন বেশি অক্সিজেন পাবে৷

৪। পছন্দের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলুন৷ দিনে অন্তত মিনিট দশেক হালকা চালে গল্পগুজব করলে স্মৃতিশক্তির ওপর ভাল প্রভাব পড়ে বলে জানা গেছে৷

৫। হাসির অনুষ্ঠান দেখুন৷ হাসির বই পড়ুন৷ লাফিং ক্লাবেও যেতে পারেন৷

৬। এমন ভাবে খাওয়া-দাওয়া করুন যাতে সঠিক পুষ্টি হয় অথচ ওজন না বাড়ে, শরীর সুস্থ থাকে৷

৭। কোনও ক্রনিক অসুখ-বিসুখ থাকলে চিকিৎসা করে তাকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন৷

অন্য বিষয়গুলি:

Memory Activity brain
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy