আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ছবি রয়টার্স।
আফগানিস্তান থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়াটা আমেরিকার ‘সেরা সিদ্ধান্ত’ বলে জানালেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এ-ও জানালেন, এই সিদ্ধান্তের সম্পূর্ণ দায়িত্ব তিনি নিজে নিচ্ছেন।
আজ জাতির উদ্দেশে বক্তৃতায় বাইডেন বলেন, ‘‘আমার বিশ্বাস, এটা নির্ভুল, বিচক্ষণ এবং সেরা সিদ্ধান্ত। আমেরিকানদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, যুদ্ধ শেষ করব। তাকে সম্মান করেছি। এই যুদ্ধটা অনন্তকাল চালিয়ে যেতে আমি প্রস্তুত ছিলাম না। এই সিদ্ধান্তের (সেনা সরানোর) দায়িত্ব আমি নিচ্ছি। কেউ কেউ বলবেন এটা আরও আগে শুরু হওয়া উচিত ছিল। তাতে অবশ্য আমি একমত নই।’’
বাইডেন জানান, দু’টো রাস্তা সামনে ছিল— হয় আফগানিস্তান থেকে চলে আসা অথবা পরিস্থিতি আরও খারাপ করে তোলা। সাধারণ নাগরিক, সামরিক বাহিনীর কর্তা, উপদেষ্টা এবং যুদ্ধক্ষেত্রে থাকা কম্যান্ডারদের সর্বসম্মতির ভিত্তিতেই সেনা সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমেরিকা। যে আমেরিকানরা আফগানিস্তান ছাড়তে চেয়েছিলেন, তাঁদের ৯০ শতাংশকেই সরিয়ে আনা গিয়েছে। এখনও দেশ ছাড়তে ইচ্ছুক আফগানদের দিকে তাঁরা সহযোগিতার হাতই বাড়িয়ে দেবেন। বাইডেন জানিয়েছেন, সেনা সরানো হলেও আফগানিস্তান এবং অন্যান্য দেশে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমেরিকার লড়াই চলবে। আইএস-কে জঙ্গিদের হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘তোমাদের শিক্ষা দেওয়া এখনও শেষ হয়নি। আমেরিকা ভুলবেও না, ক্ষমাও করবে না।’’
বাইডেনের প্রতিশ্রুতি মতো নির্দিষ্ট সময়সীমা পেরোনোর আগেই আফগানিস্তান ছেড়ে চলে গিয়েছে আমেরিকার সেনা। এত কম সময়ের মধ্যে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কঠিন ও বৃহত্তম উদ্ধার অভিযানের জন্য সেনাবাহিনীর ঢালাও প্রশংসা করেছেন প্রেসিডেন্ট। তাঁর বক্তব্য, এত কম সময়ের মধ্যে প্রায় এক লক্ষ কুড়ি হাজার আমেরিকান নাগরিককে উদ্ধার করে আনা মোটেও সহজ কাজ ছিল না। পেশাদারিত্বের চূড়ান্ত নিদর্শন দেখিয়েছে আমেরিকান বাহিনী।
সেনার প্রশংসা শোনা গিয়েছে আমেরিকার প্রতিরক্ষাসচিব লয়েড অস্টিনের গলাতেও। তিনিও বলেছেন, ‘‘অন্য কোনও দেশের সেনাবাহিনীর পক্ষে এত কম সময়ে এই কাজ করা সম্ভব ছিল না। আমার চার দশকের কর্মজীবনে এই সময়ের মধ্যে এত বিরাট মাপের উদ্ধার অভিযান আমি দেখিনি।’’ তালিবানকে কড়া বার্তা দিয়েছেন আমেরিকান বিদেশসচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। আফগানিস্তান থেকে আমেরিকান সেনা প্রত্যাহারের পরেই তিনি বলেছেন, ‘‘সরকারের স্বীকৃতি পেতে গেলে সেটা তালিবান নেতৃত্বকে অর্জন করতে হবে। নিজেদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখতে হবে। গোটা বিশ্বকে দেখাতে হবে যে, আফগানিস্তানে মেয়েদের বা সংখ্যালঘুদের অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে না।’’
ব্লিঙ্কেন জানিয়েছেন, সামরিক মিশন শেষে আপাতত আফগানিস্তান থেকে সব রকমের কূটনৈতিক মিশনও সরিয়ে নিচ্ছেন তাঁরা। পরিবর্তে কাতারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাঁদের কূটনৈতিক মিশন। মোটামুটি ভাবে দেশের বেশির ভাগ নাগরিককে আফগানিস্তান থেকে উদ্ধার করা সম্ভব হলেও এখনও সে দেশে দু’শোর একটু কম সংখ্যক আমেরিকান রয়ে গিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ব্লিঙ্কেন। তাঁরা দেশে ফিরতে চাইলে তাঁদেরও ফেরানো হবে বলে জানিয়ে রেখেছেন ব্লিঙ্কেন।
এ ভাবে হুড়োহুড়ি করে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করায় বাইডেন প্রশাসনকে অবশ্য বিঁধতে ছাড়েননি প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর কথায়, ‘‘বিশ্বের ইতিহাসে এত খারাপ ভাবে কোনও যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশ থেকে সেনা প্রত্যাহার আমি দেখিনি।’’ আমেরিকান সেনার ফেলে আসা হেলিকপ্টার, সাঁজোয়া গাড়ি ও অস্ত্রশস্ত্র অবিলম্বে আফগানিস্তান থেকে উদ্ধার করা প্রয়োজন বলেও জানিয়েছেন ট্রাম্প। তাঁর বক্তব্য, ‘‘প্রয়োজনে ওগুলো ধ্বংস করে দিক বাইডেন প্রশাসন।’’
গত কাল গভীর রাতে আমেরিকান সেনা আফগানিস্তান ছাড়লেও বাহিনীর একটা বড় অংশ এখন পাকিস্তানে রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সে দেশে বিতর্ক শুরু হয়েছে। প্রাক্তন পাক প্রেসিডেন্ট পারভেজ় মুশারফ নেটো বাহিনীকে সে দেশে ঘাঁটি তৈরির অনুমতি দিয়েছিলেন। ইমরান খানের সরকারও সে পথে হাঁটছে বলে হইচই শুরু করেছে কট্টরপন্থী বিরোধী দলগুলি। তবে ইমরানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ রশিদ আহমেদ বিরোধীদের আশ্বস্ত করে জানিয়েছেন, আমেরিকান সেনাদের সাময়িক ট্রানজ়িট ভিসা দেওয়া হয়েছে। তারা পাকিস্তানে স্থায়ী ভাবে থাকবে না। মন্ত্রীর কথায়, ‘‘মুশারফ জমানা আর ফিরবে না পাকিস্তানে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy