সরকারের শিরদাঁড়া প্রশাসন। বেঁকলে মচকালে গোলমাল, ভাঙলে অথর্ব। প্রশাসন সোজা রাখার লক্ষ্য সব দেশের সরকারের। তাদের ওপর ভর করেই দেশ গড়ার কাজ। বাধা আসে সেখানেই। নুয়ে পড়া প্রশাসনে জেরবার হয় সরকার। দু’য়ে দু’য়ে চারের জায়গায় ফল হয় শূন্য। নিশ্চিত সাফল্যেও বিফল হওয়ার যন্ত্রণা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেটা জানেন বলেই শান দিতে চান প্রশাসনে। সেখানে কোনও দুর্বলতা মানতে রাজি নন। নীচ থেকে উপর ইস্পাতের মতো ঝকঝক করুক প্রশাসনিক কাঠামো। সৎ স্বচ্ছ দক্ষ প্রশাসন দেশের অহঙ্কার। রাজনৈতিক দল ভোটে জিতে সরকার গঠন করে। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে পরিকল্পনা নেয়। কাজের দায়িত্বটা চাপিয়ে দেয় প্রশাসনের কাঁধে। তারা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে দায় চাপে সরকারের ঘাড়ে। মানুষের কাছে জবাবদিহি করতে হয় সরকারকে, প্রশাসনকে নয়।
সরকারি কর্মচারীদের নিয়েই প্রশাসন। শীর্ষে সচিব। একবারে নিচে গ্রুপ ‘ডি’ স্টাফ। মাঝে করণিকরা। কেউ কম নয়। সবাই সমান তালে না চললে প্রশাসন বিগড়োবে। টেবিল থেকে ফাইল নড়বে না। আঠারো মাসে বছর হলেও তাদের পোষাবে না। আরও সময় চাইবে। কোনও কোনও দফতর হয়ত ঘুমিয়েই পড়বে। ডেকে ডেকেও জাগানো যাবে না। অনেক কষ্টে চোখ খুললেও আগে তারা ক্যালেন্ডারের দিকে তাকাবে, ছুটির দিনগুলো মগজে গেঁথে নিতে। আলস্যে দিন গড়াবে। কাজ শিকেয় উঠবে। অপদার্থ প্রশাসন যে কোনও সরকারের কাছেই অভিশাপ।
সদ্য কাজে যোগ দেওয়া সিভিল ক্যাডারদের সতর্ক করে হাসিনা বলেছেন, ‘নিজে কোনও দুর্নীতিতে জড়াবেন না। দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেবেন না।’ সত্যিই তো! দুর্নীতি ক্যান্সারের মতো। ক্ষুদ্র আকারে দেহে প্রবেশ করে ধীরে ধীরে সমস্ত দেহে ছড়িয়ে পড়ে। বাঁচায় সাধ্য কার।
দুর্নীতি থেকে দূরে রাখতে সব থেকে বড় কাজটা করেছেন হাসিনা। বেতন কাঠামোর পুনর্বিন্যাসে সরকারি কর্মচারীদের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন। এখন নিচু তলার কর্মীও বলতে পারবে না, ঘুষ খাচ্ছি পেটের দায়ে। উপরি টাকা না পেলে সংসার চলে না। সংসার সচ্ছ্বল না হওয়ার আর কোনও কারণ নেই। তারপরেও কালো টাকার দিকে ছুটলে ক্ষমা নেই। অন্যায়ের শাস্তি বিধানে হাসিনা যে কঠোর সেটা ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছেন। ভাল কথায় কাজ না হলে কড়া তো হতেই হবে।
সংবিধানের ২১(২) ধারা স্মরণ করিয়ে দিয়ে হাসিনা বলেছেন, সিভিল সার্ভিসের প্রত্যেক সদস্যের দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের সেবায় সর্বোত্তম প্রয়াস চালিয়ে যাওয়া। মানুষের একনিষ্ঠ সেবক হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করা। সিভিল সার্ভিসের গোড়ার কথা তো এটাই। শুধুমাত্র চাকরির জন্য চাকরি নয়। সেবাব্রতটাই বড় কথা। একই সঙ্গে হাসিনার উল্লেখযোগ্য উক্তি, আইনের শাসন বজায় রাখতে সিভিলিয়ানদের সতর্ক থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে কোনও আপোষ চলবে না।
তাঁর আরও স্পষ্ট কথা, আমরা থাকি পাঁচ বছর। আপনাদের কর্মজীবন দীর্ঘদিনের। সেখানে গাফিলতিতে যে কোনও সরকারকে অনেক বেশি মূল্য দিতে হয়। সরকার পাল্টায়, আপনারা বদলান না। কাজের ধারায় পরিবর্তন আনা কঠিন হয়ে পড়ে। হাসিনা বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত করতে চাইছেন। নড়বড়ে প্রশাসন নিয়ে সেটা সম্ভব নয়। লক্ষ্যে পৌঁছতে আরবি ঘোড়ার দৌড় দরকার। র্যাট রেস নয়।
আরও পড়ুন:
জল বাঁচাও বাংলাদেশ, নইলে বিপদ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy