রাস্তায় আগুন জ্বলছে বাংলাদেশের চট্টগ্রামে। ছবি: রয়টার্স।
আন্দোলনকারীদের ‘এক দফা এক দাবি’র ধাক্কায় প্রধানমন্ত্রিত্ব, এমনকি দেশ ছেড়েও পালিয়েছেন শেখ হাসিনা। কিন্তু তার পরেও হিংসায় লাগাম পরানো যায়নি। সোমবারও যথেচ্ছ হামলা, অগ্নিসংযোগ, পিটিয়ে মারার ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশে। শুধু সোমবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তাতে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১০৯ জনের! বিশেষ করে হামলার শিকার হয়েছেন হাসিনার দল আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রী-পদাধিকারীরা। কাউকে পিটিয়ে মারা হয়েছে। কারও বাড়ির দরজা বন্ধ করে অগ্নিসংযোগ করেছেন হামলাকারীরা। আওয়ামী লীগের এক সাংসদের বিলাসবহুল বহুতল হোটেলেও আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাতে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে অন্তত ২১ জনের। বাংলাদেশের ওই নৈরাজ্য রুখতে এই মুহূর্তে ভরসা সোনাবাহিনীই। তবে অনেকেই মনে করছেন, পরিস্থিতি যে দিকে এগোচ্ছে, তাতে সেনাবাহিনীকে গোটাটা সামলাতে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে।
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ জানিয়েছে গত ১৬ জুলাই থেকে ২১ দিনে প্রায় সাড়ে চারশো জনের মৃত্যু হয়েছে বাংলাদেশে। এর মধ্যে শুধু সোমবারে মৃত্যু হয়েছে ১০৯ জনের। তার আগের দিন, অর্থাৎ রবিবার মৃত্যু হয়েছিল ১১৪ জনের। অর্থাৎ, শেষ দু’দিনে মৃতের সংখ্যা প্রায় আড়াইশো ছুঁই ছুঁই। বিভিন্ন সূত্র থেকে সোমবার যে ধরনের খবর এবং হিংসার ছবি প্রকাশ্যে এসেছে তাতে শিউরে উঠেছেন বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিকেরা।
পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে আওয়ামী নেতাকে
খুলনায় আওয়ামী লীগের উপজেলা সভাপতি জি এম মোহসিন রেজাকে তাঁর বাড়িতে ঢুকে পিটিয়ে মারে বিক্ষুব্ধ জনতা। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ জানিয়েছে, সোমবার বিকেলে রেজার বাড়িতে চড়াও হন হামলাকারীরা। সেখানেই তাঁকে পিটিয়ে মেরে তাঁর বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। আগুনে পুড়েও যায় তাঁর দেহ। পরে তাঁর খুড়তুতো ভাই বলেন, ‘‘সন্ধ্যায় আমরা ভাইয়ের বাড়িতে গিয়ে দেখি বাড়িতে দাউ দাউ আগুন জ্বলছে। ঘরের বারান্দায় পড়ে রয়েছে তাঁর মৃতদেহ।’’ আওয়ামী লীগের সাংসদ শফিকুল ইসলামের নাটোরের বাড়িতেও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল। মঙ্গলবার সেখান থেকে উদ্ধার হয়েছে তিন জনের মৃতদেহ। এর মধ্যে আকিব হোসেন নামে ১৭ বছরের এক তরুণও রয়েছে। সে নাটোর সিটি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিল। তাঁর বাবা ছিলেন ওই কলেজের অধ্যক্ষ। যশোরের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহিন চাকলাদারের হোটেলেও আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। ওই হোটেলে আগুনে পুড়ে বিদেশি-সহ ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। ‘প্রথম আলো’ জানাচ্ছে, সোমবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বাংলাদেশের অন্তত ৯ জন মন্ত্রী এবং অন্তত ২৭ জন সাংসদের বাড়িতে ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। ঢাকায় দেশের প্রধান বিচারপতির বাসভবনে ঢুকেও হামলা চালায় বিক্ষুব্ধ জনতা। তার কিছু ক্ষণ আগেই তিনি বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ায় হামলার হাত থেকে রক্ষা পান। পাবনায় ডেপুটি স্পিকার শামসুল হকের বাড়িতেও ভাঙচুর চালানো হয়।
জেলায় জেলায় মৃত্যুমিছিল
সোমবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বাংলাদেশের জেলায় জেলায় নিরন্তর চলেছে হামলা। বিশেষ করে বিকেলের পরে ওই হামলা ক্রমাগত বাড়তে থাকে। দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামান বাংলাদেশের আন্দোলনকারীদের শান্ত হওয়ার ডাক দেন। কিন্তু তাতে হামলায় রাশ টানা যায়নি। বরং বেড়েছে। সাভারে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের গুলি সংঘর্ষে ১৮ জন নিহত হয়েছেন। উত্তরাতেও চলেছে গুলি। থানা ঘেরাওকে কেন্দ্র করে পুলিশ এবং বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের। কুষ্টিয়ায় পুলিশের সঙ্গে গুলি সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছে ছ’ জনের। বানিয়াচংয়ে পুলিশের গুলিতে আরও ছ’জনের মৃত্যু হয়েছে। শ্রীপুরে বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বিজিবির সদস্যদের দু’টি বাসে হামলা এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। যার জেরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বিজিবির গুলি সংঘর্ষে মৃত্যু হয় পাঁচ জনের। গুলিবিদ্ধ হয় শতাধিক। চুয়াডাঙা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়কের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তেরা। আগুন নেভানোর পরে বাড়ির ভিতর থেকে চার জন পুরুষের বিকৃত হয়ে যাওয়া দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। চাঁদপুরে অভিনেতা শান্ত খান এবং তাঁর বাবা সিনেমার প্রযোজক সেলিম খানকেও পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
আক্রান্ত পুলিশ
বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছে পুলিশেরও। যাত্রাবাড়ী থানার সামনে পুলিশের সঙ্গে জনতার গুলি সংঘর্ষে অন্তত ১০-১৫ জনের মৃত্যু হয়। এঁদের মধ্যে তিন জনের পরনে পুলিশের পোশাক ছিল। রবিবারও বাংলাদেশের ১৩ জন পুলিশকে হত্যার অভিযোগ উঠেছিল দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ জানাচ্ছে, পুলিশের সদর দফতর-সহ ২০টি থানায় হামলা চালানো হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকার ১৩টি থানা এবং ঢাকার বাইরে ৭টি থানায় হামলা চালানো হয়েছে। হামলার জেরে বহু থানা ফাঁকা করে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন পুলিশকর্মীরা। সেই সব শূন্য থানায় দুষ্কৃতীরা লুটপাট চালাচ্ছে বলেও সূত্রের খবর।
আক্রান্ত সংখ্যালঘুরাও, তাঁদের রক্ষা করার ডাক
বিভিন্ন সূত্রে খবর পাওয়া গিয়েছে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের উপরেও হামলা হয়েছে সোমবার। অনেক জায়গায় বাড়িতে ঢুকে লুটপাট চালানো হয়েছে। ভাঙচুরও চালিয়েছে দুষ্কৃতীরা। তবে ধর্মীয় প্রতিনিধিরা সকলকে সংযত হওয়ার ডাক দিয়েছেন। সংখ্যলঘুদের সক্রিয় ভাবে রক্ষা করার কথাও বলেছেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy