শেখ হাসিনা। —ফাইল চিত্র।
বাংলাদেশে কোটা আন্দোলনকে সামনে রেখে অশান্তির ফলে কত মানুষের প্রাণহানি হয়েছে, সরকার এখনও তা জানাতে পারেনি। এই প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল রবিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের কাছে একটা সংখ্যার কথা বলেছেন। তিনি বলেন, “প্রাথমিক ভাবে আমাদের কাছে গোলমালে নিহতের একটা সংখ্যা এসেছে, সেটা ১৪৭। পরে সংখ্যাটি বাড়তে পারে।” মন্ত্রী জানান, এই ১৪৭ জনের মধ্যে ছাত্র, পুলিশ, সাংবাদিক, পথচারী, হকার-সহ নানা পেশার মানুষ রয়েছেন। এ দিন বিদেশ মন্ত্রকের একটি বিবৃতিতেও ১৪৭ জনের প্রাণহানির উল্লেখ করা হয়েছে।
পাশাপাশি বেসরকারি ভাবে আর একটি তালিকা মানবাধিকার কর্মীদের তরফে প্রকাশ করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে তালিকাটি করা হয়েছে। এই তালিকায় ১৬-১৯ তারিখে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা জানানো হয়েছে ২৬৬। কোন হাসপাতালে কবে কোন সময়ে তাঁরা কী কারণে (গুলি, মারধর বা কোপানোয়) মারা গিয়েছেন, তার পূর্ণ বিবরণ তালিকায় প্রকাশ করা হয়েছে।
এ দিনই বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রক একটি দীর্ঘ বিবৃতিতে বাংলাদেশের পরিস্থিতি বর্ণনা করেছে। প্রধাণত অন্য দেশের কূটনীতিকদের কাছে এই বিবৃতিটি বিলি করা হয়েছে। সেখানে বিক্ষোভ ও নাশকতাকে বিএনপি এবং তাদের মৌলবাদী শরিক দল জামাত-ই-ইসলামির ‘সরকার পতনের অপচেষ্টা’ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিরোধী দলের নাশকতাকারী ও দুষ্কৃতীরা আন্দোলন হাইজ্যাক করে আগুন লাগানো, ভাঙচুর ও লুটপাট শুরু করার পরে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে ওঠে। পুলিশকে আক্রমণ ও
খুনের একাধিক ঘটনা ঘটে। বিদেশ মন্ত্রক বিবৃতিতে দাবি করেছে, এই নাশকতার মূল উদ্দেশ্য ছিল সরকারের পতন ঘটানো। এই উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ টেলিভিশনের দফতর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। বিমানবন্দর দখলের চেষ্টা হয়। মেট্রোরেল ও কয়েকটি বাছাই করা সরকারি অফিসে আগুন দেওয়া হয়। এই ‘দুর্যোগের দিনে’ আন্তর্জাতিক মহল যে ভাবে বাংলাদেশে সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছে, তার জন্য ধন্যবাদ জানানো হয়েছে।
শাসক দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ দিন দাবি করেছেন, নাশকতার পরিকল্পনাকারীদের লক্ষ্য ছিল হিংসাত্মক জনতাকে প্রধানমন্ত্রীর দফতর ‘গণভবন’-এ ঢুকিয়ে দেওয়া। তা হলে শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি তৈরি করা যেত। কাদের বলেন, “এই পরিকল্পনাকারীদের কাউকে ছাড়া হবে না।” কাদেরের কথায়, দেশের সঙ্কট এখনও কাটেনি। জামাত-ই-ইসলামি ও অন্য ডান-বাম দলগুলিকে নিয়ে সরকার পতনের এক দফা কর্মসূচিতে জাতীয় ঐক্য গঠনের ডাক দিয়েছে বিএনপি। তারা ফের নতুন করে গোলমাল পাকাতে চাইছে।
বিরোধী বিএনপি-র ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল রবিবার অভিযোগ করেছে, মধ্যরাতে তাদের নেতা-কর্মীদের বাড়িতে ঢুকে গণগ্রেফতার করা হচ্ছে। পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন করা হচ্ছে তাদের। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের একটি সংগঠন ইউট্যাব-ও বিভিন্ন পেশার মানুষকে ঢালাও গ্রেফতারের নিন্দা ও প্রতিবাদ করেছে।
২০ জুলাই ভোর থেকে কার্ফু জারির পাশাপাশি দেশের সর্বত্র সরকার সেনা মোতায়েন করার পরেই বাংলাদেশে অশান্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এ দিন সেনাবাহিনীর পক্ষে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, সমাজমাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে নানা মিথ্যা অভিযোগ প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু তাতে ক্ষান্ত না হয়ে সেনাবাহিনী দেশের শান্তিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে অসামরিক প্রশাসনকে সাহায্য করবে। নাশকতাকারীদের বিষয়ে মানুষকে সতর্ক করে সেনাবাহিনী বলেছে, আপাতত রাজপথেই থাকছে তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy