Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪

ইমরানে লাভই দেখছেন ভারতের গোয়েন্দারা

ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী হলে ভারতের লাভ না লোকসান, শুরু হয়ে গিয়েছে সেই মূল্যায়ন। র-এর প্রাক্তন বাঙালি কর্তা রানা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিমত, ইমরান গদিতে বসলে তিনি হবেন পাক সেনার ‘রোবট’। সেটা এক দিক থেকে ভারতের জন্য শাপে বর হতে পারে।

ছবি: রয়টার্স।

ছবি: রয়টার্স।

জয়ন্ত ঘোষাল
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৮ ০৩:১৩
Share: Save:

পাকিস্তানের ভোটের পূর্ণ ফলাফল জানা যাবে কাল। কিন্তু আজ সারা দিন ধরে তোলপাড় চলল দিল্লির নর্থ ব্লক-সাউথ ব্লকে। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল দফায় দফায় রিপোর্ট নিচ্ছেন র’ এবং আইবি-র কাছ থেকে। ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী হলে ভারতের লাভ না লোকসান, শুরু হয়ে গিয়েছে সেই মূল্যায়ন। র-এর প্রাক্তন বাঙালি কর্তা রানা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিমত, ইমরান গদিতে বসলে তিনি হবেন পাক সেনার ‘রোবট’। সেটা এক দিক থেকে ভারতের জন্য শাপে বর হতে পারে।

কারণ? গোয়েন্দাদের একটা বড় অংশ মনে করেন, ইমরানের সরকার কার্যত সেনার নিয়ন্ত্রণাধীন সরকার হবে। গণতন্ত্র থাকবে শুধু নামেই। সে ক্ষেত্রে মূলত নওয়াজ় শরিফের পুরনো ভোটব্যাঙ্ক পাক ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে ও সার্বিক ভাবে দেশের আর্থিক উন্নয়নের স্বার্থেও অস্থিরতা চাইবে না সেনা। বরং সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে রাখার দায় থাকবে সেনার উপরেই।

নরেন্দ্র মোদীর শপথে এসেছিলেন নওয়াজ় শরিফ। তার পরে একাধিক বৈঠক হয় দুই নেতার। নওয়াজ়ের মেয়ের বিয়েতেও প্রোটোকল ভেঙে গিয়েছিলেন মোদী। কিন্তু ভারতের কোনও কথাই রাখেনি পাক সেনা। গোয়েন্দাদের অনেকের মতে, ইমরান ক্ষমতায় এলে সেনার সঙ্গেই সরাসরি কথা বলার চেষ্টা করতে পারে দিল্লি।

ভোটার: লাহৌরের ভোটকেন্দ্রে পিএমএল(এন) নেতা শাহবাজ় শরিফ। ছবি: এএফপি।

কূটনীতিকদের একটা বড় অংশ যদিও বলছেন, সেনাবাহিনীর শাসন যদি এত ভালই হয়, তা হলে নির্বাচনের প্রহসন কেন? আদালত থেকে আইএসআই, সবই তো সেনার নিয়ন্ত্রণে। ২০১৩ সালে যখন সন্ত্রাসবাদ চরমে, তখন পাক ভোটে নামানো হয়েছিল ৭০ হাজার সেনা। আর আজকের ভোটে ৩ লক্ষ ৭০ হাজার সেনা! পাক নির্বাচন কমিশন সেনা অফিসারদের ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দিয়েছিল। ফলে বুথে ঢুকে ভোট প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের ছাড়পত্র ছিল তাঁদের। ভোট পর্যবেক্ষণের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতি বার এক মাসেরও বেশি আগে পাকিস্তানে পৌঁছয়। এ বার তাদের সেই অনুমতিই দেওয়া হয়েছে এক সপ্তাহ আগে।

আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর কুর্সি প্রায় হাতের মুঠোয় ইমরানের

গোয়েন্দারা বলছেন, ইমরান একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না-পেলে তাঁকে পিপিপি-র সঙ্গে সমঝোতা করতে বলতে পারে সেনা। ভোট প্রচারে পিপিপি নেতা আসিফ আলি জ়ারদারির দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে প্রচার করেছেন ইমরান। সরকার গড়তে জ়ারদারির সঙ্গে হাত মেলানোটা তাই অস্বস্তিকর। তবু ইমরান হয়তো তা-ও মেনে নেবেন বাধ্য হয়ে। নওয়াজ়ের দলকে রুখতে মরিয়া সেনা প্রথমে অবশ্য চাইবে, তেহরিক-এ-ইনসাফের সঙ্গে ছোট ছোট মুসলিম দল আর নির্দলদের মিলিয়ে সরকার গঠন করে নিতে! তাতে যদি না হয়, শেষ বিকল্প পিপিপি।

ভোট দেওয়ার পরে বেনজির ভুট্টোর দুই মেয়ে, বখতাওয়ার (সামনে) এবং আসিফা। সিন্ধুপ্রদেশের নবাব শাহ এলাকার একটি বুথে। বুধবার। ছবি: টুইটার।

গোয়েন্দারা তাই বলছেন, পুরোপুরি সেনাবাহিনীর শাসন বরং ভাল। গণতন্ত্রের নামাবলি জড়িয়ে এক দিকে আমেরিকা, অন্য দিকে সেনা, আইএসআই এবং মোল্লাতন্ত্রের চাপে নড়বড়ে পাক সরকারের সঙ্গে আদান-প্রদান করাটা ভারতের পক্ষেই কূটনৈতিক ভাবে জটিল হয়ে যায়! ভারতে কর্মরত পাক হাইকমিশনার সোহেল মেহমুদ বলেছেন, ‘‘পাক নির্বাচনে ভারত কোনও বিষয় নয়। এ বার ভারতও দেখল, এই ভোটে কোনও ভাবেই কাশ্মীর প্রসঙ্গ আসেনি।’’ গোটা বিষয়টিকে ইতিবাচক বলেই মনে করছে ভারত।

আরও পড়ুন: ‘ভোট দিন, হালুয়া-পুরি-কফি আপনার জন্য ফ্রি’​

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE