ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: পিটিআই।
উইসকনসিনের মিলওয়াকিতে যেখানে রিপাবলিকান দলের জাতীয় কনভেনশেন চলছে, তার অনতিদূরে, ১৯১২ সালে, গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট থিয়োডোর রুজ়ভেল্ট। ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো তিনিও হোয়াইট হাউসে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ট্রাম্পের মতো তিনিও প্রাণঘাতী হামলা থেকে বেঁচে ফিরেছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক জনসমীক্ষার যা ইঙ্গিত, তাতে দেশের ২৬তম ও ৪৫তম প্রেসিডেন্টের মধ্যে একটা বড় ফারাক তৈরি হতে চলেছে। সে বছর রুজ়ভেল্ট পুনর্নিবাচিত না হলেও এ বারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের দিকেই পাল্লা ভারী। বিশেষত শনিবারের হামলার পরে।
ডান কানে একটি চৌকো সাদা ব্যান্ডেজ। ব্যস ওইটুকুই। জাতীয় কনভেনশনে তাঁর দৃপ্ত ভঙ্গি, ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে তাঁর এককালের কট্টর সমালোচক জেমস ডেভিড ভান্সের নাম ঘোষণা, দাবি করা যে আমেরিকাকে ফের ‘গ্রেট’ বানাতে পারেন একমাত্র তিনিই, সমবেত জনগণকে ‘মেগা পেট্রিয়ট’ বা ‘প্রবল জাতীয়তাবাদী’ আখ্যা দেওয়া, সংবাদমাধ্যমকে ‘মিথ্যাবাদী’ বলে একহাত নেওয়া, তাঁকে ঘিরে সমবেত জনতার ‘ফাইট, ফাইট’ চিৎকার— এ সব দেখে বোঝা মুশকিল যে মাত্র তিন দিন আগে কান ঘেঁষে গুলি বেরিয়ে গিয়েছে ডোনাল্ড জন ট্রাম্পের।
রাজনীতি বিশ্লেষকেরা বলছেন, যাঁকে ‘ইম্পিচ’ করা যায় না, ‘দেউলিয়া’ করা যায় না, নির্বাচনে যোগদান থেকে ‘বিরত’ করা যায় না, এমনকি ‘হত্যা’-ও করা যায় না—সাধারণ জনগণের চোখে সেই ট্রাম্পের ‘দেবত্ব’ অর্জন করার সম্ভাবনাই এখন সব থেকে বেশি। এবং মিলওয়াকিতে ট্রাম্পকে ঘিরে রিপাবলিকান সমর্থকদের উচ্ছ্বাস দেখে তা-ই মনে হচ্ছে। আমেরিকাবাসী বঙ্গসন্তান অভিজিৎ হাজরার কথায়, “রাজনৈতিক দ্বিমতের জন্য কারওকে খুন করা, এটা কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। প্রতিপক্ষকে নির্বাচনে পরাজিত করে আমরা তার রাজনৈতিক মতাদর্শকে পরাজিত করতে পারি। কিন্তু মানুষটিকে হত্যা করতে গিয়ে আমরা সেই ব্যক্তিত্বকে আরও ‘অমর’ করে তুলি।’’ জর্জিয়াবাসী প্রতীক দত্তও মনে করেন, “শনিবারের ঘটনার পরে আমেরিকার একটা বিশাল অংশের মানুষ ‘ট্রাম্প ফিভার’-এ ভুগছেন।’’
এক দিকে ‘ট্রাম্প জ্বর’, অন্য দিকে ‘সাজানো ঘটনা’ বা ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব। ট্রাম্পের উপরে হামলা ঘিরে দু’শিবিরের বিতর্ক স্পষ্ট বুঝিয়ে দিচ্ছে যে, রাজনৈতিক মতাদর্শে বিভাজিত গোটা দেশ। পেনসিলভেনিয়ার বাসিন্দা স্যাম ঘোষ বললেন, “এই ঘটনায় এটাই প্রমাণিত হল যে, এ দেশের রাজনৈতিক বাতাবরণ কতটা দুষিত। জনসভা বা সমাজমাধ্যমে হুমকি বক্তব্যের ঘনঘটা, ‘অমুককে জেলে পুরব’, ‘ওকে শেষ করে দেব’! এই ধরনের মন্তব্য থেকে সরে আসা যে কতটা জরুরি তা ফের স্পষ্ট হয়ে গেল।’’ স্যাম আরও মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘এ বার আততায়ীর নিশানায় প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ছিলেন বলে বিষয়টি নিয়ে এত হইচই হচ্ছে। কিন্তু আমেরিকায় বন্দুক-হিংসা এখন একটা ব্যাধির আকার নিয়েছে। প্রতিটি প্রদেশে দিনে গড়ে ছ’জন বন্দুকের গুলিতে নিহত হচ্ছেন। ফলে ট্রাম্পের উপরে হামলার ঘটনা অনভিপ্রেত হলেও খুব আশ্চর্যজনক নয়।’’
বঙ্গতনয়া লোপা বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করেন, ‘‘আমেরিকার ইতিহাসে রাষ্ট্রনেতাদের উপরে প্রাণঘাতী হামলার ঘটনা নতুন নয়। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের উপরে এই হামলা অত্যন্ত দুঃখজনক। আততায়ী ছাড়াও এক জন নিহত হয়েছেন, দু’জন জখম। দুঃখজনক ভাবে, আমরা যেন ব্যথার প্রতি সংবেদনশীল হয়ে উঠছি।’’
ওয়াশিংটন থেকে সুজাতা দাসের জরুরি প্রশ্ন, ‘‘এই ঘটনাই বলে দেয় যে, অ্যাসল্ট রাইফেল ব্যবহারের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা কতটা জরুরি। দেশের প্রাক্তন প্রেসিডেন্টও যখন এর ভুক্তভোগী, তখন সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy