54 years ago student of nursing Lupe Hernandez invented hand sanitizer dgtl
corona virus
এই বিস্মৃত তরুণীর বুদ্ধিতেই ৫৪ বছর আগে জন্ম নিয়েছিল হ্যান্ড স্যানিটাইজার
লুপির মনে হয়েছিল, হাতের কাছে সাবান এবং গরম জল না থাকলে তার বিকল্প হতে পারে অ্যালকোহল। তাঁর মাথায় আসে, যদি অ্যালকোহলকে থকথকে জেল-এর আকারে পেশ করা যায়, তা হলে কেমন হয়?
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২০ ১০:২১
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৪
করোনাত্রাসের পরিবেশে হ্যান্ড স্যানিটাইজার এখন অন্যতম ত্রাতা। কয়েক মাস আগেও নির্মাতা সংস্থা বা বিক্রেতারা ভাবতে পারেননি, রাতারাতি এর চাহিদা আকাশছোঁয়া হয়ে যাবে। কিন্তু জানেন কি, অর্ধশতক আগেও এর অস্তিত্বই ছিল না!
০২১৪
তার আগে হাত পরিষ্কার রাখার জন্য মানুষের প্রধান ভরসা ছিল সাবান-জল। কিন্তু হাসপাতালের কাজের মধ্যে সবসময় সাবান আর জল দিয়ে হাত পরিষ্কার সম্ভব হচ্ছিল না। তা ছাড়া, কাজটি অনেক সময়সাপেক্ষ বলেও মনে হয়েছিল নার্সিংয়ের ছাত্রী লুপি হার্নান্ডেজের।
০৩১৪
জন্মসূত্রে লাতিন আমেরিকান এই তরুণীর মনে হয়েছিল, এমন কিছু জিনিস যদি থাকত, যাতে চটজলদি হাত পরিষ্কার করে নেওয়া যায়! জল বা সাবান অপ্রতুল হলেও ব্যস্ততার মধ্যে যাতে হাত জীবাণুমুক্ত করা যায়, লুপির মূল লক্ষ্য ছিল সেটাই। এই প্রয়োজন থেকেই জন্ম নিল হ্যান্ড স্যানিটাইজার।
০৪১৪
আজ যে হ্যান্ড স্যানিটাইজার উঠে এসেছে প্রয়োজনের তালিকার শীর্ষে, তার আবিষ্কারক সেবিকা-ই আজ বিস্মৃত। এমনকি তাঁর সম্বন্ধে খুব বেশি তথ্যও পাওয়া যায় না।
০৫১৪
১৯৬৬ সালে লুপি নার্সিংয়ের ছাত্রী ছিলেন আমেরিকার বেকার্সফিল্ড শহরে। আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে লস অ্যাঞ্জেলস থেকে ১০০ মাইল উত্তরে বেকার্সফিল্ড শহরের নামকরণ কর্নেল টমাস বেকারের নামে। উনিশ শতকে তিনি এই অঞ্চলে বসতি শুরু করেছিলেন। তাঁকে অনুসরণ করে এখানে জনবসতি বাড়ে।
০৬১৪
ফলে বেকারের এলাকা বোঝাতেই ‘বেকার্স ফিল্ড’। জ্বালানি তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস ও কৃষিতে সমৃদ্ধ এই শহরেই আবিষ্কৃত হয়েছিল স্যানিটাইজার। যাকে সাম্প্রতিক পরিস্থিতির বিচারে বৈপ্লবিক আবিষ্কার হিসেবে বলা-ই যায়।
০৭১৪
লুপির মনে হয়েছিল, হাতের কাছে সাবান এবং গরম জল না থাকলে তার বিকল্প হতে পারে অ্যালকোহল। তাঁর মাথায় আসে, যদি অ্যালকোহলকে থকথকে জেল-এর আকারে পেশ করা যায়, তা হলে কেমন হয়?
০৮১৪
নিজের ভাবনাকে বাস্তবায়িত করতে তিনি যোগাযোগ করেন এমন সংস্থার সঙ্গে, যারা পেটেন্টের ব্যাপারে সাহায্য করে। টেলিভিশনের এক অনুষ্ঠানে তিনি তাদের সন্ধান পেয়েছিলেন। তাদের মাধ্যমেই পেটেন্ট নথিভুক্ত করেন লুপি।
০৯১৪
চুয়ান্ন বছর আগে লুপি ভাবতেও পারেননি তাঁর আবিষ্কার একদিন জীবাণুআতঙ্কে ত্রস্ত পৃথিবীর কাছে অন্ধের যষ্টি হয়ে দেখা দেবে। তবে প্রথমদিকে কিন্তু আমজনতার মধ্যে আদৌ পরিচিত ছিল না এর ব্যবহার। হ্যান্ড স্যানিটাইজার তখন মূলত ছিল ডাক্তার, নার্স-সহ জনস্বাস্থ্য বিভাগ সংক্রান্ত লোকজনের ব্যবহার্য জিনিস।
১০১৪
ক্রমে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের প্রচলন শুরু হয় মার্কিন সেনাবিভাগে। আমেরিকা ও ইউরোপে আমজনতার মধ্যে এর ব্যবহার দ্রুত হারে বৃদ্ধি পায় ২০০৯-এ। এইচ ওয়ান এন ওয়ান সংক্রান্ত মহামারির সময়।
১১১৪
মুক্ত অর্থনীতির জমানায় ভারতীয় বাজারে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের পরিচিত হতে সময় লাগেনি। ধীরে ধীরে মহিলাদের হ্যান্ডব্যাগে অত্যাবশ্যকীয় হয়ে উঠল হ্যান্ড স্যানিটাইজার। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে এর ব্যবহার অনেক বেশি।
১২১৪
তবে করোনাভাইরাসের অতিমারির আগে শহরের নির্দিষ্ট শ্রেণির মধ্যেই সীমিত ছিল এর প্রচলন। প্রাণনাশের আতঙ্ক একে রাতারাতি সর্বসাধারণের মুঠোবন্দি করে তুলেছে।
১৩১৪
করোনার দৌলতে বিশ্ববাজারে লিকুইড সাবান এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজারের চাহিদা বেড়েছে ৪০০ শতাংশ। তবে স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা এখনও বলেন, জীবাণুমুক্ত করার বিষয়ে যে কোনও সাবানের তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে সান্দ্র স্যানিটাইজার।
১৪১৪
কিন্তু জল ছাড়া তো আর সাবান ব্যবহারের উপায় নেই। তাই যেখানে জল নেই, সেখানে স্যানিটাইজার বিকল্পহীন। ফলে এর অজ্ঞাত ও বিস্মৃত আবিষ্কারক নতুন করে উঠে এসেছেন আলোচনায়। অর্ধশতক আগের এক নার্সিংয়ের ছাত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতায় নতজানু জীবাণুত্রস্ত একুশ শতকের আধুনিক বিশ্ব।
(ছবি: আর্কাইভ, সোশ্যাল মিডিয়া, শাটারস্টক)