Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

কৃষ্ণাঙ্গদের কথা কোথায়, মিছিলে প্রশ্ন কিশোরীর

নিজের ক্লাসের ৬০ জন বন্ধুবান্ধবকে নিয়ে জর্জ ম্যাসন এলিমেন্টারি স্কুলে গত ১৪ মার্চ ‘ওয়াকআউট’-এর নেতৃত্ব দিয়েছিল নেওমি ওয়াডলার। গত শনিবারও ১১ বছরের এই মেয়ে ওয়াশিংটনে ‘মার্চ ফর আওয়ার লাইভ্স’-এ হাজার মুখের ভিড়ে উৎসাহ দিতে এগিয়ে গিয়েছিল।

সংবাদ সংস্থা
ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৮ ০২:৪০
Share: Save:

নিজের ক্লাসের ৬০ জন বন্ধুবান্ধবকে নিয়ে জর্জ ম্যাসন এলিমেন্টারি স্কুলে গত ১৪ মার্চ ‘ওয়াকআউট’-এর নেতৃত্ব দিয়েছিল নেওমি ওয়াডলার। গত শনিবারও ১১ বছরের এই মেয়ে ওয়াশিংটনে ‘মার্চ ফর আওয়ার লাইভ্স’-এ হাজার মুখের ভিড়ে উৎসাহ দিতে এগিয়ে গিয়েছিল।

শনিবার নেওমি কিছু কথা বলেছে ওই ভিড়ের উদ্দেশে। কড়া অস্ত্র আইনের পক্ষে ওই দিন যাঁরা জমায়েতে ছিলেন, তাঁদের মধ্যে একটা বড় অংশই ছিল স্কুলপড়ুয়া। কিন্তু এই প্রতিবাদের আগে ফ্লরিডার পার্কল্যান্ড স্কুলে বন্দুকবাজের হামলার নিন্দায় আরও একটা প্রতিবাদ জানিয়েছিল পড়ুয়ারা। স্কুলে স্কুলে ১৭ মিনিটের ‘ওয়াকআউট।’ শনিবারের ভিড়কে নেওমি জানায়, তার স্কুল থেকে ‘ওয়াকআউট’ ১৭ মিনিটের পরিবর্তে ১৮ মিনিট করেছিল সে।

কিন্তু কেন? গত ৭ মার্চের একটি ঘটনার কথা বলে নেওমি। ওই দিন এক পড়ুয়ার গুলিতে প্রাণ হারায় কৃষ্ণাঙ্গ কিশোরী কোর্টলিন অ্যারিংটন (১৭)। নেওমি বলেছে, ‘‘আমি এখানে সেই সব আফ্রিকান-মার্কিন মেয়েদের কথা বলতে চাই, যাদের খবর দেশের জাতীয় সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় জায়গা পায় না। সান্ধ্য খবরেও ওরা শিরোনামে আসে না!’’ কিশোরীর বক্তব্য শুনে ভিড় থেকে সমর্থন আসে জোর হাততালিতে। নেওমি বলে চলে, ‘‘আমি সেই সব আফ্রিকান-মার্কিন মেয়েদের হয়ে কথা বলছি, যারা অস্ত্র হিংসার শিকার। যাদের শুধু একটা সংখ্যা হিসেবে দেখা হয়। সুন্দর সেই মেয়েগুলোর মধ্যে যে কী অপার শক্তি ছিল, সেটা কেউ মাথায় রাখে না।’’ তাই তাদের জন্য আলাদা করে এক মিনিট দিতে চেয়েছিল নেওমি।

প্রতিবাদী: কড়া অস্ত্র আইনের দাবিতে নিউ ইয়র্কে ‘মার্চ ফর আওয়ার লাইভস’ মিছিলে শনিবার যোগ দিয়েছিলেন গায়ক-সঙ্গীতকার পল ম্যাকার্টনি। বিটল্স-এ তাঁর বন্ধু জন লেননের জন্য মিছিলে হাঁটছেন বলে জানান ম্যাকার্টনি। ১৯৮০ সালে ম্যানহাটনে বন্দুকবাজের গুলিতে প্রাণ হারান লেনন। ‘উই ক্যান এন্ড গান ভায়োলেন্স’ লেখা কালো টি-শার্টে হাজির ম্যাকার্টনিকে প্রশ্ন করা হয়, মিছিল করে কিছু হবে? ‘‘আমিও আর সকলের মতো। জানি না। কিন্তু এটাই করতে পারি। তাই আমি এখানে। আমার অন্যতম প্রিয় বন্ধু অস্ত্রের শিকার হয়েছিল। তাই এটা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ,’’ জবাব ম্যাকার্টনির। ছবি: গেটি ইমেজেস।

আমেরিকার ‘ভায়োলেন্স পলিসি সেন্টার’-এর ২০১৪ সালের এক সমীক্ষা অনুযায়ী, কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিনরা শ্বেতাঙ্গ নাগরিকদের তুলনায় দ্বিগুণ হারে বন্দুকের শিকার হন। আর শ্বেতাঙ্গ মহিলাদের তুলনায় কৃষ্ণাঙ্গ মহিলারা একই ভাবে দ্বিগুণ হারে আক্রান্ত হন বলে দাবি রিপোর্টে।

এই বৈষম্যের কথা তুলে ধরে ফিফথ গ্রেডের ছোট্ট নেওমি এখন শিরোনামে। ‘‘আমার মনে হয়, স্কুলে নিরাপদ থাকার যে অধিকার আমাদের আছে, সেটা নিয়ে ভাবি না আমরা। এটা মেনে নেওয়া যায় না।’’

১৪ মার্চের ওই ‘ওয়াকআউট’ নিয়ে আপত্তি উঠেছিল কিছু স্কুলে। কর্তৃপক্ষের মনে হয়েছিল, এ ভাবে স্কুল থেকেই বেরিয়ে যাওয়াটাই নিরাপদ নয়।

কিন্তু নেওমির প্রশ্ন, ‘‘আমরা কি স্কুলের ভিতরে পুরোপুরি নিরাপদ? কী করে ক্লাসরুমে আমরা সুরক্ষা পাব? যে বিশ্বে আমরা বাস করছি, সেখানে মেয়াদ উত্তীর্ণ পরিচয়-পত্র নিয়ে কোনও পড়ুয়া ঢুকে পড়ছে রাইফেলের দোকানে, আর অস্ত্র কিনেও ফেলছে। সুরক্ষা কোথায়?’’

নেওমির বক্তব্য নিয়ে এর পরে আলোচনা হতে থাকে টুইটারেও। এপ্রিল নামে এক মহিলা লেখেন, ‘‘ওর নাম নেওমি ওয়াডলার। আলেকজান্দ্রিয়ার ১১ বছরের মেয়েটা টনি মরিসনের উদ্ধৃতি দিচ্ছে। আমার প্রেসিডেন্টকে শ্রদ্ধা!’’

শনিবার আমেরিকার বিভিন্ন শহরে দশ লক্ষেরও বেশি মানুষ সামিল হন কড়া অস্ত্র আইনের দাবিতে। তাঁদের মুখে স্লোগান ছিল, ‘‘আর নয় (নেভার এগেন)।’’ আটলান্টা, বস্টন, শিকাগো, ডালাস, ডেনভার, লস অ্যাঞ্জেলেস, মায়ামি, মিনিয়াপলিস, সিয়াটলের মতো আরও অনেক শহরে পা মেলান পড়ুয়া থেকে সাধারণ মানুষ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE