Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

মিশরে প্রমাণ ছাড়াই জেল তিন সাংবাদিকের

প্রমাণ নেই। এমনকী যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা চলছে, তাঁদের অনেকেই আদালতে হাজিরও ছিলেন না। তবু হল ‘কাজীর বিচার’। অপরাধ প্রমাণ না হলেও তিন সাংবাদিককে কারাদণ্ড দিল মিশরের আদালত। একপেশে এই রায়ে উত্তাল গোটা পশ্চিমী দুনিয়া। তাদের প্রশ্ন, তা হলে কি সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় হাত দিচ্ছে মুরসি-পরবর্তী মিশর? গত জুলাইয়ে মহম্মদ মুরসি ক্ষমতাচ্যুত হন। তার পর থেকে তাঁর সমর্থনে সমাবেশ-বিক্ষোভ দেখিয়েছে ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’।

সংবাদ সংস্থা
কায়রো শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৪ ০৪:১৭
Share: Save:

প্রমাণ নেই। এমনকী যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা চলছে, তাঁদের অনেকেই আদালতে হাজিরও ছিলেন না। তবু হল ‘কাজীর বিচার’। অপরাধ প্রমাণ না হলেও তিন সাংবাদিককে কারাদণ্ড দিল মিশরের আদালত। একপেশে এই রায়ে উত্তাল গোটা পশ্চিমী দুনিয়া। তাদের প্রশ্ন, তা হলে কি সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় হাত দিচ্ছে মুরসি-পরবর্তী মিশর?

গত জুলাইয়ে মহম্মদ মুরসি ক্ষমতাচ্যুত হন। তার পর থেকে তাঁর সমর্থনে সমাবেশ-বিক্ষোভ দেখিয়েছে ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’। শেষমেশ ‘জঙ্গি সংগঠন’-এর তকমা লাগে মুসলিম ব্রাদারহুডের গায়ে। যে তিন সাংবাদিককে এ দিন কারাদণ্ড দিল মিশরের আদালত, তাঁদের বিরুদ্ধে মুসলিম ব্রাদারহুডের সতেরো জন সদস্যকে সাহায্য করার অভিযোগ এনেছিল মিশরের প্রশাসন। তা ছাড়া, মিথ্যা খবর ছড়িয়ে দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার অভিযোগও ছিল তাঁদের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দা পিটার গ্রেস্টে এবং কানাডার বাসিন্দা মহম্মদ ফাহমিকে সাত বছরের সাজা দিয়েছে মিশরের আদালত। দু’জনেই কাতার-কেন্দ্রিক একটি চ্যানেলের সাংবাদিক। সাজাপ্রাপ্ত তৃতীয় ব্যক্তি বাহের মহম্মদ পেশায় প্রযোজক। দু’টি আলাদা অভিযোগের ভিত্তিতে মোট দশ বছরের সাজা পেয়েছেন তিনি। তা ছাড়াও, আরও চার জনকে সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।

কিন্তু কেন এমন অভিযোগ আনল প্রশাসন? এর পিছনে অন্য একটি ব্যাখ্যা রয়েছে বলে অনেকের মত। আসলে কাতার-কেন্দ্রিক যে চ্যানেলের কর্মী ওই দুই সাংবাদিক, তারা মুসলিম ব্রাদারহুডকে দীর্ঘদিন ধরে সমর্থন করে আসছে। এমনকী তার জেরে মিশরের বর্তমান সরকারের সঙ্গে তিক্ততাও তৈরি হয়েছিল ওই চ্যানেলের। মুরসি গদিচ্যুত হওয়ার পর থেকে কায়রোয় ওই চ্যানেলের কার্যালয়ও বন্ধ করে দিয়েছিল বিক্ষোভকারীরা। তাই এই একপেশে বিচার, মনে করছেন অনেকে।

যেমন ওই তিন সাংবাদিকের আইনজীবী শাবান সইদ। তাঁর বয়ানে, “আমরা ভাবছিলাম ওঁরা যে বেকসুর তা খুব সহজেই প্রমাণ হয়ে যাব। কিন্তু এ দেশে ন্যায়বিচার বলে কিছু আর নেই। রাজনীতিই বিচারকের আসনে।”

ফল শুনে স্বাভাবিক ভাবেই কান্নায় ভেঙে পড়েছেন সাংবাদিকদের আত্মীয়রা। গ্রেস্টের ভাই যেমন বলেই ফেলেন, “আমি সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত। বলার মতো শব্দ পাচ্ছি না।” তবে রায় শোনার পর যখন গোটা আদালত কক্ষ নীরব, তখনই চিৎকার করে ওঠেন ফাহমি। বলতে থাকেন, “এর মূল্য ওদের চোকাতে হবে।”

রায় শুনে তীব্র ক্ষুব্ধ অস্ট্রেলীয় প্রশাসন জানিয়েছে, শুনানির গোটা প্রক্রিয়া যে ভাবে এগিয়েছিল এবং যতটুকু যা প্রমাণ ছিল, তার ভিত্তিতে এই রায়দান মেনে নেওয়া যায় না।

আন্তর্জাতিক মহলের ধারণা, সব থেকে বড় চাপ আসতে পারে আমেরিকার কাছ থেকে। কালই মিশরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল অল ফতাহ্ সিসির সঙ্গে বৈঠক করে মার্কিন বিদেশসচিব জন কেরি বলেছিলেন, “আমরা বৈঠকে আইনের শাসন, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্র নিয়ে আলোচনা করেছি।” এর পর দিনই সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করে এমন রায়দান আমেরিকা মানবে না, আশা অনেকের। আপাতত তাই অপেক্ষা বদলের।

অন্য বিষয়গুলি:

egypt court sentence three journalists cairo
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE