এ বার সরাসরি প্রত্যাঘাতের হুমকি দিল রাশিয়া। এ দেশের নাগরিকদের ভিসায় নিষেধাজ্ঞা এবং সম্পত্তি ফ্রিজ করার বিষয়ে গত কাল এক জরুরি বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ই ইউ) যে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে, তা একেবারেই অবাঞ্ছিত বলে অভিযোগ করেছে পুতিন প্রশাসন। ইউক্রেন-বিতর্কের জেরে ই ইউ ওই সিদ্ধান্ত নিলে রাশিয়া থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশে যাতায়াত করা রুশ নাগরিকদের পক্ষে সমস্যাজনক হয়ে পড়বে। কালই আবার আমেরিকাও রুশ নাগরিকদের ভিসায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
সব দিক থেকে এমন চাপের মুখে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে রুশ সরকার। দেশের বিদেশ মন্ত্রক এক বিবৃতিতে সাফ জানিয়েছে, ‘নিষেধাজ্ঞা বা হুমকি রাশিয়া মেনে নেবে না। নিষেধাজ্ঞা জারি হলে আমরাও প্রত্যাঘাতের জন্য তৈরি।’ ক্রিমিয়ায় রুশ সেনার হস্তক্ষেপ নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার হুঁশিয়ারিও উড়িয়ে দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। শুক্রবার ওবামার সঙ্গে টেলিফোনে প্রায় এক ঘণ্টা কথা হয় তাঁর। কিন্তু এ দিনও তিনি নিজের পুুরনো অবস্থানে অনড় থেকে বলেছেন, ইউক্রেনের রুশভাষী মানুষের ডাকে সাড়া না দিয়ে উপায় ছিল না রাশিয়ার।
অতীতের সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের এই অংশের পরিস্থিতি সম্পর্কে মস্কো এবং ওয়াশিংটনের চূড়ান্ত মতপার্থক্য রয়েই যাবে ওবামার সঙ্গে ফোনালাপের পরে এক বিবৃতিতে তেমনই জানিয়েছেন পুতিন। পাশাপাশি ইউক্রেনের পূর্বে, দক্ষিণপূর্বে এবং ক্রিমিয়া উপদ্বীপে নতুন তদারকি সরকার সম্পূর্ণ অবৈধ সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে দাবি করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট।
ফোনে কথোপকথনের পরে ওবামা জানান, তিনি পুতিনকে কূটনৈতিক পথে সমাধানের বার্তা দিয়েছেন। কিন্তু পুতিন এ দিনও তাঁকে বলেছেন, পদচ্যুত প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচকে সংবিধান-বিরোধী সামরিক অভ্যুত্থানে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে তাঁর মতে, একটা ছোট আঞ্চলিক সমস্যাকে কেন্দ্র করে রাশিয়া এবং আমেরিকার মতো দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ব্যাহত হলে তার প্রভাব গোটা বিশ্বে পড়বে। তাই শান্তি বজায় রাখতে দুই দেশেরই সেটা মাথায় রাখা উচিত।
ক্রিমিয়া দখলের পিছনে রুশ সেনার কোনও ভূমিকা নেই বলে এ দিনও তিনি জানান। আত্মরক্ষার্থে ক্রিমিয়া উপদ্বীপে স্থানীয় সেনারা রয়েছে। যদিও পুতিনের এই দাবিকে হাস্যকর বলে উড়িয়ে দিয়েছে আমেরিকা। তার মধ্যেই সংবাদসংস্থা জানিয়েছে, ক্রিমিয়ায় আগের তুলনায় এখন দ্বিগুণ রুশ সেনা জড়ো হয়েছে। ইউক্রেনীয় সীমান্তরক্ষীরা বলেছে, ক্রিমিয়া উপদ্বীপে এখন ৩০ হাজার রুশ সেনার উপস্থিতি রয়েছে।
রাশিয়ার সঙ্গে যোগ দিতে গত কাল ক্রিমিয়ার পার্লামেন্ট যে রায় দিয়েছে, তা নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন ওবামা-সহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা। তাঁদের মতে, গণভোটের প্রস্তাব একেবারেই অবৈধ এবং ইউক্রেনের সংবিধান-বিরোধী। কিন্তু ক্রিমিয়ার আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে সাক্ষাতের পরে রাশিয়ার পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ আজ জানিয়েছে, ক্রিমিয়ার স্বেচ্ছায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রয়েছে। তা ছাড়া, ক্রিমিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার ভ্রাতৃসুলভ সম্পর্ক, যুদ্ধের কোনও প্রশ্নই নেই। যদিও ক্রিমিয়ায় কাল থেকে ইউক্রেনীয় টিভি চ্যানেলের পরিবর্তে রুশ সরকারি চ্যানেলের সম্প্রচার শুরু হয়েছে। ইউক্রেনের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী আরসেনি ইয়াতসেনিয়াক বলেন, ক্রিমিয়ায় তথাকথিত ‘গণভোটের’ ফল সভ্য দেশ মেনে নেবে না। তিনি জানান, মস্কোর সঙ্গে কিয়েভও আপস করতে রাজি। টেলিফোনে কথা বলার জন্য রুশ প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভকে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে সরিয়ে দেওয়ায় পুতিন যতই ক্ষুব্ধ হোন না কেন, কিয়েভের ইন্ডিপেনডেন্স স্কোয়ারে শিবির করে থাকা জনতার মধ্যে অনেকেই কিন্তু রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাতে যেতে রাজি। ইউক্রেনের মতো দেশের সশস্ত্র বাহিনী রাশিয়ার তুলনায় তুচ্ছ। তবু তারাস ইয়ারকিভের মতো বছর ৩৫-এর যুবক বলেন, “আমরা আশাবাদী। ক্রিমিয়া আমাদের পাশে থাকবে। আমরা লড়াই করব।” ক্রিমিয়া যদি রাশিয়ার অংশ হয়ে যায়? আলেকজান্দার জাপোরোজেৎসের বিশ্বাস, “রুশরা আমাদের কাছ থেকে ক্রিমিয়া ছিনিয়ে নিতে পারবে না। স্বাধীন দেশে এটা হতে পারে না। তবে মনে হয়, সময় বয়ে যাচ্ছে। রাশিয়া কিন্তু প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমরা কেবল আলোচনাই করছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy