নজির: তথ্যচিত্র দেখছে ছাত্রীরা ছবি: দেবরাজ ঘোষ
রাজ্য সড়ক থেকে কাদামাখা মোরামের পথ পেরিয়ে পৌঁছতে হয় গ্রামে। এলাকায় তফসিলি সম্প্রদায়ের মানুষের বাসই বেশি। এখনও আঠারো পেরনোর আগে বিয়ে হয়ে যায় মেয়েদের।
সবংয়ের সেই প্রত্যন্ত মশাগ্রামেই স্কুলের মেয়েদের ঋতুকালীন সচেতনতা নজির গড়েছে। যে ছাত্রীরা বছর খানেক আগেও মাসের ওই দিনগুলোতে স্কুলে আসত না, স্বাস্থ্যবিধি ভুলে ব্যবহার করত এক টুকরো কাপড়, তারাই এখন স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করছে। ছাত্রীদের হাত ধরে সচেতনতা ছড়িয়েছে গ্রামের অন্য মহিলাদের মধ্যেও। সবই সম্ভব হয়েছে স্কুল ও স্থানীয় এক চিত্র পরিচালকের উদ্যোগে তৈরি তথ্যচিত্রের সৌজন্যে।
সোমবার মশাগ্রাম শিবানন্দ বিদ্যাপীঠে দেখানো হল সেই তথ্যচিত্র— ‘রোল নম্বর ১৭’। ঋতুকালীন অসচেতনতায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাইস্কুলের এক ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনা দেখানো হয়েছে ১০মিনিটের এই তথ্যচিত্রে। তথ্যচিত্রের শ্যুটিং মূলত মশাগ্রামের এই স্কুলেই হয়েছে। অভিনয় করেছে নবম শ্রেণির সুহিতা দিন্দা, দশম শ্রেনির মোনালিসা খাটুয়ারা। ২০১৭সালের জুলাইয়ে শ্যুটিং শুরু সময় প্রধান উদ্যোগ ছিল স্কুলের টিচার ইন-চার্জ শান্তুনু অধিকারীর। আর তথ্যচিত্রের পরিচালক সবংয়ের করাই গ্রামের বাসিন্দা চিত্র পরিচালক ধনঞ্জয় মণ্ডল। ইতিমধ্যেই ঝাড়খণ্ড আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ও সুতানুটি তথ্যচিত্র ও সল্পদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কার পেয়েছে এই তথ্যচিত্র।
এ দিন ধনঞ্জয়বাবুর উপস্থিতিতেই মশাগ্রামের স্কুলে দেখানো হয় তথ্যচিত্রটি। শিক্ষকদের উপস্থিতিতে হল ভর্তি ছাত্রীরা তা দেখেছে। তাদের আচরণে কোনও জড়তা নজরে আসেনি। বস্তুত দীর্ঘলালিত ধ্যানধারণা ভাঙার চেষ্টাটা শুরু হয়েছিল শ্যুটিংয়ের আগে থেকেই। তথ্যচিত্রে অভিনয় করা ছাত্রীরা মানছে, “সত্যি বলতে প্রথমে অভিনয় করতে চাইনি। পরে বুঝলাম আমরা অন্ধকারে রয়েছি।’’ সেই আঁধার ঘুচেছে। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে এখন স্কুলে ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন বসেছে। শুধু ছাত্রীরা নয়, গ্রামের অন্য মহিলাদের মধ্যেও ফিরেছে সচেতনতা। স্থানীয় বাসিন্দা মল্লিকা মাইতি মানছেন, “শ্যুটিংয়ের সময় থেকেই আমরা সব জানতে পারি। এখন তো ভাসুরঝি স্কুল থেকেই ন্যাপকিন এনে দেয়। দোকানে গিয়েও নির্দ্বিধায় ন্যাপকিন কিনে আনি।”
টিচার ইন-চার্জ শান্তনুবাবু বলেন, “পিছিয়ে পড়া গ্রাম। এখানে নাবালিকা বিয়ে হয় হরদম। মেয়েদের মধ্যে পিরিয়ড নিয়েও জড়তা ছিল। এখন ছবিটা পাল্টেছে।’’সেই পরিবর্তনটাই প্রাপ্তি তথ্যচিত্রের পরিচালক ধনঞ্জয়বাবুরও। তাঁর কথায়, “এখনও আমাদের বাড়ির মেয়েদের পিরিয়ড নিয়ে জড়তা রয়েছে। এই তথ্যচিত্র যে সেটা ভাঙতে পারছে, সেটাই তো বড় কথা।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy