দোকান খুলিয়ে খাবার কিনছে পুলিশ। সিরশিট্টায় তোলা নিজস্ব চিত্র।
রবিবার ফের রাজনৈতিক সংঘর্ষের জেরে তেতে উঠল পাড়ুই থানা এলাকা।
চৌমণ্ডলপুর-মাখড়ার পর এ দিন তৃণমূল-বিজেপির সংঘর্ষের আগুন এ বার ছড়াল সিরশিট্টার পর যাদবপুরে।
এ দিন পাড়ুই থানার সাত্তোর গ্রাম পঞ্চায়েতের যাদবপুরে ঘটনার সূত্রপাত সকাল সাড়ে ছ’টায়। কেন্দ্র ডাঙাল থেকে হাঁসড়া মোড় যাওয়ার পথে, যাদবপুর গ্রামে ঢোকার মুখ থেকেই বোমাবাজি করতে করতে গ্রামে ঢোকে দুষ্কৃতীরা। ওই গ্রামের বাসিন্দা সাত্তোর পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান মহসিন মোল্লার বাড়িতে বোমাবাজি ও লুঠপাট হয় বলে অভিযোগ। পাশাপাশি ওই গ্রামের স্কুল পাড়ার একাধিক তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে বলেও অভিযোগ। এ দিন, মহসিন মোল্লার বাড়ির উঠোনে গিয়ে দেখা যায়, বাইক-সাইকেল ভেঙে উল্টে ফেলা হয়েছে। বাড়ির আসবাব ভেঙে তছনছ করে দেওয়া হয়েছে।
মহসিন মোল্লার স্ত্রী কামরুনেহা খাতুনের অভিযোগ, “বাঁধনবগ্রামের হৃদয় ঘোষ, চৌমণ্ডলপুরের বাসিন্দা সেখ সদাইয়ের নেতৃত্বে ৬০-৭০ জন দুষ্কৃতী রে রে করে বোমা ছুঁড়তে ছুঁড়তে গ্রামে ঢোকে। মসজিদপাড়া, স্কুল পাড়ায় আমার বাড়িতে লুঠ ও ভাঙচুর চালায়। আশপাশের তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতেও তারা ভাঙচুর-বোমাবাজি ও লুঠ চালায়। পুলিশকে জানিয়েছি। বাড়ির সমস্ত জিনিষ পাশের একটি পুকুরে ফেলে দেয়।”
এ দিন সিউড়ি ২ ব্লকের বনশঙ্কা পঞ্চায়েতের সিরশিট্টা গ্রামও তপ্ত হয়ে ওঠে। ওই গ্রামে তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে সংঘর্ষ বাধে সকাল থেকেই। সকাল থেকেই উভয়পক্ষের মধ্যে মুড়ি-মুড়কির মতো বোমা ও গুলি চলে। তৃণমূল সমর্থক স্থানীয় বাসিন্দা, আনিসুর রহমান, কবিরুদ্দিন মোল্লা, বাকির মোল্লা, মতিউর রহমান-সহ একাধিক তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা বলেন, “শেখ ইসমাইল, সেখ ইসরাফিল, পূর্ণচন্দ্র বায়েন, মণিরুল ইসলামের নেতৃত্বে বোমাবাজি ও লুঠ করে ৬০-৭০ জন বিজেপির দুষ্কৃতী। গ্রামবাসীরা প্রতিরোধ করে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, বহিরাগত দুষ্কৃতীরা সিরশিট্টার দক্ষিণ দিকে বড় বাঁধের কাছে জড়ো হচ্ছে দেখে গ্রামবাসীরা তৈরি হন প্রতিরোধের জন্য। ইতিমধ্যেই খবর যায়, আশপাশের তৃণমূল এলাকাগুলিতে। সেখান থেকেও লোক এসে পড়ে। উভয়পক্ষের মধ্যে ঘণ্টা-খানেক ধরে চলে বোমা ও গুলির লড়াই। পশ্চিমপাড়া-দক্ষিণপাড়া-খাদিমপাড়া এবং প্রধান রাস্তায় মুড়ি-মুড়কির মতো বোমা পড়ায় এলাকা ধোঁওয়ায় ঢেকে যায়।
বোমার চিহ্ন সিরশিট্টায়। নিজস্ব চিত্র।
গ্রামে ঢোকার প্রধান রাস্তা থেকে বেশ কিছুটা নিরাপদ দূরত্বে জেলার পুলিশ বাহিনী র্যাপ-কমব্যাট দাঁড়িয়ে থাকে। কিছুক্ষণ বোমা-গুলির পর এলাকা শান্ত হয়। এরপরই খবর আসে চৌমণ্ডলপুর গ্রাম দখলের অভিযানে নেমেছে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। এই খবর পাওয়ার পরই জেলা পুলিশসুপার অলোক রাজোরিয়া পুলিশ বাহিনী চৌমণ্ডলপুরের দিকে রওনা দেয়।
এলাকায় বাড়তি উত্তেজনা যাতে না ছড়ায়, চৌমণ্ডলপুর লাগোয়া মাঠে সন্দেহভাজন কিছু ব্যক্তিকে দেখে জেলা পুলিশ তিন দিক থেকে তাদের পিছু ধাওয়া করে। বেশ কয়েকজনকে আটকও করে।
গ্রামে বোমা বারুদের চিহ্ন সর্বত্র। বাতাসেও পোড়া বারুদের গন্ধ। পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা রহিমা বিবি, শহিরা বিবি, মনিরা বিবি বলেন, “এ দিন বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা শনিবারের গোলমালের রেশ ধরে বহিরাগতদের নিয়ে গ্রামে হামলা চালায়। বোমা ছোড়ার পাশাপাশি গুলিও করে। প্রাণের দায়ে আমরা পশ্চিমপাড়ার মসজিদে আশ্রয় নিয়েছি।” এ দিনের সংঘর্ষে এই পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা, পেশায় রং মিস্ত্রি, সেখ হোসেন গুলি বিদ্ধ হন। তাঁকে প্রথমে সিউড়ি সদর হাসপাতালে, পরে বর্ধমান মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হয়।
অন্যদিকে তৃণমূলের তোলা অভিযোগ অস্বীকার করেছে গ্রামের বিজেপি। ডোমপাড়া, বাগ্দীপাড়া, আদিবাসীপাড়ার বাসিন্দা সন্ধ্যা বাগদী, অনুরুপা বাগ্দী, ছবি বাগ্দীরা বলেন, “আমরা ঘর ছেড়ে এখন মাঠে আশ্রয় নিয়েছি। বাড়ির পুরুষদের নামে মিথ্যে মামলা করেছে ওরা। একদিকে পুলিশ তাড়া করছে। অন্যদিকে বহিরাগত দুষ্কৃতী দিয়ে তৃণমূলীরা বোমা গুলি চালাচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy