Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

সিঙ্গুর আর শালবনি এক নয়, মত অনিচ্ছুকদের

শালবনির সঙ্গে সিঙ্গুরকে গুলিয়ে ফেললে চলবে না অন্তত জমি ফেরত দেওয়ার প্রশ্নে। বৃহস্পতিবার তাপসী মালিক স্মরণ দিবসে এমনটাই শোনা গেল সিঙ্গুরের অনেকের মুখে যাঁরা আন্দোলন-পর্ব থেকে এ পর্যন্ত ‘অনিচ্ছুক’ জমিদাতা হিসেবেই পরিচিত। অথচ, এ দিনই দল আয়োজিত অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় শালবনির দৃষ্টান্ত টেনে বলেছেন, “জিন্দলরা জমি ফেরত দিতে পারে। টাটাদের তো এখানে কিছুই নেই। তা হলে টাটা গোষ্ঠী এটা কোর্টের মাধ্যমে নিয়ে যাচ্ছে কেন? নিজেরা উদ্যোগী হয়েও জমি ফেরত দিতে পারে।” এর পরে সুর চড়িয়ে বলেছেন, “তৃণমূলের তরফে ঘোষণা করে দিচ্ছি, অনিচ্ছুক চাষিদের জমি ফিরিয়ে দিতে হবে, দিতে হবে, দিতে হবে।”

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিঙ্গুর শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:২৯
Share: Save:

শালবনির সঙ্গে সিঙ্গুরকে গুলিয়ে ফেললে চলবে না অন্তত জমি ফেরত দেওয়ার প্রশ্নে। বৃহস্পতিবার তাপসী মালিক স্মরণ দিবসে এমনটাই শোনা গেল সিঙ্গুরের অনেকের মুখে যাঁরা আন্দোলন-পর্ব থেকে এ পর্যন্ত ‘অনিচ্ছুক’ জমিদাতা হিসেবেই পরিচিত। অথচ, এ দিনই দল আয়োজিত অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় শালবনির দৃষ্টান্ত টেনে বলেছেন, “জিন্দলরা জমি ফেরত দিতে পারে। টাটাদের তো এখানে কিছুই নেই। তা হলে টাটা গোষ্ঠী এটা কোর্টের মাধ্যমে নিয়ে যাচ্ছে কেন? নিজেরা উদ্যোগী হয়েও জমি ফেরত দিতে পারে।” এর পরে সুর চড়িয়ে বলেছেন, “তৃণমূলের তরফে ঘোষণা করে দিচ্ছি, অনিচ্ছুক চাষিদের জমি ফিরিয়ে দিতে হবে, দিতে হবে, দিতে হবে।”

শাসক দলের অন্যতম শীর্ষ নেতার আশ্বাসের পরেও ‘অনিচ্ছুক’ জমিদাতারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন সিঙ্গুরের জমির ভবিষ্যৎ কী হবে, তা ঠিক করবে সুপ্রিম কোর্ট। আর তার পরেই অন্যতম ‘অনিচ্ছুক’ জমিদাতা চাষি সুপ্রকাশ সাঁতরার মতো অনেকে বলে ফেলছেন, “শালবনিতে ইস্পাত প্রকল্পের কাজ স্থগিত থাকছে বলে জিন্দলেরা জমি ফেরত দিচ্ছেন। সিঙ্গুরে টাটারা শেষ পর্যন্ত গাড়ি কারখানা তৈরির চেষ্টা করেছেন। তাঁরা কারখানা গড়তে পারেননি তৃণমূলের বাধাতেই। তাই শালবনির সঙ্গে সিঙ্গুরকে এক করে দেখা ঠিক হবে না।”

সিঙ্গুরের বাজেমেলিয়ায় এ দিনের অনুষ্ঠানে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থবাবু ছাড়াও এসেছিলেন আরও দুই মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং বেচারাম মান্না, তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সাধারণ সম্পাদক শঙ্কুদেব পণ্ডা প্রমুখ। এই উপলক্ষে আয়োজিত স্বাস্থ্য-শিবির, রক্তদান কর্মসূচিতে ‘অনিচ্ছুক’ চাষিরা ছিলেন, তবে হাতেগোনা। বাজেমেলিয়া, খাসেরভেড়ি, বেড়াবেড়ির যে সব মুখগুলোকে তৃণমূলের মিছিল-সভায় এক সময় নিয়মিত দেখা যেত, তাঁদের অনেকেই এ দিন গরহাজির।

শিক্ষামন্ত্রীর সে দিকে নজর পড়েছিল কি না, জানা যায়নি। তবে তাঁকে বলতে শোনা যায়, “আসতে আসতে পোস্টারে দেখছিলাম, ‘শালবনিতে জিন্দলরা জমি ফেরালে টাটারা কেন দেবে না’? আমি বলছি, তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে ঘোষণা করে দিচ্ছি, অনিচ্ছুক চাষিদের জমি ফিরিয়ে দিতে হবে, দিতে হবে, দিতে হবে।” তবে এর পরেই পার্থবাবুর সংযোজন, “আমাদের বিশ্বাস, মহামান্য আদালত জমি ফেরত দেবে। অনিচ্ছুকেরা জমি ফেরত পাবেন।”

প্রায় একই সুরে ‘সিঙ্গুর কৃষিজমি রক্ষা কমিটি’র আহ্বায়ক তথা কৃষিপ্রতিমন্ত্রী বেচারাম মান্না বলেন, ‘‘শালবনিতে জমি ফেরত দিলে, সিঙ্গুরের মানুষকেও জমি ফেরত দিতে হবে।’’ শঙ্কুদেব টাটাদের বলেছেন, “আপনি তো শিল্পপতি, জমি-মাফিয়া নন। তা হলে জমি-মাফিয়ার মতো আচরণ কেন করছেন? শিল্প করতে পারলে করুন, না পারলে ছেড়ে দিন। না হলে আমরা আন্দোলনের রাস্তায় নামব।’’ আইনমন্ত্রী চন্দ্রিমার মন্তব্য, “সিঙ্গুর নিয়ে জমি ফেরত দেওয়ার লড়াইতে নিম্ন আদালতে আমরা জিতেছিলাম। মামলাটা সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন। আশা করছি, আগামী ২৭ ডিসেম্বর (মামলার দিন পড়েছে) সিঙ্গুরের মানুষ জয়লাভ করবেন।’’

কিন্তু যাঁদের পাশে দাঁড়াতে চেয়ে শাসক দল ফি বছর এই তাপসী মালিক স্মরণ দিবস পালন করছে, সেই ‘অনিচ্ছুক’ জমিদাতারা কিন্তু মৌলিক প্রশ্ন তুলতে ছাড়ছেন না। বাজেমেলিয়ার সুপ্রকাশ সাঁতরা যেমন বললেন, ‘‘এখানে তো টাটারা কারখানা করবেন না, এমনটা বলেননি। তা হলে শালবনির সঙ্গে তুলনা টানা হচ্ছে কেন?” সুপ্রকাশ যখন এ কথা বলছেন, তাঁর পাশে ভিড় জমায় আরও কিছু ‘অনিচ্ছুক’ মুখ। তাঁদের বক্তব্য, “সরকার আমাদের জমি ফেরত দেবে বলেছে। ভাল কথা। এখন তারা সেই জমি ফেরত দিয়ে দেখাক।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE