Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

শিক্ষক নিয়োগে আরও ছাড়ের আর্জি স্মৃতিকেই

কলকাতায় এসে স্মৃতি ইরানি জানিয়ে দিয়েছিলেন, প্রশিক্ষণ ছাড়া স্কুলে আর নিয়োগের অনুমতি দেওয়া যাবে না। শিক্ষকপদে প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের নিয়োগের ক্ষেত্রে আরও অন্তত একটা বছর ছাড় দেওয়ার জন্য শুক্রবার সেই স্মৃতিকেই অনুরোধ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর প্রশ্ন, অন্যান্য রাজ্য যদি ওই ছাড় পেতে পারে, বাংলা কী দোষ করল?

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:১৮
Share: Save:

কলকাতায় এসে স্মৃতি ইরানি জানিয়ে দিয়েছিলেন, প্রশিক্ষণ ছাড়া স্কুলে আর নিয়োগের অনুমতি দেওয়া যাবে না। শিক্ষকপদে প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের নিয়োগের ক্ষেত্রে আরও অন্তত একটা বছর ছাড় দেওয়ার জন্য শুক্রবার সেই স্মৃতিকেই অনুরোধ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর প্রশ্ন, অন্যান্য রাজ্য যদি ওই ছাড় পেতে পারে, বাংলা কী দোষ করল?

ছাড় মানে প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের নিয়োগের সময়সীমা বাড়ানো। মমতা জানান, কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি এ দিন ফোন করেছিলেন এবং তখনই তিনি তাঁর কাছে আরও কিছুটা ছাড় চেয়ে আবেদন জানান।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষকপদে প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের নিয়োগের ক্ষেত্রে বেশ কিছু দিন ছাড় ছিল। কিন্তু তাঁদের নিয়োগের নির্ধারিত সময়সীমা পেরিয়ে গিয়েছে গত বছর ৩১ মার্চ। তার পর থেকে শিক্ষকপদে প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক হয়ে গিয়েছে। নতুন ব্যবস্থায় প্রাথমিকে শিক্ষকতার জন্য ডিএলএড এবং মাধ্যমিক স্তরে বিএড ডিগ্রি থাকতেই হবে। অথচ রাজ্যে এখন ওই দু’টি স্তর মিলিয়ে প্রায় ৭০ হাজার শিক্ষকপদ শূন্য থাকলেও প্রশিক্ষিত প্রার্থীর সংখ্যা টেনেটুনে ৪০-৪৫ হাজার বলে জানাচ্ছে স্কুলশিক্ষা দফতর। এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকার প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের নিয়োগে ছাড়ের সময়সীমা না-বাড়ালে শূন্য পদ কী করে পূরণ হবে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

সমস্যা হল, রাজ্য সরকার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রার্থীর চাহিদা ও জোগানের মধ্যে যে-ফারাকের কথা জানাচ্ছে, কেন্দ্র তা মানতে নারাজ। কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক সূত্রের খবর, প্রশিক্ষিত প্রার্থী যথে,্ঠ আছে বলেই তারা জেনেছে। সেই জন্যই আর ছাড় দিতে রাজি নয় কেন্দ্র। ফলে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া থমকে গিয়েছে। কবে হাজার হাজার শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগ করা হবে, সেই বিষয়ে গত সোমবারেই বিধানসভায় বিরোধীদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে।

এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বিধানসভা ভবনে তাঁর ঘরে বলেন, “স্মৃতি আমাকে টেলিফোন করেছিল। ওকে বলেছি, শিক্ষক নিয়োগে যা যা আটকে আছে, সে-সব আমাদের এক বছরের জন্য ছেড়ে দাও। ও বলেছে, ‘দেখছি’। আমি বলেছি, এটা দেখে নিতেই হবে। অন্য রাজ্যকে ছাড় দেওয়া হলে আমাদের কেন দেওয়া হবে না?” ঘটনাচক্রে স্কুল সার্ভিস কমিশন বা এসএসসি-র পরীক্ষায় উত্তীর্ণ যে-সব প্রার্থী চাকরির দাবিতে আন্দোলন করছেন, তাঁদের প্রতিনিধিরা এ দিনই নবান্নে গিয়ে স্মারকলিপি দেন মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে।

মমতা জানান, স্কুলে মেয়েদের শৌচালয়ের ব্যাপারে কথা বলতেই স্মৃতি এ দিন তাঁকে ফোন করেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে জানান, তৃণমূল ক্ষমতায় আসার সময় ৮০ শতাংশ স্কুলে মেয়েদের শৌচালয় ছিল। এখন তা বেড়ে হয়েছে ৯৮ শতাংশ। তার পরেই স্মৃতির কাছে শিক্ষক নিয়োগে ছাড়ের কথা তোলেন মুখ্যমন্ত্রী।

লোকসভা ভোটে পর থেকেই নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণহীনদের ছাড় দেওয়ার আর্জি জানিয়ে আসছে রাজ্য। রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীও এই মর্মে কেন্দ্রকে চিঠি লিখেছেন বলে একাধিক বার জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। কিন্তু ইতিবাচক জবাব মেলেনি। অনেক সময় আবেদনগুলির জবাবও দেয়নি কেন্দ্র। অথচ ওড়িশা, ঝাড়খণ্ডের মতো কয়েকটি রাজ্যে প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের ছাড় দেওয়া হয়েছে বলে বিভিন্ন সময়ে জানিয়েছেন পার্থবাবু।

প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য সম্প্রতি দিল্লি গিয়ে এই বিষয়ে আবার দরবার করেন। কিন্তু তখনও কোনও ইতিবাচক সাড়া মেলেনি বলে স্কুলশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর। মানিকবাবু ফিরে আসার পরে পর্ষদের তরফে নির্দেশিকা জারি করে জানানো হয়, ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার এডুকেশন (এনসিটিই)-এর নিয়মেই প্রাথমিকের শিক্ষকপদে প্রার্থীদের ন্যূনতম যোগ্যতা নির্ধারিত হবে। এনসিটিই-র নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষক হতে গেলে অন্তত দু’বছরের প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক।

২০১৪-র মার্চে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের জন্য যে-পরীক্ষা (টেট) হওয়ার কথা ছিল, লোকসভা ভোটের জন্য তা পিছিয়ে যায়। কিন্তু তার পরে পরীক্ষাটি আর হয়নি। এবং তা আটকে আছে প্রশিক্ষণের প্রশ্নেই। কারণ, প্রাথমিকে প্রায় ৪০ হাজার পদ ফাঁকা থাকলেও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রার্থীর সংখ্যা বড়জোর ১৯ হাজার। অথচ ওই পরীক্ষার জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন অন্তত ১৫ লক্ষ প্রার্থী। কেন্দ্র ছাড় না-দিলে অর্ধেকের বেশি আসন ফাঁকাই থেকে যাওয়ার কথা। আবার প্রশিক্ষণহীনদের পরীক্ষায় বসার সুযোগ না-দিলে নতুন গোলমাল তৈরির আশঙ্কাও থেকে যাচ্ছে।

মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষক বাছাই করে এসএসসি। ওই পরীক্ষার উপরে আদালতের স্থগিতাদেশ আছে। পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ানোর জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক। এই স্তরেও প্রশিক্ষণে ছাড়ের আবেদন জানাচ্ছে রাজ্য সরকার। এত দিন কেন্দ্র কোনও আবেদনেই কান দেয়নি।

এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে কথোপকথনের পরে স্মৃতি এবং তাঁর মন্ত্রক এই ব্যাপারে নড়েচড়ে বসেন কি না, সেটাই দেখার।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE