নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মেনে বদলি করা আধিকারিকদের বদলির মেয়াদ বেঁধে দিয়ে কোনও বেআইনি কাজ করা হয়নি বলে দাবি করল রাজ্য সরকার। নবান্ন সূত্রের খবর, কমিশনের কড়া নোটিসের জবাবে মোটামুটি কড়া জবাবই পাঠানো হয়েছে। ফলে আরও এক বার কমিশনের সঙ্গে রাজ্য সরকারের সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হতে চলেছে বলে অনেকের ধারণা।
জেলাশাসক, অতিরিক্ত জেলাশাসক, পুলিশ সুপারদের বদলির বিজ্ঞপ্তিতে কেন ভোট শেষ হওয়ার পরে তাঁরা আগের পদেই ফিরে আসবেন বলে আগাম ঘোষণা করা হয়েছে, তা জানতে চেয়ে মুখ্যসচিবকে নোটিস পাঠিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। রবিবার বেলা এগারোটার মধ্যে তাঁকে জবাব দিতে বলা হয়। এ দিন সকাল পৌনে দশটায় নবান্নে পৌঁছন মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র। ছিলেন ঘণ্টাখানেক। কমিশনের বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যেই নোটিসের জবাব দিল্লির নির্বাচন সদনে পাঠানো হয়েছে বলে খবর। নির্বাচন কমিশনের সদর দফতর সূত্রেও বলা হয়েছে, মুখ্যসচিবের জবাব তাঁরা পেয়েছেন। আজ, সোমবার ওই জবাব খতিয়ে দেখা হবে।
তাঁর জবাবে কী বলেছেন মুখ্যসচিব? বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, মূলত আইনগত প্রশ্ন তুলেই কমিশনের অভিযোগ খারিজ করেছে রাজ্য সরকার। কমিশনের নির্দেশে গত ৯ এপ্রিল পাঁচ জেলার পুলিশ সুপার, এক জেলাশাসক ও দুই অতিরিক্ত জেলাশাসকের বদলি সংক্রান্ত সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, ভোট প্রক্রিয়া শেষ হওয়া পর্যন্তই এই বদলি কার্যকর থাকবে। ২৫ এপ্রিল কমিশন নোটিস পাঠিয়ে প্রশ্ন তোলে, তাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই কেন ‘ভোট প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত কথাগুলি লেখা হয়েছে’? সূত্রের খবর, এর জবাবে মুখ্যসচিব বলেছেন, ভোটের পরে কোন অফিসারকে কোথায় পাঠানো হবে, তা পুরোপুরি রাজ্য সরকারের এক্তিয়ারভুক্ত। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের কিছু বলার নেই। এটা ঠিক যে ভোটপ্রক্রিয়া চলাকালীন রাজ্য প্রশাসন কমিশনের হাতে থাকে। তখন তাদের অনুমতি না নিয়ে কোন অফিসারকে বদলি করা যায় না। কিন্তু ভোটের পরে কোন অফিসারকে কোন দায়িত্বে পাঠানো হবে সে ব্যাপারে আগাম বিজ্ঞপ্তি জারি করা যাবে না, এমন কথা নির্বাচনী আইনে স্পষ্ট করে বলা নেই। অতএব রাজ্য সরকার আইন বহির্ভূত কিছুই করেনি।
রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে মুখ্যসচিব গত বছর এপ্রিলে কর্নাটক হাইকোর্টের একটি আদেশের কথা উল্লেখ করেছেন বলে নবান্নের একটি সূত্র জানাচ্ছে। কর্নাটকে বিধানসভার ভোট চলাকালীন সে রাজ্যের ৮ জন আধিকারিককে বদলি করার নির্দেশ দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। সেই নির্দেশের বিরোধিতা করে সেন্ট্রাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনালের (ক্যাট) দ্বারস্থ হন ওই আধিকারিকেরা। ক্যাট কমিশনের নির্দেশ খারিজ করে দেয়। মামলা গড়ায় হাইকোর্টে। কর্নাটক হাইকোর্ট তার রায়ে বলে, আধিকারিকদের বদলির নির্দেশ দিয়ে কমিশন এক্তিয়ার বহির্ভূত কোনও কাজ করেনি। কিন্তু ভোটের ফল ঘোষণার পরে ওই আধিকারিকেরা স্বাভাবিক নিয়মেই তাঁদের পুরনো পদে ফিরে যাবেন।
আদালতের এই নির্দেশের উল্লেখ করে নবান্নের সূত্রটি বলছে, ওই রায়ে এ-ও বলা হয়েছে যে, কমিশন কোনও আধিকারিককে বদলির আদেশ দেওয়া মানেই তাঁর সততা বা কর্মনিষ্ঠা নিয়ে প্রশ্ন তোলা নয়। ফলে ওই আট আধিকারিককে ভোটের পরে পুরনো পদে ফেরানোর আগাম বিজ্ঞপ্তি জারি করে সরকার আইনবিরুদ্ধ কোনও কাজ করেনি।
নির্বাচন কমিশনের একটি সূত্র আবার এই যুক্তি মানতে নারাজ। তাঁদের মতে, মুখ্যসচিবের চিঠিতে কর্নাটক হাইকোর্টের ওই রায়ের উল্লেখ করে সরকারের বিজ্ঞপ্তিকে সমর্থন করা হলে বলতে হবে, তিনি রায়ের পরিপ্রেক্ষিত বুঝতে ভুল করেছেন। কারণ, কর্নাটকের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার ওই আধিকারিকদের স্বপদে বহাল করার কোনও বিজ্ঞপ্তি জারি করেনি।
ওই আধিকারিকেরাই ক্যাটে মামলা করে আগের পদে বহাল থাকার দাবি করেছিলেন।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে ৮ আধিকারিকের বদলি নিয়ে ৯ এপ্রিল যে দু’টি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল, তার প্রথমটিতে বলা হয়েছিল, ভোটপ্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওই বদলি বহাল থাকবে। ওই দিনই পরে আর একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়ে দেওয়া হয়, ভোটপ্রক্রিয়া শেষ হলে ওই আধিকারিকেরা আগের পদে ফিরে আসবেন। এ জন্য আর কোনও নির্দেশ লাগবে না। এই দ্বিতীয় বিজ্ঞপ্তি নিয়ে কমিশন এখনও কোনও প্রশ্ন তোলেনি। যদিও ভোট চলাকালীনই এমন নির্দেশ কী ভাবে জারি করা যায়, তা নিয়ে রাজ্য প্রশাসনের একাংশেই প্রশ্ন রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে আজ, সোমবার মুখ্যসচিবের উত্তর খতিয়ে দেখবে কমিশন। সেই উত্তরে তারা সন্তুষ্ট হয়, নাকি রাজ্যের সঙ্গে সংঘাতের জল আরও গড়ায়, সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy