Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

বোরো চাষে জল মিলবে না বলায় অফিসারকে শো-কজ

মন্ত্রী-আমলাদের সঙ্গে কোনও আলোচনা ছাড়াই বোরো চাষে জল দেওয়া হবে না বলে আগাম ঘোষণা করে রাজ্যের সেচমন্ত্রীর কোপে পড়লেন এক আইএস অফিসার। বুধবারই ওই অফিসার, প্রেসিডেন্সি রেঞ্জের কমিশনার রিনা বেঙ্কটরামনকে ‘শো-কজ’ করা হয়েছে।

বর্ধমানের কানাইনাটশালে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।  ছবি: উদিত সিংহ।

বর্ধমানের কানাইনাটশালে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: উদিত সিংহ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:০৬
Share: Save:

মন্ত্রী-আমলাদের সঙ্গে কোনও আলোচনা ছাড়াই বোরো চাষে জল দেওয়া হবে না বলে আগাম ঘোষণা করে রাজ্যের সেচমন্ত্রীর কোপে পড়লেন এক আইএস অফিসার। বুধবারই ওই অফিসার, প্রেসিডেন্সি রেঞ্জের কমিশনার রিনা বেঙ্কটরামনকে ‘শো-কজ’ করা হয়েছে।

সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, “গত বছরের মতো জল দিতে না পারলেও, জল যে একদমই দেওয়া হবে না এমন সিদ্ধান্ত কখনওই হয়নি। কোথা থেকে না-দেওয়ার তথ্য উনি পেলেন তা জানি না! সাত দিনের মধ্যে শো-কজের জবাব দিতে হবে।” চেষ্টা করেও রিনাদেবীর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। মন্ত্রীর আশ্বাস, “এ বারও চারটি জেলাকে বোরো চাষের জল দেওয়া হবে।”

রাজ্যের সেচ দফতর সূত্রের খবর, গত ২৫ নভেম্বর বর্ধমানে এক প্রশাসনিক বৈঠকে রিনা বেঙ্কটরামন (সেই সময়ে বর্ধমান রেঞ্জের অতিরিক্ত দায়িত্বে ছিলেন) ঘোষণা করেছিলেন, পাঞ্চেত ও মাইথন জলাধারে পর্যাপ্ত জল না-থাকায় এ বছর বাঁকুড়া, বর্ধমান, হুগলি ও হাওড়া জেলায় বোরো চাষে জল দেওয়া সম্ভব নয়। বিষয়টি শুনেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন রাজীববাবু। এ দিন সকালে চার জেলার আধিকারিকদের নিয়ে বর্ধমানে একটি বৈঠক করেন মন্ত্রী। সেখানেই দফতরের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব গোপালকৃষ্ণকে তিনি ওই শো-কজের নির্দেশ দেন। ডিসেম্বরের শেষে নবান্নে রোটান্ডায় বোরো চাষে জল দেওয়ার বিষয়ে চার জেলার প্রশাসনিক আধিকারিক, জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ, ক্ষুদ্র সেচ, বিদ্যুৎ ও কৃষি দফতরের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন সেচমন্ত্রী। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহেই বোরো চাষের জলের পরিমাণ ঘোষণা করা হবে।

সেচ দফতরের হিসেবে, গত বছর পর্যাপ্ত বৃষ্টি হওয়ায় বোরো চাষের জন্য অন্য বারের থেকে অনেক বেশি জল দেওয়া সম্ভব হয়েছিল। চার জেলার জন্য পাওয়া গিয়েছিল ৪ লক্ষ ৬০ হাজার একর ফিট জল। প্রায় ১ লক্ষ ৭০ হাজার একর জমিতে চাষ হয়েছিল। এক সেচ আধিকারিক বলেন, “তার তুলনায় ২০১২ সালেও অনেক কম জল পাওয়া গিয়েছিল। সে বছর কমবেশি ২ লক্ষ একর ফিট জল মেলে। তখনও কিন্তু বোরো চাষের জন্য চার জেলাকে জল দেওয়া হয়েছিল।” সে বার চার জেলায় ডিভিসি-র সরবরাহ করা জলে মাত্র ৫০ হাজার একরে বোরো চাষ হয়। এ বছরও সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে বাঁকুড়ায় ১৮ শতাংশ, বর্ধমানে ১৩ শতাংশ ও হুগলিতে ১৭ শতাংশ বৃষ্টি কম হয়েছে। ঝাড়খণ্ডেও বৃষ্টি কমেছে শতকরা ২০ ভাগ। এখনও পর্যন্ত ডিভিসি থেকে প্রায় ১ লক্ষ ৬৩ হাজার একর ফিট জল মিলেছে। ফলে, বোরো চাষে একেবারে জল দেওয়া যাবে না, এমনটা মনে করছেন না সেচকর্তারা।

জলাধারে জমে থাকা বৃষ্টির জল ছাড়া সেচের আর এক সহায় ভূগর্ভস্থ জল। কিন্তু ব্যাপক বারে মাটি থেকে জল তুললে ভূগর্ভের জলস্তর নেমে গিয়ে আর এক বিপত্তি হয়। সে কারণে বেশ কয়েক বছর ধরেই ভূগর্ভস্থ জল তোলার বিরোধিতা করে আসছেন বিশেষজ্ঞেরা। কিন্তু জলাধারের জলে টান থাকায় ফের সেই রাস্তাতেই পা দিতে চলেছে রাজ্য প্রশাসন। সেই দায় এড়িয়ে রাজীববাবু অবশ্য বলেন, “ক্ষুদ্র সেচ দফতর বিষয়টি দেখে। ওই দফতরের মন্ত্রীই এ ব্যপারে বলতে পারবেন।” রাজ্যের ক্ষুদ্র সেচ দফতরের মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রের দাবি, এখনই ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব নয়। এ বছরেও ৩৯ লক্ষ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের জন্য জল দেওয়া হবে। তিনি বলেন, “ভূগর্ভস্থ জল ছাড়া চেক ড্যামের জলও দেওয়া হবে। তবে যেখানে জলস্তর কম, সেখানে যাতে নিয়ন্ত্রিত ভাবে জল তোলা হয়, সে দিকে নজর থাকবে।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy