দীর্ঘদিন ধরে তাঁকে হন্যে হয়ে খুঁজছে এ রাজ্যের পুলিশ। কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (কেএলও) প্রধান সেই জীবন সিংহ অবশ্য আজও অধরা। এই অবস্থায় ধৃত কেএলও জঙ্গি মালখান সিংহ ওরফে মাধব মণ্ডলের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জীবন সিংহের কাছে পৌঁছতে চাইছে পুলিশ।
গত ১২ এপ্রিল গভীর রাতে মালদহের হবিবপুর থেকে মালখানকে অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র-সহ গ্রেফতার করা হয়। তার পরে তাঁকে টানা জেরায় তদন্তকারীরা জানতে পারেন, জীবন সিংহ অসম-ভুটান সীমান্ত লাগোয়া গেলেফু এলাকায় ঘোরাঘুরি করছেন। ধরা পড়ার এক মাস আগেও ভুটানের ওই এলাকায় গিয়ে মালখান জীবনের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। পুলিশের দাবি, জেরায় মালখান এমনও দাবি করেন, রাজ্য সরকার ‘উপযুক্ত’ পরিবেশ তৈরি করলে জীবন সিংহ-সহ অন্য কেএলও জঙ্গিরাও আলোচনায় বসতে পারেন। অসম ও দার্জিলিঙের বাসিন্দা দুই কেএলও সদস্যের কথা মালখান পুলিশকে জানান। এদের সঙ্গেই জীবনের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে বলেও দাবি করেন। কেএলও-র আর এক ধৃত সদস্য নীলাম্বর রাজবংশীর মাধ্যমেই মালখানকে সমস্ত নির্দেশ পাঠানো হত বলে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন।
এই সমস্ত তথ্য পাওয়ার পর রাজ্য পুলিশের তদন্তকারী অফিসারেরা জীবন সিংহ অবধি কী ভাবে পৌঁছনো যায়, তা দেখা শুরু করেছেন। রাজ্য পুলিশের এক কর্তা বলেন, “মালখান জেরায় জীবন সিংহ সম্পর্কে নানা তথ্য দিয়েছেন। আমাদের সরকার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করলে জীবন বৈঠকের টেবিলে আসতে পারেন বলেও দাবি করেছেন। সবই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে এখনই আলোচনার মতো কোনও জায়গায় পৌঁছনো যায়নি।”
রবিবারই মালখানকে এক দিনের জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে মালদহ জেলা আদালত। এর আগে ১২ এপ্রিল মালখানকে ধরার পরের দিন তাঁকে আদালতে তোলা হলে ১৪ দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত। এ দিন আদালতে তোলা হলে অন্য একটি মামলায় জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন মালদহের ভারপ্রাপ্ত সিজিএম অমিতাভ দাস। আজ, সোমবার ফের মালখানকে আদালতে তুলে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানানো হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
এ দিন আদালত চত্বরে মালখান দাবি করেন, “এটা আমাদের রাজনৈতিক সমস্যা। রাজ্য সরকার ইচ্ছে করলেই আলোচনার মাধ্যমে তার সমাধান হয়ে যাবে। আলোচনা হলে সেখানে শীর্ষ নেতা জীবন সিংহকেও নিয়ে আসতে পারব। সরকার আলোচনায় ডাকলে দলের সবাই চলে আসবে।” মালখানের ওই কথাকে অবশ্য গুরুত্ব দিতে রাজি নয় পুলিশ। জেলা পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলেন, “সাংবাদিকদের কাছেই এটা শুনলাম। এ ধরনের কিছু আমাদের জানা নেই।”
বস্তুত, মালখানের সমস্ত দাবি নিয়ে গোয়েন্দা অফিসারদের মধ্যেও দ্বিমত রয়েছে। তাঁদের একাংশের মতে, মালখান কেএলও-র অ্যাকশন স্কোয়াডের একজন সক্রিয় সদস্য। চলতি কথায় যাকে ‘হিটম্যান’ বলা হয়। সেক্ষেত্রে সংগঠনের নীতি, সরকারের সঙ্গে আলোচনার রাস্তার মতো বিষয় নিয়ে জীবন সিংহ মালখানের সঙ্গে কতটা আলোচনা করেছেন, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। নিজেকে কেএলও-র অন্যতম বড়মাপের নেতা হিসাবে তুলে ধরার জন্য মালখান ওই সমস্ত দাবিও করতে পারেন। সেই জন্যই পুরো বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখার কাজ শুরু হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy