বারাসতের জনসভায় বিমান বসু ও গৌতম দেব। মঙ্গলবার সুদীপ ঘোষের তোলা ছবি।
গত ডিসেম্বর মাসেই কলকাতায় শহিদ মিনারের পাদদেশে লক্ষাধিক মানুষের ভিড় জমিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক গৌতম দেব। কিন্তু মঙ্গলবার উদ্বাস্তুদের নিয়ে গৌতমবাবুর ডাকা জমায়েত তার ধারে-কাছেও গেল না। মেরেকেটে হাজার আটেক মানুষ জড়ো হয়েছিলেন এ দিন বারাসতের কাছারি ময়দানে।
অথচ প্রস্তুতি ছিল মাস খানেক ধরে। উত্তর ২৪ পরগনার নানা প্রান্তে দলের মিটিং-মিছিলে গিয়ে দলের জেলা সম্পাদক গৌতম দেব বলছিলেন, মঙ্গলবারের জমায়েত হবে দেখার মতো। কিন্তু এ দিন তেমন ‘ম্যাজিক’ চোখে পড়েনি। বেশির ভাগ জায়গা ফাঁকাই পড়েছিল। এই জেলারই এক প্রান্ত বনগাঁয় ১৩ ফেব্রুয়ারি লোকসভা উপনির্বাচন। মনে হয়েছিল, ভোটের মুখে উদ্বাস্তুদের দাবি নিয়ে সভা করে আসলে ভিড় টেনে দলের নেতা-কর্মীদের হারানো মনোবল ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় আছেন গৌতমবাবু। কিন্তু ভিড়ের বিচারে সেই উদ্দেশ্য সফল হয়নি। অস্বস্তি কাটাতে গৌতমবাবু মঞ্চ থেকেই বলেছেন, “এটা শুধু উদ্বাস্তুদের সভা। সাধারণ নেতা-কর্মীদের ডাকা হয়নি। তা ছাড়া, গরমও পড়ে গেল হঠাত্। কড়া রোদের জন্যও অনেকেই ছড়িয়ে আছেন।”
অথচ সারদা-কাণ্ডে পরপর শাসক দলের নেতা-মন্ত্রী জেলে যাওয়ার পরে কোণঠাসা তৃণমূলের বিরুদ্ধে ঘর গোছানার মরিয়া চেষ্টা দেখা যাচ্ছে বামেদের মধ্যে। বর্ধমানে সিটুর সভায় সিপিএমের বিশাল জমায়েত দেখে রাজ্য নেতৃত্ব ধরেই নিতে শুরু করেছেন, মানুষ আবার তাঁদের সঙ্গে ফিরছেন। সোমবারই বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত বাগদায় বিমান বসুর কর্মিসভায় হাজার দু’য়েক লোকের ভিড় হয়। কিন্তু এ দিন গৌতমবাবুর আহ্বানে সভার চেহারা দেখে জেলা সিপিএমের অনেকেই বেশ হতাশ। সভা শেষে দলের এক প্রবীন জেলা নেতাকে বলতে শোনা গেল, “রাজ্যের দুই কেন্দ্রে উপনির্বাচনের আগে এই সমাবেশে ভিড় হলে ভাবমূর্তি অনেকটা ফিরত। কিন্তু এখন দেখছি আমাদের আরও অনেকটা পথ পেরনো বাকি।”
এ দিন সভা হয়েছে বামফ্রন্টের উদ্বাস্তু সংগঠন ‘সম্মিলিত কেন্দ্রীয় বাস্তুহারা পরিষদ’-এর আহ্বানে। নানা দাবি নিয়ে জেলাশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেন তাঁরা। পরে সভায় বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, “উদ্বাস্তু ও অনুপ্রবেশকারী আলাদা। উদ্বাস্তুদের সসম্মানে রাখতে হবে। নাগরিকত্ব দিতে হবে। তৃণমূল চুরি করছে। ওরা পালিয়ে, চুপিসারে ঘুরবে। উদ্বাস্তুরা কেন ও ভাবে ঘুরবেন?”
মতুয়া অধ্যুষিত বনগাঁয় লোকসভা উপনির্বাচন এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে উদ্বাস্তু-সমস্যা নিয়ে মুখ খুলছেন বিরোধীরাও। মতুয়াদের অনেকেই নানা সময়ে ও পার বাংলা থেকে এ পারে এসেছেন। এ দিনই গাইঘাটার সভায় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, “উদ্বাস্তুদের সমস্যার সমাধান সিপিএম, তৃণমূল কেউই করেনি। ওই দাবিতে তৃণমূল সংসদে কোনও আন্দোলনও করেনি।”
বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহও এ দিন স্বরূপনগরে প্রচারে এসে উদ্বাস্তুদের প্রসঙ্গ টেনেছেন। তাঁর কথায়, “মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরের (সদ্য মন্ত্রিত্ব ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন) ইচ্ছা ছিল শরণার্থীদের পুনর্বাসন দেবেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী চেয়েছিলেন অনুপ্রশকারীদের ভরসায় ভোটে জিততে। তাই কাজের সুযোগ না পেয়েই মন্ত্রিত্ব ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন মঞ্জুল।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy