Advertisement
০৬ অক্টোবর ২০২৪

পড়শির শংসাপত্র পেলে ঠাঁই মিলবে বিজেপিতে

নিয়ম-নীতি না বাড়-বৃদ্ধি। প্রশ্রয় পাবে কে? লোকসভা নির্বাচনে রাজ্য জুড়ে বড়সড় সাফল্য পেয়েছে দল। দু’বছর পরে বিধানসভা নির্বাচন। আপাতত তাকেই পাখির চোখ করে আড়েবহরে দলের সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি।

রাহুল রায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৪ ০২:৫৩
Share: Save:

নিয়ম-নীতি না বাড়-বৃদ্ধি। প্রশ্রয় পাবে কে?

লোকসভা নির্বাচনে রাজ্য জুড়ে বড়সড় সাফল্য পেয়েছে দল। দু’বছর পরে বিধানসভা নির্বাচন। আপাতত তাকেই পাখির চোখ করে আড়েবহরে দলের সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি।

কিন্তু দলীয় নিয়মনীতি শিথিল করে সদস্যের ভিড় বাড়ালে দলে ‘বেনো জলে’র অনুপ্রবেশ ঘটবে না তো?

রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর মধ্যেই এই প্রশ্ন ওঠায় সদস্য সংগ্রহ এবং দলীয় নীতির অনুশাসন--এ দু’য়ের মধ্যে সামঞ্জস্যের সন্ধান করছেন দলের রাজ্য নেতারা। রাজ্য কমিটির বৈঠকেও এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ যেমন স্পষ্টই বলছেন, “দলীয় নীতি ও শৃঙ্খলাকে এড়িয়ে নয়, দুয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য রেখেই নতুন মুখের সন্ধান করা হচ্ছে।”

সেই ‘সামঞ্জস্য’-এর প্রথম ধাপ হিসেবে দলে ‘অযাচিত অনুপ্রবেশ’ নিয়ন্ত্রণ করতে সভ্য-সংগ্রহ অভিযানে কার্যত দু’টি ভিন্ন তালিকা তৈরি করছে বিজেপি নেতৃত্ব। এ ব্যাপারে জেলা সম্পাদমণ্ডলীগুলিকে ইতিমধ্যেই সতর্ক করা হয়েছে। দলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, “সদস্য সংগ্রহের প্রশ্নে অযাচিত অনুপ্রবেশ রুখতে জেলা নেতৃত্বকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাঁরা যেন দু’টি ভিন্ন তালিকা তৈরি করেন।” দু’টি তালিকা কেন?

লোকসভা নির্বাচনে সাফল্যের পরে বিজেপিতে যোগ দিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন অনেকেই। জেলা স্তরে স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করে দলে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন কংগ্রেস, সিপিএম এমনকী রাজ্যের শাসকদলের বহু নেতা-কর্মীও। এমনই দাবি দলের শীর্ষ নেতৃত্বের। রাজনীতির ময়দান থেকে আসা কর্মীদের সঙ্গে রয়েছেন সাধারণ মানুষ এমনকী চিকিৎসক, সমাজসেবী, শিক্ষাব্রতীদের মতো সমাজের বিশিষ্ট জনেরাও।

কিন্তু যোগ দিতে চাইলেই কি তাঁরা স্বাগত?

বিজেপি-র রাজ্য সহ-সভাপতি সুভাষ সরকার বলেন, “রাজনৈতিক দল ছেড়ে আসা নেতা-কর্মীদের ব্যাপারে বাড়তি সতর্কতা তো নিতেই হচ্ছে।” দলের মস্তিষ্করা মনে করছেন, বামফ্রন্টের যে সব নেতা-কর্মীর আচরণে বীতশ্রদ্ধ হয়ে এ রাজ্যে পরিবর্তন এনেছিলেন মানুষ, তাঁদের অনেকেই এখন বিজেপিতে ভিড়তে চাইছেন। পাশাপাশি, তাঁরা মনে করছেন, ক্ষমতায় আসার তিন বছরের মধ্যেই ‘স্বরূপ’ দেখিয়েছে তৃণমূল। রাজ্যের শাসকদলের সেই সব নেতা-কর্মীদের একাংশও গোপনে যোগাযোগ করছেন বিজেপির সঙ্গে। কংগ্রেস থেকেও অনেকেই আসতে চাইছেন। রাজনীতির আঙিনা থেকে আসা সেই সব নেতা-কর্মীদের ব্যাপারে দল তাই একটু বেশি সতর্ক বলেই দাবি করছেন দলের মাথারা। তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের ব্যাপারে সেই সতর্কতার বহর আবার একটু বেশি। কেন?

সুভাষবাবুর কটাক্ষ, “যাদের উপরে আস্থা হারাল মানুষ তাদেরই আবার বিজেপিতে দেখবে মানুষ!” যে তৃণমূল নেতাদের উপরে মানুষ বিরক্ত হয়ে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে ভোট দিয়েছিল তারাই আবার দল বদলে পদ্মের আড়াল থেকে উঁকি দিলে দলের মুখ পুড়বে বলেই মনে করছেন তাঁরা। সে ক্ষেত্রে দলীয় ভাবেই তাদের সম্পর্কে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে--দল ছাড়তে চাওয়ার প্রকৃত কারণ কী। তা কি আদর্শের পরিবর্তনে দলত্যাগ, নাকি নিছকই বিজেপি শক্তিশালী হয়ে উঠছে দেখে দল বদল?

খোঁজ নেওয়া হচ্ছে--প্রথমত, ওই কর্মী বা নেতার বিরুদ্ধে কোনও তহবিল তছরুপের অভিযোগ আছে কিনা। দ্বিতীয়ত, ধর্ষণ বা ওই জাতীয় কোনও মামলায় তিনি জড়িয়ে কিনা। তৃতীয়ত, খুন বা দেশদ্রোহিতার কোনও মামলা রয়েছে কিনা। সর্বোপরি, পাড়া-পড়শির কাছে ওই নেতা-কর্মীর ‘পরিচিতি’ কেমন, খতিয়ে দেখা হচ্ছে তা-ও।

তবে, রাহুল অবশ্য জোর দিতে চাইছেন সামাজিক পরিচিতির প্রশ্নেই। তিনি বলেন, “ক্ষমতাসীন দল প্রভাব খাটিয়ে বিরোধী নেতা-কর্মীদের বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে দিতেই পারে। তাই এলাকায় তাঁদের সামাজিক পরিচয়টাই তাঁদের আসল পরিচয়পত্র।”

আসানসোল এবং দার্জিলিং আসনে জয়ী হয়েছে বিজেপি। দুই জায়গাতেই মানুষ, বিশেষত সদ্য-তরুণ তরুণীরা বিজেপি-র দিকে পা বাড়াচ্ছেন বলে দাবি। দলের বর্ধমান জেলা সভাপতি নির্মল কর্মকার বলেন, “লক্ষ্য ছিল এক লক্ষ সদস্য সংগ্রহ। এক মাসে ইচ্ছুকদের সেই সংখ্যাটা ৮০ হাজার ছুঁয়েছে।” তিনি জানান, দলীয় সতর্কতা মেনে প্রথমে স্বাগত জানানো হলেও নজর রাখা হচ্ছে দলের কর্মসূচিতে তিনি কতটা যোগ দিচ্ছেন। দিন কয়েক দেখে তবেই তাঁর কাছ থেকে দশ টাকা নিয়ে প্রাথমিক সদস্যপদ দেওয়া হচ্ছে। পরের ধাপ অর্থাৎ সক্রিয়-সদস্য হিসেবে তিনি গ্রহণযোগ্য কিনা তা তাঁর রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপেই প্রমাণ পাবে।

দলের দার্জিলিং জেলা সভাপতি রথীন্দ্র বসু বলছেন, “দলীয় শৃঙ্খলা সবার আগে, তাই ওই নিয়ম সকলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।”

দলে যোগ দিতে পা বাড়িয়ে আছেন অনেকেই। প্রশ্ন, দলীয় নীতির সেই ছাঁকনিতে কোনও ছিদ্র থাকছে না তো?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

rahul roy neighbour's certificate bjp
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE