Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Jaynagar Child Murder

নাবালিকা খুনে রণক্ষেত্র জয়নগর, ফাঁড়ি জ্বালিয়ে বিক্ষোভ, গ্রামবাসীদের মারে জখম ১২ পুলিশকর্মী

পুলিশ অবশ্য নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। বারুইপুর পুলিশ জেলার সুপার পলাশচন্দ্র ঢালি জানান, পুলিশ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করেছে। অভিযোগ পাওয়ার তিন-চার ঘণ্টার মধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে অভিযুক্তকে।

শনিবার দিনভর অগ্নিগর্ভ থাকল দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর।

শনিবার দিনভর অগ্নিগর্ভ থাকল দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২৪ ২২:৪৪
Share: Save:

ন’বছরের শিশুকে ধর্ষণ-খুনের অভিযোগ ঘিরে শনিবার দিনভর অগ্নিগর্ভ থাকল দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর। পুলিশ সঠিক সময় তদন্ত শুরু করলে নাবালিকার এই পরিণতি হত না, এমন দাবি করে সকাল থেকেই বিক্ষোভ দেখান জয়নগরের মহিষমারির বাসিন্দারা। পুলিশ ফাঁড়ি, পুলিশের গাড়ি জ্বালিয়ে চলে বিক্ষোভ। গ্রামবাসীদের মারে জখম হন ১২ জন পুলিশকর্মী। ক্ষোভের মুখে পড়তে হয় বারুইপুরের এসডিপিও-কেও। পাল্টা লাঠিচার্জ করে পুলিশ। ছোড়া হয় কাঁদানে গ্যাস।

পুলিশ অবশ্য নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। বারুইপুর পুলিশ জেলার সুপার পলাশচন্দ্র ঢালি জানান, পুলিশ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করেছে। অভিযোগ পাওয়ার তিন-চার ঘণ্টার মধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে অভিযুক্তকে। পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘শিশুটিকে খুনের আগে ধর্ষণ করা হয়েছিল কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরেই সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হবে।’’ শনিবার দুপুরেই ধৃতকে বারুইপুর আদালতে হাজির করানো হয়েছিল। পুলিশের আবেদন মেনে ধৃতকে সাত দিনের পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

শুক্রবার রাতে বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে মহিষমারি এলাকার একটি পুকুর থেকে উদ্ধার হয় নাবালিকার দেহ। পরিবার জানিয়েছে, চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত নাবালিকা। দুপুরে টিউশন পড়তে গিয়েছিল। তার পর আর বাড়ি ফেরেনি। মেয়েকে খুঁজে না পেয়ে মহিষমারি পুলিশ ফাঁড়িতে অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন পরিবারের লোকেরা। অভিযোগ, তাঁদের কথায় প্রথমে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। তাঁদের বলা হয়েছিল, জয়নগর থানায় অভিযোগ জানাতে হবে। পরিবারের দাবি, পুলিশ প্রথমেই তৎপর হলে নাবালিকাকে হয়তো বাঁচানো যেত। দেহ উদ্ধারের পর শনিবার সকাল থেকেই এলাকায় বিক্ষোভ শুরু হয়। এলাকায় গিয়ে তীব্র ক্ষোভের মুখে পড়েন কুলতলির তৃণমূল বিধায়ক গণেশচন্দ্র মণ্ডল। তাঁকে তাড়া করেন গ্রামবাসীরা। পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে দক্ষিণ বারাসাত থেকে মহিষমারি যাওয়ার রাস্তাও অবরোধ করা হয়েছিল। পাশাপাশি ঝাঁটা, লাঠি, বাঁশ নিয়ে মহিষমারি পুলিশ ফাঁড়িতেও চড়াও হন স্থানীয়েরা। থানার ভিতরে ঢুকে ভাঙচুর চালানো হয়। পরে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় গুরুত্বপূর্ণ নথি। আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় ফাঁড়ির বাইরে মোটরবাইক, সাইকেলে। প্রাণভয়ে লুকিয়ে পড়তেও দেখা যায় পুলিশকর্মীদের। গ্রামবাসীদের বিক্ষোভে পিছু হটতে হয় র‍্যাফকে। বারুইপুরের এসডিপিও অতীশ বিশ্বাসকেও লাঠি হাতে তাড়া করেন স্থানীয়েরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে জয়নগর থানা থেকে বিশাল পুলিশ বাহিনী পাঠানো হয়। কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশ। পাল্টা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি হয়। পুলিশকেও ইট ছুড়তে দেখা যায়। এর পরেই ঘটনাস্থলে যান এডিজি দক্ষিণবঙ্গ সুপ্রতিম সরকার, প্রেসিডেন্সি রেঞ্জের ডিআইজি আকাশ মাঘারিয়া, বারুইপুর পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার পলাশচন্দ্র ঢালি এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রূপান্তর সেনগুপ্ত।

জয়নগরকাণ্ডে রাজনৈতিক টানাপড়েনও শুরু হয়েছে। নাবালিকাকে ধর্ষণ-খুনের অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পরেই এলাকার পদ্মেরহাট গ্রামীণ হাসপাতালে পৌঁছে মৃতার দেহ সংরক্ষণের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ দেখান বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল। পরে সেখানে যান জয়নগরের সাংসদ প্রতিমা মণ্ডলও। সেখানে বচসায় জড়িয়ে পড়তে দেখা গিয়েছে দু’জনকে। প্রতিমার উদ্দেশে গো-ব্যাক স্লোগান দেওয়া হয়। জুতোও দেখানো হয় তাঁকে লক্ষ্য করে। রাতে কাঁটাপুকুর মর্গের সামনেও বিক্ষোভ দেখানো হয় অগ্নিমিত্রাকে। বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা মর্গের ভিতরে প্রবেশ করতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। তাকে কেন্দ্র করে হাতাহাতি বেধে যায় পুলিশ ও বিজেপি কর্মীদের মধ্যে। দুপুরে এলাকায় গিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন সিপিএমের মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায় এবং কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়েরাও।

কী বলছে পুলিশ?

পুলিশ সুপার জানান, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অভিযুক্তকে চিহ্নিত করে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁর দাবি, নাবালিকাকে খুনের কথা স্বীকার করেছেন অভিযুক্ত। কিন্তু ধর্ষণের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ‘‘আমরা রাত ৯টা নাগাদ খবর পেয়েছি। সঙ্গে সঙ্গে তদন্ত শুরু করি। কোথা থেকে শিশুটি নিখোঁজ হয়েছিল, কে শেষ বার তাকে দেখেছিল, এই তথ্যগুলি সংগ্রহ করা হয়েছিল তখনই। সাধারণত কোনও শিশু নিখোঁজ হলে অপহরণের মামলা রুজু করা হয়। এ ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছিল। রাতে অভিযুক্তকে চিহ্নিতও করা হয়। জয়নগর থানায় সাড়ে ১২টা নাগাদ মামলা রুজু হয়েছে। তিন-চার ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্তকে। অপরাধের কথা তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন। পুলিশ প্রয়োজনীয় সমস্ত পদক্ষেপ করেছে। তার পরেও এলাকায় ক্ষোভ কেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ পুলিশের কেউ অভিযোগ নিতে অস্বীকার করেছিলেন কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন এসপি। সেই সঙ্গে জানিয়েছেন, পুলিশ ক্যাম্পে আগুন ধরানোর ঘটনায় অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে পদক্ষেপ করা হবে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করবে পুলিশ।

অগ্নিমিত্রা-প্রতিমা বচসা

শনিবার দুপুরে পদ্মেরহাট গ্রামীণ হাসপাতালে সাংসদ প্রতিমা মণ্ডল গেলে হুলস্থুল কাণ্ড বেধে যায়। তৃণমূল সাংসদকে ঘিরে যখন স্থানীয়েরা ফুঁসছেন, সেই সময় সেখানে উপস্থিত হন অগ্নিমিত্রা। পুলিশ তাঁর পথ আটকালে তিনি প্রতিমার দিকে এগিয়ে যান। সাংসদের সঙ্গে কথা বলেন অগ্নিমিত্রা। তিনি বলেন, ‘‘আপনি এখানকার সাংসদ। আপনি অভিভাবক। আপনাকে জবাব দিতে হবে। আপনাকে জবাব দিতে হবে কেন পুলিশ এফআইআর নেয়নি? কেন পুলিশ নিষ্ক্রিয়? এভাবে কত দিন চলবে। আমরা দেহের সংরক্ষণ চাই।’’ পাল্টা প্রতিমা বলেন, ‘‘আপনার কথা মতো পুলিশ কাজ করবে না। আইন মতো কাজ করবে।’’ বিক্ষোভের মুখে পড়ে বিজেপিকে পাল্টা বিঁধেছেন প্রতিমা। তিনি বলেন, “এটাই ওঁদের শিক্ষা। আমি কাউকে কিছু বলিনি। কিন্তু ওঁরা শেখাচ্ছে, আমার শাড়ি খুলে দেওয়া হোক। এতে আমি ভয় পাই না।”

অন্য বিষয়গুলি:

jaynagar Rape and Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy