তারাপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিত্যক্ত ঘর। ছবি: অনির্বাণ সেন
ঠেকে শিখল প্রশাসন!
সাত্তোর-কসবা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিত্যক্ত ঘর থেকে বিপুল তাজা বোমা ও বোমা তৈরির মশলা উদ্ধার হওয়ার পরে একটি নতুন নির্দেশিকা জারি করেছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। ওই নির্দেশিকায় রাজ্যের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির পরিত্যক্ত তালিকা তৈরি করে পূর্ত দফতরকে দিয়ে ভেঙে ফেলার কথা বলা হয়েছে।
ঘটনা হল, জেলার এমন অনেক স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে, যা দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভবনগুলি আগাছায় ঢেকে গিয়েছে। তবে জেলায় ৫৮টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ১৯টি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং ৪৮৪টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র আছে। উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলির কেবলমাত্র ভবন ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির ভবন-সহ স্টাফ কোয়ার্টারগুলি কোথায়, কোন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভবন পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে তা জানাতে পারেনি বীরভূম জেলা স্বাস্থ্যদফতর।
প্রসঙ্গত, স্বাস্থ্যকেন্দ্র বাঁচাতে এবং কোথাও বা চিকিৎসকের বদলি এ সমস্ত ঘটনাগুলি স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে উপযুক্ত পরিষেবা পাওয়া নিয়ে বিস্তর অভাব-অভিযোগ রয়েছে। এই সব সমস্যা বা অভাব অভিযোগ নতুন কিছু নয়। তবে এক সপ্তাহ আগে জেলার সাত্তোর কসবা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যখন বোমা পাওয়া যায় তখন তাকে সমাজবিরোধীদের কার্যকলাপ বলে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। যে মানসিকতা থেকে এই ধরণের কার্যকলাপই হোক না কেন, জেলার কেবল মাত্র একটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরিত্যক্ত কোয়ার্টারে বোমা উদ্ধারের ঘটনায় স্বাস্থ্য দফতর শেষমেষ নড়ে চড়ে বসল। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী শুক্রবার জানিয়েছেন, বীরভূমের ওই ঘটনা একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হলেও যথেষ্ট ভাবার আছে। সেই জন্য স্বাস্থ্য দফতর থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, রাজ্যের বিভিন্ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরিত্যক্ত ভবনের তালিকা তৈরি করে সেটি পূর্ত দফতেকে দিয়ে ভেঙে ফেলার জন্য। প্রত্যেকটি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং এর পাশাপাশি যে সমস্ত স্বাস্থ্য কেন্দ্রের যে ভবনগুলি পরিত্যক্ত নয় সেগুলি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের ভালো ভাবে সুরক্ষিত রাখার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে কোনও খারাপ কিছু বুঝলে প্রয়োজনে পুলিশকে জানানোরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিকর্তা বলেছিলেন, “স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভিতরে বোমা মজুত থাকবে এই ধরনের ঘটনা অবশ্যই কাম্য নয় এবং এটা কারও ভাল লাগারও বিষয় নয় বলে আমি মনে করি।” রাজ্যের আর এক স্বাস্থ্য অধিকর্তা (ডাইরেক্টর অফ মেডিক্যাল এডুকেশন) সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভিতর বোমা থাকার ঘটনার বিষয়টা দেখার জন্য অন্য আধিকারিক আছেন। তবে যারা এই ধরণের কাজ করেন তাঁরা সমাজবিরোধী ছাড়া আর কেউ নয়। কারণ, স্বাস্থ্যকেন্দ্র মানে সেখানে মানুষের স্বাস্থ্য পরিষেবা পাওয়ার কথা। বোমা মজুত করার জায়গা নয়।”
রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তার নির্দেশ অবশ্য এখনও দেখেননি বলে শুক্রবার দুপুরে বীরভূম জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক কার্তিককুমার মণ্ডল জানিয়েছিলেন। তিনি তখন বলেন, “আমি ছুটিতে ছিলাম। আজকে কাজে যোগ দিয়েছি। তবে এই ধরনের নির্দেশ পাওয়ার পর অবশ্যই সেই নির্দেশ জেলার সমস্ত হাসপাতালের জন্য বিএমওএইচ এবং এসিএমওএইচদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। একই সঙ্গে জেলা এবং মহকুমা হাসপাতাল সুপারদের সেই নির্দেশ পাঠিয়ে দেওয়া হবে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মোতাবেক কাজ করা হবে।” সেই সঙ্গে এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আগামী ৭ তারিখ বৈঠকে এই নিয়ে আলোচনা করা হবে বলে সিএমওএইচ জানিয়েছেন। বীরভূম জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী বলেন, “কেন অনেক সরকারি অফিসের ভবন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে, এখন সেখানে কেউ যদি কিছু অপরাধমূলক কাজকর্ম করে তা হলে সব জায়গায় তো প্রশাসনের নজর দেওয়া মুশকিল। তবে এক্ষেত্রে কী নির্দেশ এসেছে দেখে সেই মতো জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অন্য দিকে জেলা রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারপার্সন তথা রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বোমা রাখার ঘটনা একটি অনভিপ্রেত ঘটনা। কে বা কারা রেখেছিল সেটা পুলিশ তদন্ত করে দেখছে। স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভিতর যারাই বোমা মজুত করে রাখুক তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশকে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তার নির্দেশ কার্যকর করার জন্য রোগীকল্যাণ কমিটিতে আলোচনা করা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy