নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র আগাম জানিয়ে দেওয়ার টোপ দিয়ে ফাঁদ পেতেছিল ঠগ-চক্র। রেলের গ্রুপ-ডি পদপ্রার্থীদের অনেকে তাতে পা-ও দিয়েছিলেন। এবং প্রতারকদের হাতে তাঁরা কার্যত বন্দি হয়ে পড়েছিলেন। শেষমেশ রেল-কর্তৃপক্ষের তৎপরতায় তারা রক্ষা পেয়েছেন। তবে ঠগেরা গা ঢাকা দিয়েছে।
পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব রেলে গ্রুপ-ডি কর্মী নিয়োগের পরীক্ষা শুরু হয়েছে রবিবার সকালে। আর এই ঘটনাটি কাকভোরের। আগে প্রশ্ন জেনে বাজিমাত করার আশায় প্রতারকদের গোপন প্রস্তাবে রাজি হয়েছিলেন ৭৪ জন পরীক্ষার্থী। ঠিক হয়, ওঁরা সকলে মিলে ‘এজেন্ট’কে দু’লাখ টাকা দেবেন। বিনিময়ে ‘এজেন্ট’ তাঁদের হাতে প্রশ্নপত্রের কপি তুলে দেবে। কোথায় বসে লেনদেন হবে, তা-ও ঠিক ছিল। জায়গাটা হল নদিয়ার চাকদহে শিলিন্দা গ্রামের একটি বাড়ি।
কিন্তু এমন একটা ফাঁদ যে পাতা হচ্ছে, রেলের ভিজিল্যান্স দফতর খবরটা আগেই পেয়ে যায়। অফিসারেরা তক্কে তক্কে ছিলেন। এমনকী, শিলিন্দা গ্রামের বাড়িটির আশপাশে তাঁরা আগে গিয়ে ‘রেকি’ করেও এসেছিলেন। তার পরে আঁটঘাট বেঁধে শনিবার গভীর রাতে ভিজিল্যান্স সেখানে হানা দেয়, আরপিএফ ও জেলা পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে। দেখা যায়, বাড়ির দরজায় বাইরে থেকে তালা মারা! তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকে ৭৪ জন পরীক্ষার্থীর সন্ধান মেলে। তাঁদের মধ্যে ভিন রাজ্যের বেশ কিছু যুবকও রয়েছেন। কিন্তু ওঁদের আটকে রাখা হল কেন?
রেল-সূত্রের খবর: জিজ্ঞাসাবাদের মুখে ওঁরা জানিয়েছেন, প্রশ্নপত্র দেওয়ার নাম করে ‘এজেন্ট’রা তাঁদের ওই বাড়িতে এনে তুলেছিল। টাকা ও প্রশ্নপত্র আদান-প্রদানের আগে যাতে কেউ চলে যেতে না-পারে, সে জন্য বাড়িতে বাইরে থেকে তালা মেরে দেওয়া হয়। ওঁরা অবশ্য কেউ টাকা দেননি। প্রশ্নপত্রও পাননি। ‘‘লেনদেন হওয়ার আগেই ভিজিল্যান্স গিয়ে হাজির হয়। বেগতিক বুঝে এজেন্টরাও আর ও-দিক মাড়ায়নি। তারা গা ঢাকা দিয়েছে।” এ দিন বলেন এক রেল-কর্তা। তাঁদের দাবি, পুরোটাই ঠগবাজি। রেলের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র আগাম জেনে যাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। টাকা পেলে পরীক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হতো ভুয়ো প্রশ্নপত্র, আসল পরীক্ষার সঙ্গে যার কোনও মিলই থাকত না।
ঠগবাজেরা কারা? কারও হদিস পাওয়া গিয়েছে?
পুলিশ-সূত্রের খবর: পরীক্ষার্থীরা এক জনের কথা বলতে পেরেছেন। তার নাম প্রশান্ত বিশ্বাস, বাড়ি উত্তর চব্বিশ পরগনার বাগদা থানা-এলাকায়। ওই তল্লাটে প্রশান্তের একটা কোচিং সেন্টারও আছে। প্রশান্তের খোঁজে তল্লাশি চলছে। তদন্তকারীদের দাবি, প্রশ্ন ফাঁসের টোপ দিয়েই শুধু নয়, প্রশান্তেরা রেলের চাকরিতে নকল নিয়োগপত্র দিয়েও ছেলেমেয়েদের থেকে চড়া টাকা আদায় করত। বস্তুত এমনই একটি ঘটনা সম্প্রতি ধরা পড়েছে খাস দক্ষিণ-পূর্ব রেলের সদর দফতরে। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ জানাচ্ছেন, ক’দিন আগে তাঁদের সদর অফিসে চার যুবককে সন্দেহজনক ভাবে ঘোরাফেরা করতে দেখে আরপিএফ তাদের আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা লোক ঠকানো নিয়োগপত্রের এজেন্ট। “ওদের কাছে বেশ কিছু নকল নিয়োগপত্রও পাওয়া যায়। চার প্রতারককে কলকাতা পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।” বলেন সঞ্জয়বাবু।
রেলওয়ে রিক্রুটমেন্ট সেল (আরআরসি)-এর তত্ত্বাবধানে এ দিন পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব রেলে গ্রুপ-ডি পদে নিয়োগের যে পরীক্ষা শুরু হয়েছে, পরবর্তী চার রবিবারও তা চলবে। পূর্ব রেলে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১২ লক্ষ, দক্ষিণ-পূর্বে সাড়ে চার লক্ষের বেশি। দুই রেল মিলিয়ে শূন্য পদ মোটামুটি সাড়ে পাঁচ হাজার। পরীক্ষার জেরে এ দিন শিয়ালদহ শাখায় যাতায়াতে বিস্তর দুর্ভোগ হয়েছে। এমনিতেই রবিবার শিয়ালদহে ট্রেন কম থাকে। তার উপরে হাজার হাজার পরীক্ষার্থীর ভিড়। ভিড়ের ট্রেনে উঠতে গিয়ে অনেকে প্ল্যাটফর্মে পড়েও যান। সব মিলিয়ে ভোগান্তির একশেষ হতে হয় সাধারণ যাত্রীদের।
হাওড়া ডিভিশন অবশ্য এই পরীক্ষার জন্য এ দিন নিয়মিত সংখ্যায় ট্রেন চালিয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব রেলও অতিরিক্ত ট্রেন চালিয়েছে। কিন্তু শিয়ালদহ ডিভিশনের কর্তারা কেন সেটা মাথায় রাখলেন না, তার কোনও ব্যাখ্যা মেলেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy