Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

দেবের জন্য পিছে কদম, লকেটে পাগল ঘাসফুলও

সেই কবে দলের সঙ্কটের সময়ে লেনিন লিখেছিলেন ‘ওয়ান স্টেপ ফরওয়ার্ড, টু স্টেপস ব্যাক’। সিপিএমের ভরাডুবির পরে আর সব ভুললেও সেই শিরোনাম ভোলেননি কিছু কমরেড। বরং গৌতম দেবের চেয়ে শুধু দেবই যে টানে বেশি, দু’কদম পিছু হেঁটে সেটাই তাঁরা দেখিয়ে দিলেন।

দেব মহিমা। কৃষ্ণগঞ্জে তৃণমূলের প্রচার মঞ্চে সাংসদ দীপক অধিকারি। —নিজস্ব চিত্র।

দেব মহিমা। কৃষ্ণগঞ্জে তৃণমূলের প্রচার মঞ্চে সাংসদ দীপক অধিকারি। —নিজস্ব চিত্র।

সুস্মিত হালদার
কৃষ্ণগঞ্জ শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:০০
Share: Save:

সেই কবে দলের সঙ্কটের সময়ে লেনিন লিখেছিলেন ‘ওয়ান স্টেপ ফরওয়ার্ড, টু স্টেপস ব্যাক’।

সিপিএমের ভরাডুবির পরে আর সব ভুললেও সেই শিরোনাম ভোলেননি কিছু কমরেড। বরং গৌতম দেবের চেয়ে শুধু দেবই যে টানে বেশি, দু’কদম পিছু হেঁটে সেটাই তাঁরা দেখিয়ে দিলেন।

বুধবার পড়ন্ত বিকেলে মাজদিয়া রেলবাজার হাইস্কুলের মাঠ থেকে ভেসে আসছিল “আপনারা শান্ত হোন। সিপিএমের মিছিলের পিছনেই দেবের গাড়ি। মিছিল চলে গেলেই তিনি আমাদের মধ্যে চলে আসবেন।”

মাঠের পাশ দিয়ে তখন ঢিমে তেতালায় এগোচ্ছে মিছিলটা। হাতে-হাতে লালঝান্ডা, গলায় ঝাঁঝ হারানো স্লোগান। গন্তব্য গৌতম দেবের সভা। দেবের নামটা ভেসে আসতেই আচমকা হাঁটার গতি শ্লথ হয়ে যায় মিছিলে হাঁটা দুই তরুণীর। একেবারে সেই এক কদম আগে তো দু’কদম পিছে... এ ভাবে পিছিয়ে পড়তে-পড়তেই মিছিল যখন ঠিক স্কুলমাঠ পেরিয়ে যাচ্ছে, দুই সখীতে রাস্তা ছেড়ে টুক করে মাঠে...।

“সিপিএম করি, তা বলে দেবকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ কেউ হারায় নাকি!” বলেই ফিক করে হেসে ফেলেন এক জন। অন্য জন আবার ছক কষেই পথে নেমেছিলেন। চোখ গোল করে বলেন “দেবকে দেখতে যাব বললে বাড়ি থেকে ছাড়ত না! দেবকে দেখে আবার পার্টির বাসেই বাড়ি ফিরব।”

কৃষ্ণগঞ্জের জনসভায় গৌতম দেব। মঞ্চে ঘুঘড়াগাছিতে
মৃতা অপর্ণা বাগের মেয়ে দেবিকা বাগ। —নিজস্ব চিত্র।

এই রাস্তা বদল অবশ্য শুধু যে লালপার্টির হয়েছে, তা তো নয়। ফুলের বনেও দখিনে হাওয়া লেগেছে। পদ্ম দেখে ঘাসফুলের এমনই চোখ টেরিয়েছে যে ‘দিদি’ বলে ফুঁকে ওঠারও সময় পায়নি লরি ভর্তি লোক।

নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচনে প্রচারের শেষ ল্যাপ ছিল এ দিনই। সেই শেষবেলায় ভোটারের চোখ কপালে তুলতে মিটিং-মিছিল, মাইক ফোঁকা, আসমানের তারা হুডখোলা জিপের মাথায় এনে দেখানোর বন্দোবস্ত করেছিল যে যত পারে। ভরদুপুরে অভিনেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে চৌগাছা সর্দারপাড়া মোড় থেকে খালবেয়ালিয়া মোড়ের দিকে এগোচ্ছিল বিজেপির বিশাল মিছিল। পিছনে কয়েকশো মোটরবাইক, গোটা পঞ্চাশেক গাড়ি।

কৃষ্ণগঞ্জ পেট্রোল পাম্প পেরিয়ে এগোতেই উল্টো দিক থেকে প্রায় মুখোমুখি তৃণমূল সমর্থক বোঝাই বাস। আচমকা থেমে যায় বাসের ভিতর থেকে ভেসে আসা ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিন্দাবাদ’ স্লোগান। বরং ‘ওরে কে রে!’ করতে করতেই বাসের জানলা দিয়ে প্রায় অর্ধেক ঝুলে পড়েন মা-মাটি-মানুষেরা। কেউ হাত বাড়িয়ে এক বার ছুঁয়ে দিতে চান লকেটকে। কেউ শুধু মোবাইলে ছবি পেলেই খুশি। লকেটও দিব্যি হাত নাড়েন, হেসে চলেন।

মাজদিয়ার মাঠের পাশ দিয়ে সিপিএমের মিছিল বেরিয়ে যাওয়ার পরেই ঢুকে পড়ে দেবের গাড়ি। প্রায় উন্মাদ হয়ে যায় জনতা। ভিড় ঠেলে কোনও রকমে মঞ্চে ওঠেন দেব। গোটা মাঠ চিৎকারে ফেটে পড়ে। চনমনে এক কিশোরী নায়ককে তাক করে ফুল ছোড়ে। জবাবে দেব ছুড়ে দেন চুমু। ঝাঁক-ঝাঁক মোবাইল ক্যামেরায় ছবি উঠতে থাকে খচাখচ...।

রাস্তার ও পারে খাড়া ছিলেন জনা তিন-চার খাকি উর্দি। বিরস মুখে এক জন বলেই ফেলেন, “আমরা মরছি ডিউটি করে, আর এদের ফূর্তি দেখো। ভোট হচ্ছে না পিকনিক, কে জানে!”

অন্য বিষয়গুলি:

by-election krishnaganj susmit halder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE