সাংসদ তহবিলের প্রকল্প অনুমোদনে কেন দেরি হচ্ছে, সেই প্রশ্ন তুলে রাজ্য প্রশাসনের কাছে ক্ষোভ উগরে দিলেন সাংসদেরা।
তহবিল থেকে প্রকল্পের সুপারিশ হয়ে গিয়ে দিনের পর দিন পড়ে থাকছে অথচ টাকা আসছে না, এমন ঘটনার ভুক্তভোগী শাসক দলের সাংসদেরাও। তবে স্বাভাবিক ভাবেই তাঁরা এই নিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে বেশি উষ্মা প্রকাশ করতে পারছেন না।
কিন্তু বিরোধীদের সেই বাধ্যবাধকতা নেই! নবান্নে বুধবার মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠকে তাই ক্ষোভ গোপন করেননি প্রধান বিরোধী দল সিপিএমের প্রতিনিধিরা। সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় ও সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অমিয় পাত্রের সঙ্গে রীতিমতো বাদানুবাদ বেধেছিল মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রের!
রাজ্য থেকে লোকসভা ও রাজ্যসভার সব সাংসদকে এ দিন নবান্নে বৈঠকে ডাকা হয়েছিল তাঁদের তহবিল খরচ নিয়ে আলোচনার জন্য। বেশির ভাগ সাংসদই অবশ্য সেখানে গরহাজির ছিলেন। অনেক সাংসদই তাঁদের প্রতিনিধি পাঠিয়েছিলেন। তৃণমূলের তাপস পাল, সন্ধ্যা রায়, আহমেদ হাসান
(ইমরান), অনুপম হাজরাদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন সিপিএমের ঋতব্রত। রাজ্যসভায় সিপিএমের আরও দুই সাংসদ তপন সেন ও সীতারাম ইয়েচুরির প্রতিনিধি হিসাবে গিয়েছিলেন অমিয়বাবু এবং সুখেন্দু পানিগ্রাহী। কংগ্রেসের প্রদীপ ভট্টাচার্যও প্রতিনিধি পাঠিয়েছিলেন। বিজেপি-র দুই সাংসদকেও বৈঠকে দেখা যায়নি। সাংসদ বা তাঁদের প্রতিনিধিদের অভিযোগ, তাঁরা কোনও প্রকল্প আটকে থাকার কথা বললেই মুখ্যসচিব বৈঠকে বলছিলেন ৭৫ দিনের আগে তিনি কোনও জবাব দিতে বাধ্য নন! সেই সূত্রেই প্রতিবাদ করেন অমিয়বাবু ও ঋতব্রত। সাংসদদের প্রশ্ন, জবাব না থাকলে এমন বৈঠক ডাকার আর অর্থ কী?
নিয়ম অনুযায়ী, সাংসদ তহবিল থেকে কোনও প্রকল্পের সুপারিশ এলে সর্বোচ্চ ৭৫ দিনের মধ্যে তার অনুমোদন দিতে হবে। সেটাকেই ‘ঢাল’ হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে দেখে অমিয়বাবু এ দিন বৈঠকে প্রশ্ন তোলেন, প্রাক্তন সাংসদ শ্যামল চক্রবর্তীর সুপারিশ করা প্রকল্পও তো এখনও ছাড়পত্র পায়নি!
ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা পুরসভায় পাঠানো নভেম্বরের চিঠি দেখিয়ে বলেন, ৩০টি প্রকল্পে ২ কোটি ৩৫ হাজার টাকা দিতে চান। অথচ পুরসভার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা শুধু বলে পরে আসুন! উন্নয়নে সাংসদ তহবিল খরচে এত
গড়িমসি কেন? বৈঠকের পরে অমিয়বাবু বলেন, “৭৫ দিন অপেক্ষা করা তো অধিকার নয়! সেটা সর্বোচ্চ সীমা। আধিকারিকদের সেটাই বোঝাতে চেয়েছি।” আর ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “রাজ্য প্রশাসনের মনোভাব যে মোটেই সহযোগিতামূলক নয়, তা জানিয়ে রাজ্যসভার চেয়ারম্যানকে চিঠি দিচ্ছি।”
মুখ্যসচিব অবশ্য এই নিয়ে বাইরে মুখ খোলেননি। তবে নবান্ন সূত্রের খবর, সাংসদ বা তাঁদের প্রতিনিধিদের অভিযোগ শুনে বৈঠকে উপস্থিত ৭ জেলাশাসককে দ্রুত প্রকল্পের কাজ শেষ করে ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট (ইউসি) জোগাড় করার নির্দেশ দেন মুখ্যসচিব। প্রশাসনের তরফে ইউসি পেতে দেরি হওয়ায় তহবিলের টাকা যে আটকে থাকছে, তার ভুক্তভোগী কেংগ্রেসের প্রদীপবাবুও। প্রদীপবাবু উদাহরণ দিয়েছেন, পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় একটি ‘আদর্শ গ্রাম’ গড়ে তুলতে তিনি এক প্রস্ত টাকা দিয়েছেন। কিন্তু ইউসি না পাওয়ায় গত মার্চের কিস্তির টাকা তিনি পেয়েছেন মাত্র কিছু দিন আগে!
নবান্নের খবর, সাংসদ তহবিল খরচের নির্দেশিকা পরিমার্জন করে স্থায়ী পরিকাঠামো উন্নয়নের উপরে জোর দিতে বলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। তৃণমূল সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “আগের বছর যেমন অ্যাম্বুল্যান্স দেওয়া বন্ধ ছিল। এ বার সেই নিয়ম কিছুটা শিথিল করে বলা হয়েছে, এ বার অ্যাম্বুল্যান্স দেওয়া যাবে। কিন্তু কাকে কী পরিস্থিতিতে দেওয়া হচ্ছে, তা বিচার করবে চার সদস্যের কমিটি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy