মঞ্চ বেঁধে দলীয় পতাকা নিয়ে অবস্থান শুরু করলেন তৃণমূল নেতারা।
আগে তারা একপ্রস্থ বিক্ষোভ দেখিয়েছে। আজ, শনিবার ফের কারখানার গেটে বিক্ষোভ দেখানোর কথা বিজেপি-র। তার আগেই শুক্রবার শালবনিতে জিন্দলদের প্রকল্প এলাকায় একেবারে মঞ্চ বেঁধে দলীয় পতাকা নিয়ে আন্দোলন শুরু করে দিল তৃণমূল। এ দিন থেকে জমিদাতারাও অবস্থান শুরু করেছেন। তবে একেবারে পৃথক মঞ্চে। তৃণমূলের মঞ্চে দলের নেতারা থাকলেও জমিদাতাদের কাউকে দেখা যায়নি। জমিদাতা সংগঠন ‘শালবনি জেএসডব্লিউ বেঙ্গল স্টিল লিমিটেড ল্যান্ড লুজার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক পরিষ্কার মাহাতোর সাফ কথা, “ওঁরা আমাদের জন্য আন্দোলন করতে এসেছেন, সে জন্য ধন্যবাদ। কিন্তু কোনও রাজনৈতিক দলের পতাকার নীচে আমরা যাব না। আমাদের আন্দোলন আলাদা।”
জমিদাতাদের আন্দোলনের প্রতি অবশ্য বৃহস্পতিবারই সমর্থন জানিয়েছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। জমিদাতা সংগঠনের ব্যাজ পরেই বিক্ষোভে সামিল হয়েছিলেন ব্লক তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ। এ দিন একেবারে তৃণমূলের পতাকা নিয়ে দলের জেলা নেতারা আন্দোলন শুরু করেন। মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবিও ছিল। মঞ্চে এ দিন হাজির ছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়, দুই কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষ, নির্মল ঘোষ ও মেদিনীপুরের বিধায়ক মৃগেন মাইতি, শালবনি ব্লক সভাপতি নেপাল সিংহ। দীনেনবাবু বলেন, “জমিদাতারা তাঁদের মতো আন্দোলন করছেন। আমরা ওঁদের পাশে থাকতে আমাদের মতো আন্দোলন করছি। এখানে রাজনীতি করতে আসিনি।” আর প্রদ্যোৎবাবুর বক্তব্য, “রাজ্যকে বঞ্চিত করতেই কেন্দ্রীয় সরকার কাঁচামাল জোগানে সাহায্য করছে না। রাজ্যবাসী বঞ্চনা নেবে না।”
গত রবিবার কলকাতায় জিন্দল গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর সজ্জন জিন্দল শালবনিতে ইস্পাত প্রকল্পের কাজ আপাতত স্থগিত থাকছে বলে ঘোষণা করেন। সোমবার কারখানার গেটের সামনে বিজেপি-র নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ দেখান। সেই বিক্ষোভে অবশ্য জমিদাতাদের কাউকে সে ভাবে দেখা যায়নি। মঙ্গলবার আবার এলাকায় মিছিল করে ডিওয়াইএফ। বৃহস্পতিবার থেকে আন্দোলন শুরু করে জমিদাতাদের সংগঠন। এ দিন তৃণমূলের মঞ্চ থেকে ফুট পাঁচেক দূরে মঞ্চ বেঁধে তারা অবস্থান শুরু করেছে।
আগামী সাত দিন তৃণমূলের এই অবস্থান চলবে বলে নেতৃত্ব জানিয়েছেন। জমিদাতাদের নেতা পরিষ্কার মাহাতো ভাল সংগঠক বলেও এ দিন উল্লেখ করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। এ দিন যখন তৃণমূলের ধর্না মঞ্চ থেকে যখন আওয়াজ উঠেছে, ‘অবিলম্বে কারখানা চালু করতে হবে’, তখন জমিদাতাদের মঞ্চ থেকে আওয়াজ উঠেছে, ‘করতে হবে, করতে হবে’। জমিদাতাদের সুরেই তৃণমূল নেতৃত্বও দাবি করেছেন, কারখানা দ্রুত চালু করতে হবে, না চালু করলে জমি ফেরত দিতে হবে। যতদিন না জমি ফেরত না দেওয়া হচ্ছে ততদিন মাসে ৫ হাজার টাকা করে ভাতা দিতে হবে।
শালবনিতে অবস্থান জমিদাতাদের।
কারখানার অচলাবস্থার জন্য জমিদাতারা অবশ্য রাজ্য ও কেন্দ্র দুই সরকারের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। পোস্টারে কটাক্ষ করে লেখা হয়েছে, ‘এশিয়ার বৃহত্তম অদৃশ্যমান ইস্পাত প্রকল্প শালবনিতে জিন্দলদের ইস্পাত প্রকল্প। তা না দেখতে পাচ্ছেন রাজ্যের কোনও মন্ত্রী, না দেখতে পাচ্ছেন কেন্দ্রের কোনও মন্ত্রী। যাতে খালি চোখে রাজ্যের সব মানুষ দেখতে পায় সে জন্যই আমাদের এই আন্দোলন।’
এ দিকে বিজেপি-র অভিযোগ, তাদের ঠেকাতেই একেবারে দলীয় পতাকা নিয়ে আসরে নেমেছে তৃণমূল। বিজেপি-র পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের আন্দোলনে বাধা দিতেই তৃণমূল এই কৌশল নিয়েছে।” যদিও তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেনবাবুর বক্তব্য, “কারখানার জন্মলগ্ন থেকে নানা সমস্যায় বিজেপি-র কখনও দেখা মেলেনি। এলাকায় শান্তির পরিবেশ তৈরি, জমি নেওয়া, রাস্তা, ট্রেন লাইন, জলের ব্যবস্থা - সব ব্যাপারেই সাহায্য করেছে রাজ্য সরকার। এখন বিজেপি গণ্ডগোল বাধাতে এখানে হাজির হয়ে যাচ্ছে।” জেলা রাজনীতির পর্যবেক্ষকের একটা বড় অংশের ধারণা, জমিদাতা ও স্থানীয় মানুষের ক্ষোভকে পুঁজি করে বিরোধীরা যাতে শক্তি বাড়াতে না পারেন, সে জন্যই তৃণমূল তড়িঘড়ি কৌশলে আসরে নেমেছে।
ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy