Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪

টাকা তুলতে ব্যবসায়ী অপহরণের ছক কেএলও-র

বহু কোটি টাকার কারবার করেন, উত্তরবঙ্গের এমন জনা আষ্টেক ব্যবসায়ীর জন্য আচরণবিধি, বিশেষত লোকসভার ভোট প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের চলাফেরায় কিছু নিয়ন্ত্রণ আনার পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ। জঙ্গি সংগঠন কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশন (কেএলও) ওই ব্যবসায়ীদের কাউকে অপহরণ করে মোটা টাকা মুক্তিপণ চাইতে পারে বলে গোয়েন্দা সূত্রের খবর। লোকসভা ভোট প্রক্রিয়া চলাকালীনই কেএলও এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে ডুয়ার্সের পরিস্থিতি অশান্ত করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে গোয়েন্দারা জেনেছেন।

সুরবেক বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৪ ০৪:১৫
Share: Save:

বহু কোটি টাকার কারবার করেন, উত্তরবঙ্গের এমন জনা আষ্টেক ব্যবসায়ীর জন্য আচরণবিধি, বিশেষত লোকসভার ভোট প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের চলাফেরায় কিছু নিয়ন্ত্রণ আনার পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ। জঙ্গি সংগঠন কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশন (কেএলও) ওই ব্যবসায়ীদের কাউকে অপহরণ করে মোটা টাকা মুক্তিপণ চাইতে পারে বলে গোয়েন্দা সূত্রের খবর। লোকসভা ভোট প্রক্রিয়া চলাকালীনই কেএলও এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে ডুয়ার্সের পরিস্থিতি অশান্ত করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে গোয়েন্দারা জেনেছেন।

পুলিশি সূত্রের খবর, কেএলও-র সম্ভাব্য ‘টার্গেট’ ওই ব্যবসায়ীদের অধিকাংশই আলিপুরদুয়ার মহকুমার বাসিন্দা। বাকিরা মালবাজার ও জলপাইগুড়ির। তাঁদের মধ্যে কেউ কাঠের ব্যবসায়ী, কয়েক জন চা বাগানের মালিক। দু’-এক জনের যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানা রয়েছে।

ওই ব্যবসায়ীদের একা প্রাতর্ভ্রমণে বেরোতে নিষেধ করেছে পুলিশ। বলা হয়েছে, ব্যক্তিগত বা ব্যবসার কাজে কোথাও যেতে হলে তাঁরা যেন তিন-চার জনকে সঙ্গে নেন। একই পথ ব্যবহার না করে তাঁরা যেন একেক দিন একেক রাস্তা ধরে যাওয়া আসা করেন। সম্ভব হলে সূর্য ডোবার আগে কাজ শেষ করে তাঁদের বাড়ি ফিরতে বলেছে পুলিশ। ব্যবসার কাজের কথা বলে অপরিচিত কোনও ব্যক্তি কোথাও ডাকলে সঙ্গে সঙ্গে সে কথা পুলিশকে জানাতেও বলা হয়েছে।

মালখান সিংহ-সহ সংগঠনের পাঁচ শীর্ষনেতা গত চার মাসে ধরা পড়ে গেলেও ভোটের আগে কেএলও-কে নিয়ে পুরোপুরি স্বস্তিতে নেই পুলিশ। বরং, টম অধিকারী, মালখান সিংহ, ইকবাল সিদ্দিকি, তরুণ থাপা, মঞ্চলাল সিংহদের মতো শীর্ষনেতাদের গ্রেফতার হওয়ার বদলা নিতে কেএলও নাশকতা ঘটাবে বলেই গোয়েন্দারা আশঙ্কা করছেন। তাঁদের বক্তব্য, কেএলও এটা দেখানোর মরিয়া চেষ্টা করবে যে, ওই পাঁচ নেতার গ্রেফতার কিংবা ‘বিশ্বাসঘাতক’ ও ‘পুলিশের চর’ রাজীব কাথাই সংগঠন ছেড়ে যাওয়ার পরেও তাদের দমানো যায়নি এবং তারা যে কোনও মুহূর্তে হামলা চালানোর ক্ষমতা রাখে। তা ছাড়া, দেশ জুড়ে নির্বাচনী প্রক্রিয়া চলাকালীন এই ধরনের হামলা চালালে বেশি প্রচারও পাওয়া যাবে। রাজ্য গোয়েন্দা শাখার (ইনটেলিজেন্স ব্রাঞ্চ) এক অফিসারের কথায়, “ইকবাল সিদ্দিকি ও তরুণ থাপার কাছ থেকেই জানা গিয়েছে, লোকসভা ভোটের সময়ে ব্যবসায়ীদের অপহরণের ছক কষেছে কেএলও।”

শনিবার রাতে মালখান সিংহ ধরা পড়ে যাওয়ার পরেও নির্বাচন কমিশন সাবধান করে দিয়েছে, উত্তরবঙ্গে ভোটের সময়ে বড় বিপদ হতে পারে কেএলও এবং সে জন্য নিরাপত্তার যাবতীয় বন্দোবস্ত করা হচ্ছে।

আইবি-র ওই কর্তার বক্তব্য, জলপাইগুড়ির বজরাপাড়ায় কেএলও যে ভাবে টাইমার দিয়ে বিস্ফোরণ করিয়েছিল, একই ভাবে অন্য জায়গাতেও তারা বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। তাতে যেমন নিজেদের শক্তি জাহির করা যাবে, তেমনই কেএলও সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মনে ভীতি আরও জাঁকিয়ে বসবে। আতঙ্কিত হয়ে পড়লে অনেকেই নিঃশব্দে তোলার টাকা দিয়ে দেবেন কেএলও-র লিঙ্কম্যানদের হাতে। কিন্তু তাতেও এক লপ্তে কোটি টাকা আদায় করা কঠিন বুঝেই কেএলও নেতৃত্ব ব্যবসায়ীদের অপহরণ করার ছক কষেছে বলে গোয়েন্দাদের দাবি। তাঁদের বক্তব্য, কেএলও এখন অর্থসঙ্কটে ভুগছে। বরাত দিয়েও পড়শি দেশের একটি জঙ্গি সংগঠনের কাছ থেকে তারা অস্ত্র এবং গোলাবারুদ হাতে পাচ্ছে না। শুধু তা-ই নয়, টাকা ফুরিয়ে যাওয়াতেই কেএলও নেতা মালখান সিংহ গত ৩০ মার্চ নেপাল থেকে বেরিয়ে কাটিহার হয়ে মালদহে ঢুকেছিল বলেও জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা।

গোয়েন্দারা জেনেছেন, অপহরণ করার পর ব্যবসায়ীদের লুকিয়ে রাখার জন্য বৈকুণ্ঠপুর ও গরুমারার জঙ্গল এলাকায় কয়েকটি আস্তানাও তৈরি করেছে কেএলও। একই রকম গোপন আস্তানা তৈরি হয়েছে গয়েরকাটার কাছে খুঁটিমারির জঙ্গলেও। গত বছর ডিসেম্বরে স্বয়ং টম অধিকারী এই ব্যাপারে তদারকি করে গিয়েছিল বলে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন।

কিন্তু উত্তরবঙ্গের ভূমিপুত্র, এমন পাঁচ জন প্রথম সারির নেতা ধরা পড়ার পরেও কেএলও-র কোন নেতা অপহরণের ছক কার্যকর করবে?

রাজ্য পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন, কেএলও-র কমান্ডার-ইন-চিফ নিত্যানন্দ সরকার ওরফে জামাই, সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক লাল সিংহ ডেকা এবং অ্যাকশন স্কোয়াডের প্রধান রাহুল ওরফে পবন অসমের বাসিন্দা হলেও আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহারে তাদের নিয়মিত যাতায়াত ও ডেরা রয়েছে। ওই তিন জনই বড়সড় ঘটনা ঘটানোর ক্ষমতা রাখে। ওই অফিসার জানান, এ বছরের গোড়ায় এক প্রতিবেশী দেশে কেএলও-র ত্রয়োদশ ব্যাচের প্রায় দেড়শো জন জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিতে গিয়েছে। তাদের মধ্যে ২৫-৩০ জনই উত্তরবঙ্গের। তাদেরই একাংশকে নির্বাচনের মুখে হামলা ঘটানোর কাজে লাগানো হবে বলে পুলিশের আশঙ্কা।

অন্য বিষয়গুলি:

klo abduct surbek biswas
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE