কলকাতা জেলা বামফ্রন্টের সমাবেশে সূর্যকান্ত মিশ্র। ছবি: সুদীপ আচার্য।
একের পর এক ঘটনায় চাপে পড়ে মুখ্যমন্ত্রী যখন দিশাহারা, সেই সময় সারদা-কাণ্ডে সিবিআই তদন্তকে হাতিয়ার করেই তাঁর উপরে আরও চাপ বাড়াল বামেরা। হঠাৎ বিধানসভা ভেঙে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যাতে ‘পালাতে’ না পারেন, তার জন্য আগাম সরব হলেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত
মিশ্র। তামিলনাড়ুর জয়ললিতার মতো এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও জেলে গেলে কে সরকার চালাবেন, সেই বিকল্প মুখ্যমন্ত্রীর নাম ঠিক করে রাখার জন্যও মমতাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন বিরোধী দলনেতা!
সারদা-কাণ্ডে তাঁর অপরাধ প্রমাণিত হলে পদত্যাগ করবেন বলে সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কলকাতা পুরসভার সামনে বৃহস্পতিবার কলকাতা জেলা বামফ্রন্টের সমাবেশ থেকে সূর্যবাবু বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চান না। তাঁরা চান, সারদা কেলেঙ্কারির যথাযথ তদন্ত হয়ে মুখ্যমন্ত্রীও হাজতে যান। কেন সিবিআইয়ের কাছে এখনও মুখ্যমন্ত্রীর ডাক পড়ছে না, কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে সেই জবাবদিহিও চেয়েছেন সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য সূর্যবাবু। কলকাতা শহরে সাংগঠনিক ভাবে প্রায় মিইয়ে পড়া বামফ্রন্টের এই সমাবেশে ভিড় হয়েছিল ভালই।
সূর্যবাবু এ দিন বলেন, “কানাঘুষো শুনতে পাচ্ছি, বিধানসভার আবার অধিবেশন ডাকা হতে পারে। হঠাৎ মুখ্যমন্ত্রী বলতে পারেন, পদত্যাগ করছি। বিধানসভা ভেঙে দেওয়া হোক! কিছুই বিশ্বাস করা যায় না!” পদত্যাগ নয়, বরং তাঁরা যে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বহু প্রশ্নের জবাব চাইছেন, তা উল্লেখ করেই সূর্যবাবু বলেছেন, “উত্তর আমাদের না দিতে পারলে সিবিআইকে দেবেন। আগে বলতেন, এ চোর? সে চোর? এখন আবার বলছেন, আমরা সবাই চোর!” সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করতে চেয়েই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছেও জবাবদিহি চেয়েছেন বিরোধী দলনেতা। বলেছেন, “নবান্ন থেকে রাস্তা, এখনও কেন ঘুরে বেড়াচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী? কেন তাঁকে হাজতে নেওয়া হবে না? তা হলে সরকার পড়ে যাবে, এমন তো নয়!”
এই সূত্রেই দক্ষিণের ‘আম্মা’র উদাহরণ টেনেছেন সূর্যবাবু। দুর্নীতির মামলায় জয়ললিতা অপরাধী সাব্যস্ত হওয়ায় তাঁকে মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছাড়তে হয়েছে। জয়ললিতার বিশ্বস্ত নেতা ও পন্নিরসেলভমকে মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসিয়ে এডিএমকে-রই সরকার চলছে সে রাজ্যে। যে প্রসঙ্গ ধরে এ দিন সূর্যবাবুর মন্তব্য, “আমরা দেখতে চাই, আপনি হাজতে যাওয়ার পরে কে মুখ্যমন্ত্রী হবেন! দেখি, তিনি পাঁচ বছর পর্যন্ত চালাতে পারেন কি না! আপনি তো বলেন, হাজার হাজার লোক আপনার সঙ্গে আছে। তবে একটা নাম ঠিক করে দিন, যিনি মুখ্যমন্ত্রী হবেন!” বিকল্প নামের কথা বলে সূর্যবাবু কৌশলে তৃণমূলের অন্দরে অস্বস্তিই আরও উস্কে দিতে চেয়েছেন।
তৃণমূলের তরফে আনুষ্ঠানিক ভাবে এ দিন কেউ এই আক্রমণের জবাব দেননি। তবে শাসক দলের এক রাজ্য নেতার মন্তব্য, “অলীক সব কথাবার্তা! বিধানসভা ভেঙে দেওয়ার কোনও পরিকল্পনা কোথাও হয়নি। বিরোধীরা এখন নানা রকমের স্বপ্ন দেখছেন! তাঁরা দেখতেই পারেন।” পাশাপাশিই তৃণমূলের এক তরুণ নেতার সহাস্য টিপ্পনি, “বিরোধী দলনেতা আগাম বলে দিলেন মানে ওই পথে আর মুখ্যমন্ত্রী যাবেন না!”
সিপিআইয়ের প্রবীর দেব, ফরওয়ার্ড ব্লকের জীবন সাহা, আরএসপি-র সুশীল শর্মার মতো নেতারা কলকাতা পুরসভার দুর্নীতি এবং পরিষেবায় ব্যর্থতা নিয়ে সরব হয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ এক চলচ্চিত্র প্রযোজককে যে ভাবে একটি শপিং মলের চুক্তিতে ছাড় পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে, তার প্রবল প্রতিবাদ করেছেন। পুরসভার বিরোধী দলনেত্রী রূপা বাগচি বলেছেন, “আজ থেকে চার বছর আগেই মেয়রকে জলে ফেলে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এ বার পুরভোটে মেয়রকে নবান্নের পাশে গঙ্গার জলে ফেলার ব্যবস্থা করুন আপনারা!” তৃণমূলের পাশাপাশি বিজেপি-কেও এক হাত নিয়েছেন সূর্যবাবু।
সারদা এবং খাগড়াগড় নিয়ে ১৩টি করে প্রশ্ন তুলে একই সঙ্গে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের জবাব চেয়েছেন। বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ শহরে সভা করতে এসে যাতে এ সব প্রশ্নের জবাব দেন, সেই দাবিও তুলেছেন।
আর এরই সঙ্গে পুরভোটের আগে শহরে বামেদের হতশ্রী সংগঠনকে চাঙ্গা করতে এ দিন সূর্যবাবুর পরামর্শ, “নবান্ন থেকে তৃণমূলকে উৎখাত করতে হলে এখন থেকে প্রতিটা ওয়ার্ডে লড়াই করতে হবে। এখন যদি দাঁড়াতে না পারেন, সময় এবং ইতিহাস কারও জন্য অপেক্ষা করে থাকবে না! কোনও ওয়ার্ডে, কোনও জায়গায় ভয় পাবেন না!” প্রয়োজন হলেই রাজ্য নেতৃত্ব তাঁদের পাশে দাঁড়াবেন বলেও কলকাতা ফ্রন্টকে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy