Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

ঘূর্ণাবর্ত ঘাঁটি গাড়তেই উধাও শীতের আমেজ

কালীপুজোর আগেই নেপালি হাওয়ায় শীত-শীত ভাব এসেছিল মহানগরে। ভাইফোঁটা পেরোতেই উধাও হল তা। কারণ, বাংলাদেশি ঘূর্ণাবর্ত। আর ওই ঘূর্ণাবর্তটির জন্যই রবিবার সকাল থেকে আকাশ ঢেকে গিয়েছে মেঘে। কোথাও কোথাও ঝিরঝিরে বৃষ্টিও মিলেছে! এর জেরে বেড়ে গিয়েছে আর্দ্রতা। শীত-শীত ভাবটা তাই উধাও হয়েছে পুরোপুরি। অনেকেই অপেক্ষা করছেন বৃষ্টির। কারণ বৃষ্টি হলে ফের শীত-শীত ভাবটা ফিরে আসবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৫২
Share: Save:

কালীপুজোর আগেই নেপালি হাওয়ায় শীত-শীত ভাব এসেছিল মহানগরে। ভাইফোঁটা পেরোতেই উধাও হল তা। কারণ, বাংলাদেশি ঘূর্ণাবর্ত।

আর ওই ঘূর্ণাবর্তটির জন্যই রবিবার সকাল থেকে আকাশ ঢেকে গিয়েছে মেঘে। কোথাও কোথাও ঝিরঝিরে বৃষ্টিও মিলেছে! এর জেরে বেড়ে গিয়েছে আর্দ্রতা। শীত-শীত ভাবটা তাই উধাও হয়েছে পুরোপুরি। অনেকেই অপেক্ষা করছেন বৃষ্টির। কারণ বৃষ্টি হলে ফের শীত-শীত ভাবটা ফিরে আসবে। তবে আলিপুর আবহাওয়া দফতর তেমন বৃষ্টির পূর্বাভাস কিন্তু দিচ্ছে না। তারা জানিয়েছে, আকাশে মেঘ থাকলেও বৃষ্টি হওয়ার তেমন সম্ভাবনা নেই।

আকাশে মেঘের পরিমাণ অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় রবিবার সারা দিন সূর্যের দেখা মেলেনি। ফলে দিনের তাপমাত্রাও তেমন বাড়তে পারেনি। কিন্তু সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বেড়েছে। গত সপ্তাহের শেষের কয়েক দিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রিতে নেমেছিল। আর্দ্রতার জন্য রবিবার তা বেড়ে হয়েছে ২৩.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা এ সময়ের স্বাভাবিক। আগামী কয়েক দিন কলকাতার আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকবে বলে জানাচ্ছেন আবহবিদেরা। আলিপুর হাওয়া অফিসের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলছেন, “এই ঘূর্ণাবর্তের কারণে দিন দুয়েক আকাশ মেঘলা থাকবে। তার জেরে রাতের তাপমাত্রার পতন থমকে যাবে।”

আবহবিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা, বর্ষা বিদায় নিতেই আকাশ পরিষ্কার হয়ে যায়। তার জেরে রাতে ভূপৃষ্ঠ থেকে অনেক বেশি তাপ বিকিরিত হতে পারে। সেই বেশি তাপ বিকিরণের ফলেই রাতের তাপমাত্রা দ্রুত হারে কমতে থাকে। শীত পড়ার ক্ষেত্রে এই তাপ বিকিরণ প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন। বাংলাদেশের এই ঘূর্ণাবর্তের কারণে সেই প্রক্রিয়ায় বাধা পড়বে। কলকাতা ও সংলগ্ন দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে রাতের তাপমাত্রা কিছুটা বাধা পাবে। আবহাওয়া দফতরের এক শীর্ষকর্তা বলছেন, “আকাশে মেঘ থাকলে দিনের তাপমাত্রাও বাড়বে না। ফলে দিন-রাতের তাপমাত্রার ফারাকও বেশি হবে না। শীত পড়ার ক্ষেত্রে দিন ও রাতের তাপমাত্রার ফারাকটাও জরুরি।”—মন্তব্য ওই আবহবিজ্ঞানীর।

এই মেঘলা আবহাওয়ায় কিন্তু রোগজীবাণুদের সক্রিয়তা বাড়বে বলে মনে করছেন পরজীবী বিশেষজ্ঞেরা। পরিবেশের এই পরিবর্তনে মশার বংশবিস্তারও বাড়বে। মহানগর ও সংলগ্ন এলাকায় ডেঙ্গি ক্রমশ থাবা বসাচ্ছে। এই আবহাওয়ায় মশার সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে রোগজীবাণুদেরও বংশবিস্তার হওয়ার কথা। তাই এই সময়ে সাবধানে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। ভাল ভাবে ঠান্ডা না পড়া পর্যন্ত সংক্রামক রোগ থেকে মুক্তির সম্ভবনা কম বলেও ধারণা পরজীবী বিশেষজ্ঞদের।

কালীপুজোর আগেই ঠান্ডা হাওয়া আর তাপমাত্রার পতন দেখে অনেকেই বলেছিলেন, এ বার কি শীত আগেভাগেই এসে গেল? কেউ কেউ তো আলমারি-তোরঙ্গ থেকে হাল্কা শীতের জামাকাপড়ও নামানোর তোড়জোড় করছিলেন। এ দিন আবহাওয়ার বদল দেখে সেই পরিকল্পনা আপাতত স্থগিত রেখেছেন তাঁরা। আবহবিদেরা অবশ্য বলছেন, দিন কয়েক আগেই সেই শীত-শীত ভাবটা নেহাতই আকস্মিক। পুজো পেরোতেই বঙ্গোপসাগর থেকে অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলে আছড়ে পড়েছিল ঘূর্ণিঝড় হুদহুদ। তার জেরেই নেপালের পাহাড়ে তুষারপাত শুরু হয়েছিল। সেখান থেকে বয়ে আসা ঠান্ডা হাওয়ার জেরেই শীত-শীত ভাব মালুম হচ্ছিল। কিন্তু নেপালের পরিমণ্ডলে হুদহুদের প্রভাব কাটতেই সেই ঠান্ডা হাওয়া আসা কমে গিয়েছে। ফলে হিমেল হাওয়াও বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

চলতি মাসের মাঝামাঝি দক্ষিণবঙ্গ থেকে বিদায় নিয়েছে বর্ষা। এমন অবস্থায় শীতপ্রত্যাশী বাঙালির প্রশ্ন, কবে থেকে দক্ষিণবঙ্গে ইনিংস শুরু করবে শীত?

আলিপুর আবহাওয়া দফতরের বিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা, এখনও শীত আসার সময় হয়নি। মাসখানেক তাপমাত্রার এমন ওঠানামা চলতে থাকবে। কখনও কখনও রাতের তাপমাত্রা এক ধাক্কায় অনেকটা নেমে যাবে। আবার কখনও কিছুটা উপরে উঠবে। তাপমাত্রার এই ওঠানামার মধ্য দিয়েই ধীরে ধীরে দক্ষিণবঙ্গে জাঁকিয়ে বসবে শীত। সেই পরিস্থিতি আসতে আসতে ডিসেম্বর গড়িয়ে যেতে পারে বলেই আবহবিজ্ঞানীদের পূর্বাভাস।

অন্য বিষয়গুলি:

winter cold temperature whirlpool india
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE