Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

কালো পতাকা নিয়ে দিনভর অপেক্ষাই সার

খবরটা পৌঁছে গিয়েছিল বিজেপি-র রাজ্য প্রতিনিধিদলের কানে। পাশাপাশি পুলিশও বারণ করেছিল যেতে। দুয়ে-দুয়ে চার করে সোমবার আর পাড়ুইয়ের সিরশিট্টা গ্রামের দিকেই গেলেন না বিজেপি নেতারা। এবং পুলিশ যে দলের নেতাদের সিরশিট্টা যেতে নিষেধ করে ঠিকই করেছে, তা আড়ালে মেনে নিচ্ছেন বীরভূমের একাধিক বিজেপি নেতা। রবিবার সকালে ওই গ্রামেই সশস্ত্র দুষ্কৃতী বাহিনী নিয়ে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছিল বিজেপি-র বিরুদ্ধে।

বিজেপি প্রতিনিধি দলের অপেক্ষায় সিরশিট্টার মহিলারা। সোমবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

বিজেপি প্রতিনিধি দলের অপেক্ষায় সিরশিট্টার মহিলারা। সোমবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

দয়াল সেনগুপ্ত
পাড়ুই শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:৩০
Share: Save:

খবরটা পৌঁছে গিয়েছিল বিজেপি-র রাজ্য প্রতিনিধিদলের কানে। পাশাপাশি পুলিশও বারণ করেছিল যেতে।

দুয়ে-দুয়ে চার করে সোমবার আর পাড়ুইয়ের সিরশিট্টা গ্রামের দিকেই গেলেন না বিজেপি নেতারা। এবং পুলিশ যে দলের নেতাদের সিরশিট্টা যেতে নিষেধ করে ঠিকই করেছে, তা আড়ালে মেনে নিচ্ছেন বীরভূমের একাধিক বিজেপি নেতা। রবিবার সকালে ওই গ্রামেই সশস্ত্র দুষ্কৃতী বাহিনী নিয়ে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছিল বিজেপি-র বিরুদ্ধে। জেলার এক বিজেপি নেতার কথায়, “ওই হামলার পরেই সিরশিট্টায় রাতারাতি তৃণমূল প্রভাব বিস্তার করেছে। এ দিন আমাদের রাজ্য নেতারা সেখানে গেলে তাঁদের অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সামনে পড়তে হতে পারত। তাই ওখানে না গিয়ে ঠিকই করেছেন।”

খুব ভুল বলেননি ওই বিজেপি নেতা। কারণ, রবিবার সকালেও সিরশিট্টা গ্রামের যে চেহারা দেখা গিয়েছিল, সোমবার তার থেকে অনেকটাই আলাদা গ্রামের ছবি। স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই গ্রামের তিনশো ঘরের মধ্যে অন্তত ১০০ পরিবার প্রকাশ্য বিজেপি করতে শুরু করছিল বেশ কিছুদিন হল। তার জেরে গ্রামে তৃণমূলের কর্তৃত্ব কমে আসছিল। রবিবার সকালে বিজেপি-র ‘হামলা’-র পর ২৪ ঘণ্টা পর থেকেই তার ফায়দা তুলে নিয়েছে তৃণমূল। এ দিন গ্রামে বিজেপি নেতারা এলে তাঁদের কালো পতাকা দেখাবেন বলে তৈরিও হয়েছিলেন গ্রামের মহিলাদের একাংশ। সেই দলে এমন অনেক মহিলাকে দেখা গেল, যাঁরা রবিবার পর্যন্ত ও দু’পক্ষের সংঘর্ষের পরে প্রকাশ্যেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে কথা বলছিলেন। এ দিন তাঁদের অনেককেও গ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠার যুক্তি দেখিয়ে হাতে কালো পতাকা নিয়ে গ্রামের পিচ রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল তৃণমূল সমর্থক মহিলাদের পাশেই!

যদিও সেটা কতটা স্বেচ্ছায়, আর কতটা শাসকদলের ‘চাপে’, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই। স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, গ্রামের বিজেপি কর্মী-সমর্থক বহু পুরুষই রবিবারের সংঘর্ষের পর থেকে গ্রামছাড়া। যাঁরা আছেন, তাঁরা তৃণমূলের কাছে কার্যত ‘বশ্যতা’ স্বীকার করেছেন। এলাকার বিজেপি নেতাদের অভিযোগ, তৃণমূল জোর করে বিজেপি সমর্থক মহিলাদের হাতে কালো পতাকা ধরিয়েছে। পুরুষদেরও ভয় দেখিয়ে আত্মসমর্পণ করে গ্রামে থাকতে দিয়েছে। যদিও সিরশিট্টারই বাসিন্দা, স্থানীয় বনশঙ্কা পঞ্চায়েতের তৃণমূল উপপ্রধান নারায়ণ পালের দাবি, “যাঁরা ভুল করে বিজেপির দিকে ঝুঁকেছিলেন, তাঁদের প্রায় সকলেই তৃণমূলে ফিরে এসেছেন। তাঁরা সকলেই গ্রামে শান্তি চান।” শেষ অবধি অবশ্য বিজেপি-র প্রতিনিধিদল না আসায় কালো পতাকা আর দেখানো যায়নি। এ দিন কালো পতাকা হাতে দাঁড়িয়ে থাকা কিছু মহিলা (এঁরা রবিবারও তৃণমূলের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন) বললেন, “এলাকায় অশান্তি করে টিকে থাকা যাবে না। আমরা আর হিংসা চাই না।”

অন্য দিকে, গত বুধবার পাড়ুইয়ের ইমাদপুর গ্রামে এবং রবিবার সিরশিট্টায় বিজেপি-তৃণমূল সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ যথাক্রমে সাত জন ও ৪ জনএই মোট ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতদের সোমবার সিউড়ি আদালতে তোলে পুলিশ। মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট ইন্দ্রনীল চট্টোপাধ্যায় ইমাদপুর-কাণ্ডে ধৃত সাত জনকে ২৮ তারিখ পর্যন্ত জেল হেফাজত এবং বাকি চার জনকে ৫ দিনের পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। জেলার পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া জানিয়েছেন, আরও ১২ জনকে আটক করা হয়েছে। কিছু বোমা উদ্ধার হয়েছে। পুলিশ তল্লাশি চলবে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE