Advertisement
০৮ নভেম্বর ২০২৪

দুর্ঘটনায় থামল তরুণ স্ট্রাইকারের জীবনের দৌড়

দারুণ লড়েও জিততে পারেনি দল। তবু তাঁর খেলা মন কেড়েছিল দর্শকদের। মিলেছিল ‘ম্যান অফ দ্য ম্যাচে’র পুরস্কারও। সেই খেলা শেষের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে জীবনের খেলায় হেরে গেলেন আব্দুল সাজ্জাদ (২১)।

আব্দুল সাজ্জাদ

আব্দুল সাজ্জাদ

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৬ ০৩:৪৭
Share: Save:

দারুণ লড়েও জিততে পারেনি দল। তবু তাঁর খেলা মন কেড়েছিল দর্শকদের। মিলেছিল ‘ম্যান অফ দ্য ম্যাচে’র পুরস্কারও। সেই খেলা শেষের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে জীবনের খেলায় হেরে গেলেন আব্দুল সাজ্জাদ (২১)। পথ দুর্ঘটনা কেড়ে নিল তরুণ ওই ফুটবলারের প্রাণ।

রবিবার বিকেলে তমলুক শহরের রাখাল মেমোরিয়াল ময়দানে ‘তাম্রলিপ্ত কাপ ফুটবল’ প্রতিযোগিতায় স্থানীয় একটি ক্লাবের হয়ে খেলতে এসেছিলেন পিয়ারলেসের ‘স্ট্রাইকার’ সাজ্জাদ। রাত হয়ে যাওয়ায় টিটাগড়ের বাড়িতে আর ফেরেননি। থেকে গিয়েছিলেন তমলুকেই। গভীর রাতে হলদিয়া-মেচেদা ৪১ নম্বর জাতীয় সড়কে মোটরবাইক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় সাজ্জাদের। জখম হন তাঁর সতীর্থ ফুটবলার স্বরূপ বিশ্বাসও। স্বরূপের বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফলতায়।

রবিবার ‘তাম্রলিপ্ত কাপে’র ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল কলকাতা পুলিশ এসি ও স্থানীয় প্যারিস স্পোর্টিং ক্লাব। স্থানীয় ক্লাবের হয়েই মাঠে নামেন সাজ্জাদ ও স্বরূপ। কলকাতা পুলিশ এসি ১-০ গোলে জিতে যায়। খেলা শেষে প্যারিস ক্লাবের এক সদস্যকে নিয়ে সাজ্জাদ ও স্বরূপ হলদিয়া গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ৪১ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে ফেরার পথে রাত ১২টা নাগাদ নন্দকুমার থানার শ্রীধরপুর হাইরোডের কাছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডিভাইডারে ধাক্কা মেরে উল্টে যায় সাজ্জাদদের মোটরবাইক। সাজ্জাদই বাইক চালাচ্ছিলেন। হেলমেট না থাকায় মাথায় আঘাত লাগে তাঁর, হাত ভেঙে যায় পিছনে থাকা স্বরূপের। মোটরবাইক আরোহী তৃতীয় যুবকের আঘাত অবশ্য গুরুতর নয়। পরে প্যারিস ক্লাবের সদস্যরা গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসে। পথেই সাজ্জাদের মৃত্যু হয়। স্বরূপকে কলকাতার হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তের পর নন্দকুমার থানার পুলিশ জানিয়েছে, ফাঁকা রাস্তায় প্রচণ্ড গতিতে মোটরবাইক চালানোর ফলেই এই দুর্ঘটনা।

সোমবার তমলুকে আসেন সাজ্জাদের দাদা আব্দুল আজিজ। তিনি জানান, ছোট থেকেই ফুটবল ছিল সাজ্জাদের প্রাণ। মাধ্যমিকের পর ‘সাই’-এর ফুটবল অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণের সুযোগ পান তিনি। তারপরই পিয়ারলেস ক্লাবে খেলার সুযোগ। পাশাপাশি বিভিন্ন জেলাতেও খেলতে যেতেন। যেমন এসেছিলেন তমলুকে। আজিজ বলেন, ‘‘রবিবার বিকেলে খেলা শেষে ফোন করে ভাই বাবাকে জানিয়েছিল, রাতে বাড়ি ফিরবে না। আর কোনও দিনই যে ফিরবে না, ভাবতে পারিনি।’’

উত্তর ২৪ পরগনার টিটাগড়ের বড়কাঁঠালিয়ায় সাজ্জাদের পাড়ায় এ দিন শোকের ছায়া। প্রত্যন্ত এই গ্রামে দরিদ্র পরিবারের ছেলে সাজ্জাদকে নিয়ে পাড়া-প্রতিবেশীরাও গর্ব করতেন, স্বপ্ন দেখতেন। সাজ্জাদের বাবা মহম্মদ খালেকের আক্ষেপ, ‘‘রোজই তো খেলতে যায়। কোত্থেকে যে কী হয়ে গেল, জানি না।’’

গোটা ঘটনায় স্তম্ভিত ‘তাম্রলিপ্ত কাপে’র উদ্যোক্তা তমলুকের খেলাঘর ক্লাবের কর্তারা। সম্পাদক গোপাল সামন্ত বলেন, ‘‘রবিবার সাজ্জাদের খেলা দেখে দর্শকরা মুগ্ধ হয়েছিলেন। একজন প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের এ ভাবে চলে যাওয়া মানতে পারছি না।’’ পিয়ারলেস ক্লাবের ফুটবল সচিব অশোক দাশগুপ্তও বলছেন, ‘‘অসম্ভব প্রতিভাবান একটি ছেলে চলে গেল।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Football player dies accident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE