Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Sandeshkhali Incident

অনুদানের টাকা দিয়ে কি সম্মান কেনা যায়? প্রশ্ন সন্দেশখালির মেয়েদের

শাহজাহানকে কেন ধরা হচ্ছে না— এই প্রশ্নে ক্ষোভের আঁচ পেয়েছেন দুই মন্ত্রীও। কর্ণখালি ও কাছাড়িপাড়ায় তাঁদের ঘিরে এই দাবি ওঠে। সেখানে ইডির করা মামলার দোহাই দিয়ে প্রশ্ন এড়িয়ে যান।

sandeshkhali

সন্দেশখালিতে মহিলাদের প্রতিবাদ। — ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সন্দেশখালি শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৫:৪৩
Share: Save:

কখনও পুলিশকর্তা, কখনও মন্ত্রী-নেতা— সন্দেশখালিতে ছড়িয়ে থাকা বিক্ষোভ সামলাতে গ্রামে গ্রামে গিয়ে কথা বলছেন তাঁরা। শনিবারও গিয়েছিলেন দুই মন্ত্রী, সুজিত বসু এবং পার্থ ভৌমিক। সঙ্গে ছিলেন এলাকার বিধায়ক সুকুমার মাহাতো। কিন্ত ক্ষোভ কি আদৌ কমছে? শনিবারই মাঝের পাড়া থেকে হালদার পাড়া ঘুরে তার আঁচ ভাল ভাবেই পাওয়া গেল। কয়েক জায়গায় টিভি ক্যামেরার সামনে এসে মেয়েরা প্রশ্ন তুললেন, অনুদানের পাঁচশো-হাজার টাকা দিয়ে কি তাঁদের মান-সম্মান, তাঁদের স্বামীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ‘খেলার অধিকার’ পেয়ে যায় সরকার? এই প্রশ্ন তাঁরা করেন পুলিশের সামনেই। এ-ও দাবি করেন, হাতে ক্ষমতা দিলে এত দিনে শেখ শাহজাহানকে ধরে দিতেন। পুলিশকে তাঁদের সামনে অসহায় দেখায়।

শাহজাহানকে কেন ধরা হচ্ছে না— এই প্রশ্নে ক্ষোভের আঁচ পেয়েছেন দুই মন্ত্রীও। কর্ণখালি ও কাছাড়িপাড়ায় তাঁদের ঘিরে এই দাবি ওঠে। সেখানে ইডির করা মামলার দোহাই দিয়ে প্রশ্ন এড়িয়ে যান।

এমন পরিস্থিতিতে ক্ষোভের ‘ভূত’ ছাড়াতে ফের সেই ‘ভূতে পাওয়া সর্ষে’ ব্যবহারের অভিযোগই উঠেছে তৃণমূল নেতৃত্বের বিরুদ্ধে। প্রসঙ্গ, শাহজাহানের ভাই শেখ সিরাজউদ্দিনকে সরিয়ে বেড়মুজর ১ অঞ্চলের তৃণমূলের সভাপতির দায়িত্ব অজিত মাইতিকে দেওয়া। শুক্রবার সিরাজউদ্দিনকে গ্রামবাসীদের আক্রমণের সামনে পড়ে পালাতে হয়। তার পর শনিবার তৃণমূল থেকে জানানো হয়, দলে সিরাজউদ্দিনের দায়িত্ব এখন অজিতের হাতে রয়েছে। এ দিকে, শুক্রবার অজিতকেও গ্রামবাসীদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে।

এলাকার অনেক মানুষ জানিয়েছেন, শেখ শাহজাহানের বৃত্তেরই এক জন অজিত। সিরাজউদ্দিনের সঙ্গে মিলে যাবতীয় কুকর্মের অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধেও। গ্রামবাসীরা জানাচ্ছেন, অজিতের নেতৃত্বেই গত বিধানসভা ভোটের পরে বিরোধী দল করার অপরাধে বেড়মজুর ১ পঞ্চায়েত এলাকার কাছারি পাড়ায় তরুণ সরকার, নীলেশ সর্দার, সুজিত সর্দার-সহ অনেকের বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। ওই পাড়ার বাসিন্দা সৈকত আড়ি প্রায় দু’বছর বাড়ি ফিরতে পারেননি। এলাকার বাসিন্দা সমীর দাস, ভোলানাথ সর্দারদের দোকান ছিল কাটপোল বাজার এলাকায়। অজিতের নেতৃত্বেই তাঁদের দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। অজিতের বিরুদ্ধে তোলাবাজি এবং একশো দিনের কাজ ও আবাস যোজনার টাকা থেকে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। অভিযোগ, শুক্রবার দুপুরে অজিতকে মারধর করেন গ্রামবাসীরা, তাঁর মোটরবাইক ভাঙা হয়, মাছের ভেড়ির আলা ঘরে আগুন লাগানো হয়।

স্থানীয়দের প্রশ্ন, সিরাজউদ্দিনকে সরিয়ে সেই অজিতকেই কী ভাবে বেড়মজুর ১ অঞ্চল সভাপতির দায়িত্ব দিল তৃণমূল? এ ব্যাপারে জেলার নেতা তথা রাজ্যের সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক বলেন, ‘‘অনেক আগেই তো অঞ্চল সভাপতির বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল অজিতকে।’’ নতুন করে সভাপতি করা হয়নি বলেই দাবি করেন তিনি।

এ দিনই বেড়মজুর ১ অঞ্চলের হালদারপাড়ায় বিনয় সর্দার নামে তৃণমূলের স্থানীয় এক নেতার পরিবারের সদস্যদের উপরে চড়াও হন এলাকার লোকজন। গ্রামবাসীদের দাবি, সিরাজউদ্দিন গ্রামের মানুষের জমি দখল করে নিত। সেই জমি পৌঁছত বিনয় সর্দারের হাতে। মাঝেরপাড়া এলাকায় গ্রামের মহিলারা শাহজাহানকে গ্রেফতারের দাবিতে ঝাঁটা-লাঠি নিয়ে বিক্ষোভ দেখান পুলিশের সামনে।

এরই মধ্যে বেড়মজুর গ্রামের বাসিন্দা মৌসুমি হালদার নামে এক জমিহারা মহিলা অভিযোগ জানিয়েছেন প্রশাসনের কাছে। মৌসুমির অভিযোগ, সিরাজউদ্দিনের বাহিনী মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে এক বিঘা কৃষিজমি লিখিয়ে নিয়েছে তাঁর কাছ থেকে। থানায় গেলে পুলিশ বিচারের জন্য সিরাজের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল।

স্থানীয়দের অভিযোগ শোনার জন্য সন্দেশখালির কয়েকটি এলাকায় অস্থায়ী শিবির চালু করেছে প্রশাসন। তবে সেখানে অভিযোগ করে কোনও ‘রিসিভড কপি’ পাননি বলে দাবি মৌসুমির। তিনি জানান, জমি ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন করলে ক্যাম্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসনিক আধিকারিক বলেন, ‘‘উপরওয়ালা ভরসা।’’ হালদার পরিবারের আত্মীয় প্রদীপ মণ্ডলও বলেন, ‘‘পুলিশ ক্যাম্প হওয়ায় আপাতত মার খাওয়ার ভয় হয়তো নেই। তবে জমি ফেরত পাওয়া যাবে না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Sandeshkhali Incident sandeshkhali TMC Protest Women
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy