শিশু পাচার ছাড়াও গাইঘাটার হাতুড়ে চিকিৎসক তপন বিশ্বাস যে এক মহিলার কিডনি কেটে নিয়েছিল, বৃহস্পতিবার সেই তথ্য পেয়েছিল সিআইডি। কিডনি কাটার জন্য তপন কতটা বেপরোয়া ছিল, শুক্রবার সেই তথ্যও পেলেন গোয়েন্দারা।
সিআইডি কর্তাদের দাবি, কিডনি কাটার আগে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে মহিলার ইউএসজি রিপোর্ট দেখায়নি সে। নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ গোয়েন্দাদের জানিয়েছেন, নিয়ম অনুযায়ী তাঁরা ওই রিপোর্ট জমা করতে বলেছিলেন। কিন্তু তার তোয়াক্কা করেনি তপন। সে মুচলেকা দিয়ে দেয়। সেই মুচলেকা গোয়েন্দাদের হাতে এসেছে। তাতে লেখা, অ্যাপেনডিক্স অপারেশনের সময় কল্পনা সরকার নামে ওই মহিলার কিডনিও সে কেটে নিয়েছে। মুচলেকায় আরও লেখা হয়, ‘এই সব কিছু অপারেশন আমি আমার নিজের দায়িত্বে করেছি’।
নার্সিংহোমটি হাবরার মগরা এলাকার গৌরাঙ্গ রোডে। তার মালিক আনসার মণ্ডল। ৬ জুলাই গাইঘাটার কিচনপাড়ার বাসিন্দা কল্পনা সরকারের অ্যাপেনডিক্স অস্ত্রোপচারের জন্য তপন তাঁকে ওই নার্সিংহোমে নিয়ে যায়। মহিলার ইউএসজি পরীক্ষার রিপোর্ট না-থাকায় আনসার প্রথমে অস্ত্রোপচারের অনুমতি দেননি। সেই কারণে তপন মুচলেকা দেয়। মুচলেকা অনুযায়ী অস্ত্রোপচার হয় ১৯ জুলাই।
আনসার বলেন, ‘‘তপন হাতুড়ে। ও কী ভাবে অস্ত্রোপচার করবে, সে কথা ভেবে এবং ইউএসজি রিপোর্ট না-থাকায় প্রথমে অনুমতি দিতে চাইনি। তপন জোর করে। ও প্রভাবশালী। তপন অনেক প্রসূতিকে নার্সিংহোমে নিয়ে আসত। ও অস্ত্রোপচারের পরে মুচলেকা দিতে রাজি হওয়ায় আর না করিনি।’’
শুক্রবার আনসার এ সব গোয়েন্দাদের জানান। গোলমালের আশঙ্কায় কল্পনাদেবীর অস্ত্রোপচারের পরে সমস্ত বর্জ্য (কাটা-ছেঁড়া দেহাংশ) ফর্মালিনে চুবিয়ে একটি জারে ভরে রাখেন আনসার। এ দিন সে সবও গোয়েন্দাদের দেখিয়েছেন তিনি। কল্পনাদেবীর স্বামী স্বপনবাবু জানিয়েছেন, অস্ত্রোপচার বাবদ তপন তাঁর কাছ থেকে ১৯ হাজার টাকা নিয়েছিল। কিন্তু কাজ মিটে গেলেও তপন তাঁকে কোনও টাকা দেননি বলে দাবি করেছেন আনসার। তিনি বলেন, ‘‘ও পরে মিটিয়ে দেবে বলেছিল। কিন্তু নানা ভাবে এড়িয়ে গিয়েছে।’’
সিআইডি-র এক কর্তা জানান, মুচলেকায় উল্লেখ করলেও জেরায় তপন কিডনি কাটার কথা মানেনি। ওই মহিলার সব রিপোর্ট খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বনগাঁ, গাইঘাটা, বাদুড়িয়া এবং হাবরায় বিভিন্ন নার্সিংহোমের সঙ্গে তপনের ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল বলে তদন্তে উঠে এসেছে। বাদুড়িয়ার সোহান নার্সিংহোম থেকে যে তিনটি শিশু মিলেছে, তার একটিকে নিজের সন্তান বলে দেগঙ্গার যে মহিলা দাবি করেছেন, তাঁকে জেরা করা হচ্ছে। জানার চেষ্টা হচ্ছে কী ভাবে তিনি অন্তঃসত্ত্বা হন। ব্যারাকপুরের এক দম্পতি মিলেছে, যাঁরা জুলাই মাসে মহাত্মা গাঁধী রোডের শ্রীকৃষ্ণ নার্সিংহোম থেকে শিশু দত্তক নিয়েছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy