Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Amphan

ক্ষতিপূরণ এক হাজার টাকা, ফেরত দিতে চান ফরিদা

আমপানে ঘর ভেঙেছিল হাওড়ার শ্যামপুরের খাড়ুবেড়িয়া পঞ্চায়েতের মামুদপুরের বাসিন্দা শেখ ফরিদা নামে ওই মহিলার।

অামপানে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির হাল এমনই। —নিজস্ব চিত্র

অামপানে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির হাল এমনই। —নিজস্ব চিত্র

সুব্রত জানা
শ্যামপুর শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২০ ০৬:০০
Share: Save:

পাওয়ার কথা ২০ হাজার টাকা। কিন্তু আমপানে গৃহহীন এক মহিলাকে ক্ষতিপূরণ বাবদ সরকার দিয়েছে এক হাজার টাকা!

আমপানে ঘর ভেঙেছিল হাওড়ার শ্যামপুরের খাড়ুবেড়িয়া পঞ্চায়েতের মামুদপুরের বাসিন্দা শেখ ফরিদা নামে ওই মহিলার। ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন করেছিলেন প্রশাসনের কাছে। প্রাথমিক পর্বে ক্ষতিপূরণ মেলেনি। পরে গত ১৬ জুলাই তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ক্ষতিপূরণের টাকা ঢোকে। ব্যাঙ্কে গিয়ে খাতা দেখার পরে অবাক ফরিদা। দেখেন, অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে মাত্র এক হাজার টাকা। প্রথমে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারেননি তিনি। ব্যাঙ্ককর্মীরা তাঁকে জানান, অবাক হওয়ার কিছু নেই। এক হাজার টাকাই জমা পড়েছে তাঁর অ্যাকাউন্টে।

ক্ষতিপূরণের টাকা নিতে চান না ফরিদা। সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেই টাকা তিনি ফিরিয়ে দেবেন প্রশাসনকে। তাঁর কথায়, ‘‘এক হাজার টাকায় ঘর মেরামত করা সম্ভব নয়। তাই ওই টাকা ফেরত দেব বলে বিডিও-র কাছে আবেদন করেছি।’’

অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে মামুদপুরে টালির ছাউনি দেওয়া মাটির ঘরে বাস করতেন ফরিদা। আমপান তাঁদের মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও উড়িয়ে নিয়ে যায়। ঘরের এক দিকের দেওয়াল পড়ে যায়। খড় এবং ত্রিপল দিয়ে ছাউনি করে কোনও রকমে ওই ভাঙা ঘরেই বাস করছেন ফরিদা। তাঁর কথায়, ‘‘ভেবেছিলাম ক্ষতিপূরণের টাকা পেলে ঘর মেরামত করব। কিন্তু এক হাজার টাকায় কী হবে। পাঁচটা বাঁশ কিনতেই শেষ হয়ে যাবে। বাকি টাকা কোথা থেকে পাব?’’

শেখ ফরিদার ব্যাঙ্কের পাসবই। —নিজস্ব চিত্র

ক্ষতিপূরণের অঙ্কের কথা জেনে বিস্ময় চেপে রাখতে পারেননি শ্যামপুর-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা ক্ষতিপূরণের আবেদন খতিয়ে দেখার জন্য তৈরি টাস্ক ফোর্সের সদস্য জুলফিকার আলি। তাঁর কথায়, ‘‘কী ভাবে ওই মহিলার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ক্ষতিপূরণ বাবদ এক হাজার টাকা ঢুকল, জানি না। যতদূর জানি, যাঁদের ঘর পুরো ভেঙে গিয়েছে, তাঁরা ২০ হাজার টাকা পাবেন। যাঁদের ঘরের আংশিক ক্ষতি হয়েছে, তাঁরা পাবেন ৫ হাজার টাকা করে। কিন্তু এক হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কথা কারও নয়। মনে হয় কোথাও একটা ভুল হচ্ছে। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।’’ বিষয়টি নিয়ে জানতে চাওয়ায় ‘‘ছুটিতে আছি’’ বলে ফোন কেটে দেন বিডিও (শ্যামপুর-২) সুব্রত ঘোষ।

এখন একশো ইটের দাম কমবেশি ১,১০০ টাকা। ঘরের ছাউনি তৈরির জন্য যে ধরনের বাঁশ প্রয়োজন, তার একটির দাম কমপক্ষে ২০০ টাকা। এক বস্তা বালি কিনতে গেলে খরচ হয় ৯০ টাকা। প্রতি বস্তা সিমেন্টের দাম এখন প্রায় ৪০০ টাকা। এক জন মিস্ত্রির দৈনিক মজুরি এখন সাড়ে চারশো টাকা।

এই হিসেব ধরলে, টালির ছাউনি দেওয়া একটি পাকা ঘর তৈরিতে খরচ হয় কমবেশি ৬০ হাজার টাকা। ফরিদা বলেন, ‘‘নতুন ঘর করতে অনেক টাকা খরচ। আমরা যে ঘরে থাকি তার সংস্কার করতেই খরচ হবে কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা। এক হাজার টাকা নিয়ে করব কী। ওটা সরকারের কাছেই থাকুক।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Amphan Shyampur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy